ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

মুশতাকের অধীনে লেগস্পিনে উন্নতি সম্ভব?

মো. মামুন রশীদ

প্রকাশিত: ২২:৩১, ১৭ এপ্রিল ২০২৪

মুশতাকের অধীনে লেগস্পিনে উন্নতি সম্ভব?

টাইগারদের পাক স্পিন কোচ মুশতাক আহমেদ

পাকিস্তানের বিশ্বকাপজয়ী লেগস্পিনার মুশতাক আহমেদ এখন বাংলাদেশ ক্রিকেটের একজন। আগামী টি২০ বিশ্বকাপ পর্যন্ত তার সঙ্গে চুক্তি করেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। এই সময়ে তিনি জাতীয় দলের সঙ্গে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের ব্যস্ততায় থাকবেন।
জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে আসন্ন টি২০ সিরিজের আগে মূলত জাতীয় দলের ক্যাম্প দিয়ে তার কাজ শুরু হবে। সেই ক্যাম্পে স্পিনারদের নিয়ে আলাদাভাবে কাজ করবেন কোচ হিসেবে দারুণ অভিজ্ঞ মুশতাক। সেখানে আপাতত রিশাদ হোসেন ব্যতীত বলার মতো উল্লেখযোগ্য কোনো লেগস্পিনার নেই বাংলাদেশের। তাই মুশতাকের অধীনে লেগস্পিনে সমৃদ্ধি লাভের সুযোগ একেবারেই কম এই স্বল্প সময়ে।

জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজ শেষেই বাংলাদেশ দল উড়াল দেবে যুক্তরাষ্ট্রে এবং স্বাগতিকদের বিপক্ষে টি২০ সিরিজ খেলেই আবার বিশ্বকাপ শুরু করবে। সেজন্য জাতীয় দলের বাইরে মুশতাকের কাজের পরিধি বাড়ানোর কোনো সুযোগই নেই। কিন্তু বিসিবির ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের চেয়ারম্যান জালাল ইউনুস জানিয়েছেন, লেগস্পিনারের সন্ধানে ট্যালেন্ট হান্ট করার পরিকল্পনা। সেটি করতে পারলে নিঃসন্দেহেই ভালো হতো, তবে আপাতত এই দুই মাসে যদি রিশাদের আরেকটু উন্নতি হয় সেটাই হবে বড় পাওয়া।
লেগস্পিনে বরাবরই বাংলাদেশের ক্রিকেটে রয়েছে ঘাটতি। উল্লেখ করার মতো লেগস্পিনার আসেনি বাংলাদেশ দলে। সেদিক থেকে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক যাত্রার শুরুতে ওয়াহিদুল গণি, পরবর্তীতে অলক কাপালি ও মোহাম্মদ আশরাফুল কিছুটা নজর কেড়েছেন। তবে অলক-আশরাফুল দু’জনই মূলত অলরাউন্ডার। জেনুইন লেগস্পিনার তারা ছিলেন না।

মূলত ব্যাটার হলেও লেগস্পিন করেছেন সাব্বির রহমান,  রাকিবুল হাসানরা- কিন্তু স্বাভাবিকভাবেই নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে পারেননি। পরে আশার আলো হয়ে আসেন জুবায়ের হোসেন লিখন। জেনুইন এই লেগস্পিনার ৬ টেস্ট, ৩ ওয়ানডে ও ১ টি২০ খেলেন বাংলাদেশের জার্সিতে। কিন্তু ভালো পরিচর্যার অভাব এবং ঘরোয়া ক্রিকেটে বিভিন্ন ক্লাব, দল ও ফ্র্যাঞ্চাইজির লেগস্পিনার খেলানোর অনীহাতে হারিয়ে গেছেন জুবায়ের। তাছাড়া নিজেরও গড়িমসি ছিল তাঁর।

তাই বিসিবি যথেষ্ট চেষ্টা করেও জুবায়ের মেধাকে শাণিত করে তা কাজে লাগাতে পারেননি। আজ তিনি পুরোপুরিই অন্তরালে। জুবায়ের হারিয়ে যাওয়ার পর ব্যাটিং অলরাউন্ডার হলেও ভালো লেগস্পিন করতে পারা আমিনুল ইসলাম বিপ্লবকে কাজে লাগানোর চেষ্টা করেছে বিসিবি। কিন্তু তিনিও ১০ টি২০ খেলে অজনা এক কারণে হারিয়ে গেছেন।

এমনকি এবার ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগেও (ডিপিএল) আমিনুল বিপ্লব মূলত ব্যাটার হিসেবেই খেলছেন, অধিকাংশ ম্যাচেই বোলিং করছেন না। ২৪ বছর বয়সেই সেজন্য আরেকটি সম্ভাবনাময় লেগস্পিনার হিসেবে অপমৃত্যুই ঘটেছে তার।  একসময় আলোচনায় আসা তানবীর হায়দারও লাইমলাইটে নেই। বছর দুয়েক আগে কিছুটা আলোচিত হয়েই হারিয়ে গেছেন ২৫ বছর বয়সী মিনহাজুল আবেদিন আফ্রিদি।

বর্তমানে ২১ বছর বয়সী রিশাদ আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নিজেকে প্রমাণ করে ঘরোয়া আসরে নিয়মিত। আর উঠতি তারকা হিসেবে এবার অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ^কাপ খেলা ১৭ বছরের ওয়াসি সিদ্দিকী অনিয়মিতভাবে খেলছেন ঘরোয়া ক্রিকেটে। ঘরোয়া ক্রিকেটে লেগস্পিনারদের প্রতি অবহেলা কমাতে কয়েক বছর আগে প্রতিটি দলকে একজন লেগস্পিনার নিয়ে খেলানো বাধ্যতামূলক করে বিসিবি।

তবে সেই প্রক্রিয়াতে কাজ হয়নি। এর মধ্যেই রিশাদ নিজেকে প্রমাণ যেমন করেছেন, তেমনি তার অনেক পরিচর্যাও করেছে বিসিবি। আগের লেগস্পিন মেধার হারিয়ে যাওয়ার অভিজ্ঞতা থেকেই এবার রিশাদকে ‘এ’ দল, হাই পারফর্ম্যান্স দল, বাংলাদেশ টাইগার্সের অধীনে টানা অনুশীলন করানো ও ম্যাচ খেলানো হয়েছে। তাই এখন জাতীয় দলে তার গুরুত্ব বেড়েছে এবং ঘরোয়া ক্রিকেটেও তাকে নিয়মিত খেলতে দেখা যাচ্ছে। পারফর্মও করছেন তিনি। মুশতাকের অধীনে তিনি আরও শাণিত হবেন এমন প্রত্যাশাই এখন সবার।
স্পিন কোচ হিসেবে অভিজ্ঞ মুশতাক ইতোমধ্যে দুই দফায় পাকিস্তান এবং ইংল্যান্ড, ওয়েস্ট ইন্ডিজের দায়িত্ব পালন করেছেন। খেলোয়াড়ি জীবনে লেগস্পিনার হলেও তার অধীনে ইংল্যান্ডের অফস্পিনার গ্রায়েম সোয়ান আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। এখন মুশতাকের অধীনে অতল অন্ধকারে তলিয়ে যাওয়া বাংলাদেশের লেগস্পিনে উন্নতির মোক্ষম সুযোগ।

এ বিষয়ে জালাল বলেছেন, ‘মুশতাক আহমেদ থাকা অবস্থায় দেশের আনাচে-কানাচে যদি ভালো লেগ স্পিনার থাকে এবং যারা এক্সপোজার পায়নি, তাদের জন্য ট্যালেন্ট হান্ট (স্পিনার হান্ট) করতে পারি সেটা ক্রিকেটের জন্য ভালো হবে, লেগ স্পিনের ভবিষ্যতের জন্য ভালো হবে।’ তবে সেই কাজ করার জন্য মুশতাকের সময় কোথায়? লেগস্পিনে উন্নতির জন্য বিসিবি কি তাকে আরও দীর্ঘ মেয়াদে রাখার চিন্তা করবে?

×