ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

প্যারিস জায়ান্টদের কাছে হেরে ঝুলে গেছে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের ভাগ্য, অলিভিয়ের জিরুডের হ্যাটট্রিক

বার্সিলোনা, চেলসি, পিএসজির জয়

প্রকাশিত: ০১:৩২, ৪ ডিসেম্বর ২০২০

বার্সিলোনা, চেলসি, পিএসজির জয়

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লীগে জয়ের দেখা পেয়েছে সব বড় দল। রোমাঞ্চকর জয়ে বুধবার পূর্ণ তিন পয়েন্ট নিয়েই মাঠ ছেড়েছে স্প্যানিশ ক্লাব বার্সিলোনা, চেলসি, প্যারিস সেইন্ট জার্মেই (পিএসজি) এবং জুভেন্টাস। লা লিগার দল বার্সিলোনা ৩-০ গোলে বিধ্বস্ত করেছে অখ্যাত পেরেঙ্কারোসি টিসিকে, অলিভিয়ের জিরুডের চমকপ্রদ পারফর্মেন্সের সৌজন্যে চেলসি ৪-০ ব্যবধানে রীতিমতো উড়িয়েই দিয়েছে সেভিয়াকে। এছাড়া পিএসজি ৩-১ ব্যবধানে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডকে আর জুভেন্টাস ৩-০ গোলে খুব সহজেই পরাজিত করেছে ডায়নামো কিয়েভকে। চ্যাম্পিয়ন্স লীগে বুধবার বেশ কয়েকটি বড় দল মাঠে নামলেও ভক্ত-অনুরাগীদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড বনাম পিএসজির ম্যাচটি। কেননা এই ম্যাচেই যে দিনের সবচেয়ে সেরা ম্যাচের তকমাটা লাগানো ছিল। ওল্ডট্র্যাফোর্ডে প্যারিস জায়ান্টদের স্বাগত জানায় ম্যানইউ। এর আগে ইস্তান্বুল বাসাকসেহিরকে নাটকীয়ভাবে ৪-৩ গোলে পরাজিত করেছে লিপজিগ। যে কারণে পিএসজি মাঠে নামার আগে বেশ চাপের মুখে ছিল। ওল্ডট্র্যাফোর্ডে অবশ্য সফরকারীদের শুরুটা ভালই হয়। ৬ মিনিটে কিলিয়ান এমবাপের ডিফ্লেকটেড শটে নেইমার খুব কাছে থেকে ডেভিড ডি গিয়াকে পরাস্ত করেন। ২৪ মিনিটে ফ্রেড লালকার্ডের হাত থেকে রক্ষা পান। ইতালিয়ান রেফারি ড্যানিয়েল ওরসাতো রিভিউ দেখে শুধু হলুদ কার্ডের সিদ্ধান্তে অটল থাকেন। ৩২ মিনিটে রাশফোর্ড কেইলর নাভাসকে পরাস্ত করে সমতা ফেরালে টাচেল কিছুটা বিচলিত হয়ে পড়েন। দ্বিতীয়ার্ধের ৬৫ মিনিটে এন্ডার হেরেরা ও মিচেল বাক্কারকে মাঠে নামান টাচেল। মাঠে নেমেই বাক্কার একটি লো শটে গোল প্রায় পেয়েই গিয়েছিলেন। কিন্তু এবার ডি গিয়া কোন ক্ষতি হতে দেননি। এর কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে অবশ্য পিএসজি আবারও লিড পায়। ৬৯ মিনিটে মারকুইনহোসের গোলের এক মিনিটেরও কম সময়ের মধ্যে ফ্রেডের লালকার্ডে ইউনাইটেড ১০ জনের দলে পরিণত হয়। অতিরিক্ত সময় নেইমার আরও এক গোল করলে দাপুটে জয় নিয়েই বাড়ি ফিরে পিএসজি। এই জয়ের ফলে ২০১৯ সালে ইউনাইটেডের কাছে হেরে চ্যাম্পিয়ন্স লীগ থেকে বিদায়ের প্রতিশোধ কিছুটা হলেও নিতে পেরেছে প্যারিসের জায়ান্টরা। স্পেনের আরেক ক্লাব সেভিয়ার বিপক্ষে এদিন দেখা গেছে অলিভিয়ের জিরুডের শো। ফরাসী তারকার চার গোলে ব্লুজরা ৪-০ গোলে পরাজিত করে সেভিয়াকে। সেইসঙ্গে ‘ই’ গ্রুপের শীর্ষে উঠে এসেছে উজ্জীবিত চেলসি। ৩৪ বছর বয়সী এই স্ট্রাইকার সবচেয়ে বেশি বয়সী খেলোয়াড় হিসেবে চ্যাম্পিয়ন্স লীগে হ্যাটট্রিক করার বিরল কৃতিত্ব অর্জন করলেন। এর আগে এই রেকর্ডটি ধরে রেখেছিলেন হাঙ্গেরিয়ান সাবেক তারকা ফেরেং পুসকাস। ১৯৬৫ সালে রিয়াল মাদ্রিদের জার্সি গায়ে ফেয়েনুর্ডের বিপক্ষে পুসকাস সবচেয়ে বেশি বয়সী খেলোয়াড় হিসেবে হ্যাটট্রিক করেছিলেন। এছাড়াও পাঁচ বছর আগে মালমোর বিপক্ষে ক্রিস্টিয়ানো রোনাল্ডো চ্যাম্পিয়ন্স লীগের এক ম্যাচে চার গোল করার পর দ্বিতীয় খেলোয়াড় হিসেবে জিরুড এই কৃতিত্ব দেখালেন। ম্যাচ শুরুর আগে উভয় দলই শেষ ১৬ নিশ্চিত করে ফেলেছিল। বাকি ছিল শুধু আনুষ্ঠানিকতা আর গ্রুপের শীর্ষ স্থান নিয়ে লড়াই। মূল একাদশে বিস্ময়করভাবেই সুযোগ পেয়েছিলেন জিরুড। বাম পা, ডান পা ও মাথার সাহায্যে গোল করে তিনি চেলসিকে শুধু বড় জয়ই না, শীর্ষস্থানও উপহার দিয়েছেন। এছাড়া একটি গোল করেছেন পেনাল্টি থেকেও। গত মৌসুমে বেয়ার্ন মিউনিখের কাছে পরাজিত হয়ে শেষ ১৬ থেকে বিদায় নেয়া চেলসি এবার নিজেদের বদলে এগিয়ে নিয়ে যাবার আভাস ইতোমধ্যেই দিয়ে রেখেছে। এখন শুধু অপেক্ষা মাঠে তা প্রমাণের। কেই হাভাটর্জের পাস থেকে ৮ মিনিটে চেলসিকে এগিয়ে দেন জিরুড। এরপর হ্যান্ডবলের কারণে সেভিয়ার আবেদন করা দুটি পেনাল্টি বাতিল হয়ে যায়। ২০ মিনিটে ক্রিস্টিয়ান পুলিসিচের হ্যান্ডবল ধরতে পারেননি রেফারি আর্টার সোয়ারেস ডিয়াস। যদিও মাঠের বাইরে রাখা মনিটরে রিভিউ দেখেও তিনি নিজের সিদ্ধান্তে অটল ছিলেন। এরপর ইভান রাকিটিচের একটি ফ্রি-কিক চেলসির দেয়ালে আঘাত লাগার পর সেভিয়া হ্যান্ডবলের আবেদন করেছিল। দীর্ঘ সময় ভিএআর দেখেও তাতে কোন সাড়া পাওয়া যায়নি। উল্টো ৫৪ মিনিটে মাতেও কোভাচিচের এসিস্টে জিরুড ব্যবধান দ্বিগুণ করেন। কিন্তু এখানেই থেমে যাননি এই ফরাসী তারকা। ৭৪ মিনিটে এন’গোলো কান্টের ক্রস থেকে ২০১৫ সালে আর্সেনালের হয়ে অলিম্পিয়াকোসের বিপক্ষে চ্যাম্পিয়ন্স লীগের হ্যাটট্রিকের পর দ্বিতীয় হ্যাটট্রিক পূরণ করেন। ৮৩ মিনিটে স্পটকিক থেকে নিজের চতুর্থ গোল করলে বড় জয় নিশ্চিত হয় চেলসির। এদিকে ফেরেঙ্কভারোসির মাঠ থেকে ৩-০ গোলের অনায়াস জয় নিয়ে বাড়ি ফিরেছে বার্সিলোনা। টানা ম্যাচের সূচী থাকায় তুলনামূলক দুর্বল দলটির বিপক্ষে লিওনেল মেসি, ফিলিপ কোটিনহো, মার্ক টের স্টেগানসহ নিয়মিত একাদশের বেশ কিছু খেলোয়াড়কে বিশ্রামে রাখেন রোনাল্ড কোম্যান। তবু সহজ জয়ই পেয়েছে তার দল। হাঙ্গেরির লীগে ৫৯ ম্যাচ ধরে অপরাজিত থাকলেও চ্যাম্পিয়ন্স লীগে বার্সিলোনার বিপক্ষে পরাজয় ঠেকাতে পারেনি ফেরেঙ্কভারোস। ম্যাচের ১৪ মিনিটে আলবার ক্রসে প্রতিপক্ষের জালে বল জড়ান এ্যান্থনি গ্রিজম্যান। ২০ মিনিটে বামপাশ থেকে আসা ডেম্বেলের ক্রসে পা ছুঁইয়ে আসা বল থেকে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন দলের মূল স্ট্রাইকার হয়ে খেলতে নামা ব্রাথওয়েট। ম্যাচের বয়স ৩০ মিনিট হওয়ার আগেই তৃতীয় গোলটিও পেয়ে যায় বার্সা। এবার স্কোরশিটে নাম তোলেন ডেম্বেলে নিজেই। তবে মিসের মহড়া না হলে জয়ের ব্যবধানটা দ্বিগুণ হতো কাতালানদের।
×