ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

জয় তো চাই দুই টেস্টেই ॥ সাকিব

প্রকাশিত: ০৭:৪৫, ২৫ আগস্ট ২০১৭

জয় তো চাই দুই টেস্টেই ॥ সাকিব

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট দল তখনও বাংলাদেশের মাটিতে পা রাখেনি। এরআগেই বাংলাদেশ দলের প্রধান কোচ চন্দ্রিকা হাতুরাসিংহে নিজের স্বপ্নের কথা জানিয়ে দিয়েছিলেন। কী সেই স্বপ্ন? অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজের প্রতিটি ম্যাচ জেতার স্বপ্ন। অসিদের হোয়াইটওয়াশ করার স্বপ্ন। বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানও তাই মনে করেন। অস্ট্রেলিয়াকে হোয়াইটওয়াশ করা সম্ভব বলেই বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন। বৃহস্পতিবার অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট দলের আনুষ্ঠানিক কোন অনুশীলন ছিল না। বাংলাদেশ দল সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত অনুশীলন করে। অনুশীলন শেষে মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের সংবাদ সম্মেলন কক্ষে এমন আশার বাণী শোনান সাকিব। সাংবাদিকদের কাছ থেকে তাকে প্রশ্ন করা হয়েছিল অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে দুইটা টেস্ট কি জেতা যাবে? তার মানে সাকিবের টেস্ট সিরিজ থেকে প্রত্যাশাটা কী? সাকিব জানান, ‘আমার তো মনে হয় সম্ভব। সম্ভব না হওয়ার তো কিছু দেখি না। আর প্রত্যাশা দুই টেস্ট জেতা।’ কিভাবে জেতা সম্ভব তাও জানিয়ে দিয়েছেন সাকিব। বলেছেন, ‘টেস্ট জিততে হলে সবদিকেই ভাল করতে হবে। আমাদের সবকিছুই ভাল করতে হবে। ব্যাটিংও ভাল করতে হবে। বোলিংও ভাল করতে হবে। ওরা যে দল, যে পরিবেশেই আসুক, ওরা সবসময়ই কঠিন প্রতিপক্ষ। বিশ্বের যে কোন জায়গায় ওরা দ্রুত কন্ডিশনের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারে। এটা ওদের চেয়ে ভাল কেউ পারে না। ওরা তাই আমাদের জন্য কঠিন প্রতিপক্ষ। যদিও ওরা একটু অনভিজ্ঞ এখন এবং ভারত ও শ্রীলঙ্কায় সাম্প্রতিক সময়ে ওদের পারফর্ম তেমন ভাল নেই। আশা করব সেটা যাতে এখানেও অব্যাহত থাকে আর আমরা ভাল করতে পারি।’ স্পিন আক্রমণ নিয়ে এ সিরিজের আগে সবচেয়ে বেশি কথা হচ্ছে। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে গত বছর অক্টোবরে স্পিনেই ইংলিশদের কাবু করেছিল বাংলাদেশ। তাই মনে করা হচ্ছে মিরপুরে ২৭ আগস্ট শুরু হতে যাওয়া প্রথম টেস্টে স্পিনই আসল ভূমিকা রাখবে। আর তাতে তো বাংলাদেশই এগিয়ে থাকছে। সাকিব, মেহেদী হাসান মিরাজ, তাইজুল ইসলামদের মতো স্পিনার যে আছেন। সাকিবও তাই মনে করেন, ‘আমার মনে হয় আমাদের স্পিন এ্যাটাক বেটার ওদের থেকে। সব কন্ডিশনে বলব না। আমাদের দেশে ওদের চেয়ে আমরা ভাল। তাইজুল-মিরাজ অনেকদিন ধরে ভাল বোলিং করছে। এই সিরিজে ওরা দারুণ কিছু করবে বলেই বিশ্বাস করি।’ এই স্পিন দিয়ে অসিদের কাবু করতে হলে উইকেটেরওতো সমর্থন লাগবে। মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের মাঠ নতুনভাবেই যেন গড়ে উঠেছে। তাতে উইকেট আসলেই স্পিনারদের কথা বলবে কিনা তা নিয়ে একটু হলেও ভাবনা আছে। উইকেট নিয়ে তাই যখনই কথা উঠলো, সাকিব বলে দিলেন, ‘উইকেটের ওপর তো আমাদের হাত নেই। কিউরেটর হয়তো চেষ্টা করবে। ওটা নিয়ে বেশি চিন্তা করা ঠিক হবে না। আমাদের যে কোন উইকেটে, পরিবেশে আমাদের ওদের চেয়ে ভাল করার চেষ্টা করতে হবে। যেহেতু আমাদের হোম কন্ডিশন। আমাদের উচিত হবে দ্রুত মানিয়ে নেয়া। উইকেটে যদি স্পিনারদের জন্য সহায়তা থাকে তবে আমার জন্য ভাল। যেহেতু আমি একজন স্পিনার। একই সঙ্গে আমাদের পেসারদেরও কিন্তু উইকেট নেয়ার ক্ষমতা আছে। তারা দক্ষ। শুধু স্পিনারদের ওপর নির্ভর করে থাকলে চলবে না। একটা টাইমে দেখা যায় বড় জুটি পেসাররা এসে তা ভেঙ্গে দেয়। একজন স্পিনারের চার, পাঁচ উইকেটের চেয়ে এটা বড়। এই জিনিসগুলো গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়া টেস্ট জেতার জন্য ব্যাটিংটাও খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।’ এগারো বছর পর অস্ট্রেলিয়া খেলতে এসেছে। ২০০৬ সালের আগে দুইদল চার টেস্টে মুখোমুখি হয়। অসিরা সবসময়ই জিতেছে। কিন্তু এখন প্রেক্ষাপট ভিন্ন। এখন বাংলাদেশ দল অনেক শক্তিশালী। বিশেষ করে দেশের মাটিতে। দেশের মাটিতে সর্বশেষ টেস্টে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে জিতেছে বাংলাদেশ। সেই জয়ী টেস্টটিই প্রতিপক্ষের ঘুম যেন কেড়ে নিয়েছে। এই অস্ট্রেলিয়া দলের বিপক্ষে কখনই বর্তমান বাংলাদেশ দলটি খেলেনি। বর্তমান অস্ট্রেলিয়া দলও কখনই এই বাংলাদেশ দলের বিপক্ষে টেস্ট খেলেনি। অস্ট্রেলিয়াকে কী তাহলে হারানোর এখনই সেরা সময়? সাকিব মনে করছেন, ‘আমাদের দলের অবস্থা খুব ভাল। কিন্তু এটাই সেরা সুযোগ কিনা তা বলা মুশকিল। কারণ ওদের বিপক্ষে তো খেলিইনি আগে। খেললে আসলে বলতে পারতাম আগের দলের সঙ্গে বেশি সুযোগ ছিল নাকি এখনকার দলের সঙ্গে বেশি সুযোগ। ভাল-খারাপ বড় কথা নয়। বাাংলাদেশ দল জিততে পারলে সেটাই বড় ব্যাপার।’ অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে মিরপুরে টেস্ট খেলতে নামতেই ৫০তম টেস্ট খেলা হবে সাকিবের। ৫০ টেস্ট খেলতে সাকিবের ১০ বছর পার করতে হলো। তাতে আফসোস থাকাটাই কী স্বাভাবিক না? সাকিব বলছেন, ‘প্রথম টেস্ট খেলার সময় চিন্তা ছিল না যে কতটা খেলব, কতদিন খেলব। সে সময় একটা মজা ছিল। সেটা এখন নেই তেমন না। কিন্তু এখন পরিবেশ অন্য রকম, দায়িত্ব, সবকিছুই আলাদা। লাইফে খুব বেশি আফসোস নেই। ওদিক চিন্তা করলে যা হয়েছে তাতেই আলহামদুলিল্লাহ। বেশি খেলতে পারলে ভাল লাগতো। খেলতে পারিনি বলে আফসোস নেই। যতগুলো ম্যাচ খেলেছি তাতে কতটা পারফর্ম করেছি সেটাই আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ। সামনে দুটি ম্যাচ চেষ্টা করব ভাল কিছু করতে। এ বছর আমাদের দলের অনেকেই খুব ভাল করেছে। আশাকরি এই সিরিজেও ভাল কিছু হবে।’ সাকিব ও মুস্তাফিজকে নিয়ে ভাবনায় আছে অস্ট্রেলিয়া। সাকিব বিষয়টাকে দেখছেন এভাবে ‘এখনও তেমন কোন পরিকল্পনা নেই। তবে এ বছর খুব ভাল যাচ্ছে। চেষ্টা থাকবে আর ভাল কিছু করার।’ সঙ্গে গত ৪৯ টেস্টের স্মরণীয়তম কোনটা এবং সেরা পারফর্ম নিয়ে সাকিব জানান, ‘স্মরণীয় টেস্ট ইংল্যান্ডেরটা (২০১৬ সালে)। ব্যক্তিগতভাবে আমার কাছে মনে হয় ওয়েস্ট ইন্ডিজের সঙ্গে ৯২ করেছিলাম, সেটা মনে পড়ছে। আর নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ২১৭, বড় অর্জন ছিল। বোলিংয়ের দিক থেকে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে চট্টগ্রামে (২০০৮ সালে)। দশ বছর খেলার পর একটা দলের বিপক্ষে প্রথম টেস্ট খেলছেন। কেমন লাগছে? সাকিব জানান, ‘এটা একটা রোমাঞ্চকর ব্যাপার। ওদের সঙ্গে নানা সময়ে ওয়ানডে বা টি২০ খেলেছি। টেস্ট এই প্রথম। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে ওদের সঙ্গে একটা ম্যাচ খেলার সুযোগ হয়েছে। একটা রোমাঞ্চকর ব্যাপার। অস্ট্রেলিয়া-ইংল্যান্ড টেস্টকে আলাদা মূল্যায়ন করে। যেটা অন্যরা করে না। এ রকম একটা দেশের সঙ্গে টেস্ট খেলা রোমাঞ্চকর।’ আগে দলগুলো বাংলাদেশকে নিয়ে মশকরা করতো, এখন বলছে বাংলাদেশের কাছে ওরা হেরে যেতে পারে। এটাকে কিভাবে দেখছেন? সাকিব বলেন, ‘এটা সন্তোষকজনক ব্যাপার। ১০ বছর, ১১ বছর আসলে লম্বা সময়। এটা একটা বড় সাইন যে আমরা কতোটা এগিয়ে এসেছি। এর ক্রেডিট আসলে সবার জন্যই। শুধু ১০ বছর নয় বরং এরআগে থেকেও। প্রশাসন, ফ্যাসিলিটিস, সাপোর্ট স্টাফ, কোচ, যারা এত বছরে এসেছেন, এমন কি আপনাদেরও, বলবয়; এবং দর্শকদেরও অবদান আছে। আমার মনে হয় বাংলাদেশের মানুষ ক্রিকেট যতটা পছন্দ করে, ভারতেও ততটা করে না। বাংলাদেশে এখন সবকিছুর আগে ক্রিকেট। এটা আমাদের জন্য বিশেষ করে প্লেয়ারদের জন্য অনেক সন্তুষ্টির একটা ব্যাপার।’ অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষেই শুধু সাকিবের ৫ উইকেট নেয়া বাকি আছে। তাই প্রশ্নও উঠল, অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে পাঁচ উইকেট পেলে...। সাকিব বলেন, ‘ওইটা মনে আছে। চারটা ইনিংস আছে, দেখা যাক। কতটা বেশি অবদান রাখতে পারি সেটাই বড়। দেখা গেল অন্য কেউ ভাল বোলিং করে পাঁচ উইকেট পেল, দলের জন্য সেটা ভাল। উইকেট পাওয়াটা নিজের হাতে নেই। দেখা যাবে অনেক সময় দারুণ বোলিং করেও অন্য কেউ উইকেট পায়। আবার অনেক সময় ভাল বোলিং না করেও উইকেট পাওয়া যায়। বোলিংয়ের জুটিটাও গুরুত্বপূর্ণ। আমরা জুটি গড়ে কতটা ভাল বোলিং করতে পারি এটা গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার।’ ইয়ং ক্রিকেটাররা কি সিরিজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে? সাকিব বরাবর যা বলেন তাই বললেন, ‘আমি একটা জিনিস সবসময় বলি যে, ইয়ং-সিনিয়র, অভিজ্ঞ-অনভিজ্ঞ এগুলো একটা ম্যাচে কোন মানে রাখে না। একটা ম্যাচে ১১ জন করে খেলোয়াড় থাকে, সবারই একটাই দায়িত্ব, দলকে জেতানো। জুনিয়র বলে কম করলে চলবে, সিনিয়র হলে বেশি করতে হবে; ব্যাপারটা এমন না। একটা প্লেয়ার সবসময় ভাল করবে না বা খারাপও করবে না। পাঁচ-ছয় জনের চেষ্টায় একটা দল জিতে। এটাই টিম ওয়ার্ক।’
×