ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

পুরস্কার পেয়ে দারুণ খুশি সানজিদারা- বললেন উপকৃত হবে আমাদের পরিবার

দিনটি আমাদের জন্য অনেক স্মরণীয় ॥ কৃষ্ণা রানী

প্রকাশিত: ০৬:৪৩, ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৬

দিনটি আমাদের জন্য অনেক স্মরণীয় ॥ কৃষ্ণা রানী

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ সাফল্য পেলে কার না ভাল লাগে? আরও ভাল লাগে, যদি সেই সাফল্যের যথাযথ মূল্যায়ন পাওয়া যায়। মূল্যায়ন বলতে অভিনন্দন, সংবর্ধনা এবং আর্থিক পুরস্কারে ভূষিত করা। বাংলাদেশের ফুটবলের কথাই ধরা যাক। যেখানে পুরুষ ফুটবল দিনের পর দিন গোল্লায় যাচ্ছে, সেখানে মহিলা ফুটবলের তরতর করে সাফল্যের সিঁড়ি বেয়ে ক্রমেই ওপরে ওঠার চিত্র সত্যিই বিস্ময়কর। গত এক বছরের মধ্যে তাদের জাতীয় বয়সভিত্তিক দল জিতেছে এএফসি আয়োজিত তিন আসরের শিরোপা। দুটি হচ্ছে অনুর্ধ-১৪ আঞ্চলিক চ্যাম্পিয়নশিপে, একটি অনুর্ধ-১৬ চ্যাম্পিয়নশিপের বাছাইপর্বের গ্রুপ পর্বে। শেষেরটিই গুরুত্বের বিচারে সবার চেয়ে এগিয়ে থাকবে। কেননা এই সাফল্যে মেয়েরা পৌঁছে গেছে এশিয়ার সেরা আটে। সোমবার মেয়েদের জমকালো সংবর্ধনা দেয়া হয়। সেখানে তাদের মঞ্চে ডেকে আর্থিক পুরস্কারও দেয়া হয়। পুরস্কার পাওয়ার পর কেমন ছিল কোচ- ফুটবলারদের প্রতিক্রিয়া? দলের অধিনায়ক-ফরেয়ার্ড কৃষ্ণা রানী সরকারের অনুভূতি, ‘আজকের দিনটি আমাদের জন্য অনেক স্মরণীয়। পরিশ্রম করে যে সাফল্য পেয়েছি, তার স্বীকৃতি আজ পেলাম। এজন্য খুব ভাল লাগছে। আর্থিক পুরস্কার পাওয়াটা অবশ্যই আমাদের জন্য উৎসাহব্যঞ্জক। এতে আমাদের পরিবার উপকৃত হবে। তবে এই টাকা দিয়ে কি করব, সেটা বলতে পারব না। এটা আমার মা-বাবার বিষয়। তারা যা ভাল বুঝবেন, তাই করবেন। আগামী এক বছর বাফুফে আমাদের সবকিছুর দায়িত্ব নিয়েছে। এজন্য তাদের ধন্যবাদ। এই সময়টায় আমাদের লক্ষ্য হবে কঠোর অনুশীলনের মাধ্যমে নিজেদের আরও শাণিত করা, যাতে আমরা ভাল ফল লাভ করতে পারি।’ কৃষ্ণার বাবা বাসুদেব সরকার। পেশায় আগে ছিলেন দর্জি। এখন শরীরে কুলোয় না বলে কৃষি কাজ করবেন বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আজ আমি দারুণ গর্বিত আমার মেয়ের জন্য। তাদের কারণেই আজ বাংলাদেশের মুখ উজ্জ্বল হয়েছে। কোনদিন চিন্তাও করিনি, ঢাকায় আসব, এত বড় হোটেলে গিয়ে মঞ্চে উঠে মেয়ের পুরস্কার লাভের সাক্ষী হব। দলের অন্যতম ডিফেন্ডার মাসুরা পারভীন। তিনি জাতীয় দলের কাবাডি খেলোয়াড়ও বটে। কিন্তু সম্প্রতি তিনি কাবাডি ফেডারেশনকে জানিয়ে দিয়েছেন, কাবাডি নয়, ফুটবলেই সময় দেবেন বেশি। তার ভাষ্য, ‘ফুটবলই এখন আমার ধ্যানজ্ঞান। আমাদের এই দলটি অনেকদিন ধরেই এক সঙ্গে খেলছি। জিতেছি তিন শিরোপা। এটা একটা পর্যায় পর্যন্ত এসেছি। এ জন্য আমাদের অনেক পরিশ্রম ও অনুশীলন করতে হয়েছে। আগামীতে এই ধারা অব্যাহত থাকলে আশা করি আমরা আবারও সফল হব। আজ আমরা পুরস্কৃত ও সংবর্ধিত হয়েছি, এটা আমাদের জন্য অনেক খুশির বিষয়।’ কৃষ্ণাদের সাফল্যের নেপথ্য রূপকার যিনি, তিনি কোচ গোলাম রব্বানী ছোটন। তার অধীনে কৃষ্ণারা জিতেছে তিন শিরোপা। ছোটন বলেন, ‘আজকের দিনটা বাংলাদেশের মহিলা ফুটবলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ও স্মরণীয়। এই সংবর্ধনা ও আর্থিক পুরস্কার পাওয়াটা দলের সবাইকেই শুধু নয়, বাংলাদেশের সব মেয়েদেরই সমানভাবে উজ্জীবিত করবে। উজ্জীবিত করবে তাদের অভিভাবকদেরও। তারা এখন থেকে নিজেদের মেয়েদের ফুটবল খেলতে আর বাধা দেবেন না, দ্বিধায় ভুগবেন না। অন্য মেয়েরাও জানবে, এখানে ভাল ফুটবল খেললে মূল্যায়ন করা হয়, পুরস্কার পাওয়া যায়। ফলে সবাই ফুটবল খেলতে উৎসাহিত হবে। এটা দেশের মহিলা ফুটবলের জন্য খুবই ইতিবাচক ব্যাপার হবে। এখন আমাদের লক্ষ্য সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ এবং থাইল্যান্ডে অনুষ্ঠিতব্য এএফসি অ-১৬ মহিলা চ্যাম্পিয়নশিপের মূলপর্বে ভাল করার জন্য নিজেদের প্রস্তুত করে তোলা।’
×