ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

মজার খেলা বিচ ভলিবল!

প্রকাশিত: ০৭:১২, ৮ আগস্ট ২০১৬

মজার খেলা বিচ ভলিবল!

বাংলাদেশে বিচ ভলিবল চর্চা নেই। ওয়ালটনের উদ্যোগে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে কালে-ভদ্রে যে বিচ ভলিবল অনুষ্ঠিত হয় সেটা নিছক একটা বিনোদন। পেশাদারিত্ব নেই। কিন্তু অলিম্পিকে বিচ ভলিবলের বেশ কদর। উপভোগ্য বিধায় দর্শক আগ্রহটাও প্রবল। স্থানীয়দের পাশাপাশি পৃথিবীর দূর- দূরান্ত থেকে রিওতে উড়ে আসা মানুষের প্রচ- চাপ সমুদ্র সৈকতের বালুচরে প্রমীলা বিচ ভলিবল স্টেডিয়ামে। শুধু পদকের লড়াই নয়। এই খেলার মধ্যে রয়েছে মনের খোরাক যোগানো বিনোদন। সুন্দরী ললনাদের স্বল্প বসনার পোশাকটাই যেন গেমসটির অন্যতম আকর্ষণ। লম্বা-সিøম ফিগারের অপরূপা নারীদের এই খেলায় দু’জন করে প্রতিযোগিনী একটি দলে। সাধারণ ভলিবলের চেয়ে সম্পূর্ণ আলাদা। বিচ ভলিবলের পোশাক বলতে নিচে অন্তরবাস সাদৃশ্য টাইট, (আসলে এটার কি ব্যাখ্যা দেব বুঝতে পারছি না।) প্যান্ট। বুকটাও ঢাকা নামকওয়াস্তের পোশাকে। যারা এই খেলার প্রকৃত দর্শক তাদের কাছে বিষয়টা কিছুই না। কিন্তু নতুন আসা মানুষের কাছে খেলার চেয়ে সুড়সুড়ি জাগানো পোশাকটাই সবচেয়ে আকর্ষণীয়। চ্যানেল ঘুরাতে ঘুরাতে টিভির পর্দায় কালে-ভদ্রে মেয়েদের বিচ ভলিবল দেখার সুযোগ হয়েছে। অলিম্পিক কভার করতে আসার পর একেবারে চোখের সামনে। শহর, গ্রামগঞ্জে যে ধরনের নেট ব্যবহার করা হয় বিচ ভলিবলেও তাই। কিন্তু পার্থক্যটা সম্পূর্র্ণ বিপরীত। সমুদ্র পারে চিত্তহরণকরী এই খেলার বৈচিত্র অন্যরকম। বিশেষ এক অনুভূতির। সার্ভ করা থেকে প্রতিপক্ষের নিক্ষিপ্ত বল ফেরাতে বালুতে ডাইভ দেয়ার দৃশ্য দেখলে বার বার নড়েচড়ে বসা ছাড়া উপায় নেই। কারণ গায়ের পোশাক আর আসল জায়গায় থাকে না। কোন রকমে ঢেকে রাখা শরীরের উর্ধাংশের বিশেষ অঙ্গ ঝাঁকুনিতে বলের মতোই যেন বেরিয়ে পড়ে। যা হোক, এরচেয়ে বেশি আর আগানো ঠিক হবে না। বল ফেরাতে পারলেই কড়তালি। পয়েন্ট লাভের পর আরও বেশি। মুহুর্মুহু কড়তালি। স্বল্পবসনা সুন্দরীদের ভিরের কারণে রিও কোপা কাভানা বিচ এমনিতেই বিশ্ব খ্যাত। তার ওপর আটলান্টিকের এই বালুতটে অলিম্পিক বিচ ভলিবল। যা আরও আকর্ষণীয় করে তুলেছে কোপা কাভানাকে। বিশ্বের ২৪টি দেশ অংশ নিচ্ছে এ প্রতিযোগিতায়। হোটেলের জানালার সামনে দাঁড়ালেই আটলান্টিকের উত্তাল ঢেউ। চোখের সামনেই রং ছড়ানো কোপাকাভানার অপরূপ দৃশ্য। এখানে দিন আর রাত বলে কিছু নেই। ২৪ ঘণ্টাই একই রকমের। তবে রাতের আলোয় বা পূর্ণিমায় হয়ে ওঠে আরও বর্ণিল। সৌভাগ্যই বলতে হবে। আর হোটেল থেকে কয়েক কদম হাটলেই গেমসের বিচ ভলিবল স্টেডিয়াম ঠাঁয় দাঁড়িয়ে অভ্যর্থনা জানাতে। এত কাছে থাকার পর এই সুযোগ হাত ছাড়া মানে বোকামি। উদ্বোধনীর পরদিন থেকেই পুরোদস্তুর খেলা আর খেলা। আর গেমসের খেলা কাভারটা শুরু বিচ ভলিবল দিয়ে। বাড়ির কাছে ‘আরশি নগর’ গানটির মতোই হোটেলের ঠিক একেবারে উল্টো দিকেই বলে প্রথমেই এখানে ঢুকে পড়া। দূরে কোথাও হলে অদৌ যাওয়া হতো বলে মনে হয় না। কারণ আমরা তো আর মেয়েদের প্রায় নগ্ন শরীরের এই খেলা দেখে মোটেই অভ্যস্ত নই। ফলে বিচ ভলিবল দেখা-লেখা মাথায় ঢুক তো না বললেই চলে। হ্যাঁ ঢুকেই যখন পড়লাম তখন চিন্তায় ঠেকলো অন্তত একটা ম্যাচ তো দেখি। তারপর ছুটা যাবে অন্যদিকে। সকাল থেকে বিকেল অবধি ১০ ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়েছে। উদ্বোধনী ম্যাচটি ছিল স্পেন বনাম আর্জেন্টিনার মধ্যে। তবে নড়েচড়ে বসা উৎসুক দর্শক হিসেবে নয়। কর্তব্যরত সাংবাকিদের দৃষ্টিতে খেলা দেখা ক্যারিয়ারের নতুন, অন্যরকম এক অভিজ্ঞতা অর্জন। ম্যাচে স্প্যানিশ মেয়েযুগল বড় ব্যবধানে (২০-৯, ২০-৩ সেট) হারিয়ে দিল আর্জেন্টিনাকে। গ্যালারি ভর্তি দু’দলের দর্শকের আবেগ আর অনুভূতি দেখে মনে হচ্ছিল যেন বিশ্বকাপ ফুটবলের ম্যাচ। হাল্কা গড়নের প্রায় ৬ ফুটের কাছাকাছি দু’দলের চার খেলোয়াড়। বালুচরের এই খেলার জন্য অফুরন্ত দম আর ফিটনেস প্রয়োজন। সাধারণ ভলিবলে যেখানে ছয়জন করে খেলোয়াড় থাকে সেখানে বিচের খেলায় মাত্র দু’জন করে। খালি পায়ে সামনে পেছনে দৌড়-ঝাঁপ পারতে প্রচুর পরিশ্রম করতে হয়। দৃষ্টিনন্দন এই ম্যাচে স্পেনের দুই খেলোয়াড়ের মধ্যে একজনের নাম লিলিয়ান আর অন্যজন ইসলা। আর্জেন্টিনার খেলোয়াড় ছিলেন এ্যাশলে আর ক্ল্যাগিয়া নামের দু’জন। লড়াইটা অসম হলেও বেশ ভালই লাগল। দারুণ উপভোগ্যও বটে। এরপরের পর্বটা সাঁতারের হিটে যুক্তরাষ্ট্রের আধিপত্য আর পুরুষ হকিতে ভারতের শুভ সূচনা।
×