ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

দুরন্ত রিশাদে সিরিজ জিতল টাইগাররা

শাকিল আহমেদ মিরাজ

প্রকাশিত: ০০:৫৫, ১৯ মার্চ ২০২৪

দুরন্ত রিশাদে সিরিজ জিতল টাইগাররা

চট্টগ্রামে শেষ ম্যাচে শ্রীলঙ্কাকে উড়িয়ে দিয়ে ওয়ানডে সিরিজের শিরোপা হাতে টাইগাররা

মাথায় আঘাত পেয়ে ‘কনকাশনে’ সৌম্য সরকার, ফিল্ডিংয়ে এনামুল হক বিজয়ের সঙ্গে প্রচ- সংঘর্ষে হাসপাতালে তার ‘বদলি’ জাকের আলী। এতকিছুর মাঝেও তাসকিন আহমেদ, মুস্তাফিজুর রহমানের দুর্দান্ত বোলিংয়ে শ্রীলঙ্কাকে ২৩৫ রানে গুটিয়ে দেওয়ার পর সৌম্যর ‘কনকাশনে’ হঠাৎ পাওয়া সুযোগে ঝলমলে ওপেনার তানজিদ হাসান তামিম (৮১ বলে ৮৪), অতঃপর শেষ দিকে চাপের মধ্যে রিশাদ হোসেনের ব্যাটিং ঝড়- সোমবার চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে ভয়, সংশয় আর আনন্দময় শেষ ওয়ানডেতে ৪ উইকেটের দারুণ জয়ে ২-১-এ সিরিজ পকেটে পুড়ল টাইগাররা।

৪০.২ ওভারেই উদ্যাপনের দিনে বোলিংয়ে ১ উইকেট নেওয়ার পর আট নম্বরে নেমে মাত্র ১৮ বলে ৫ চার ও ৪ ছক্কায় অপরাজিত ৪৮ রান করে ম্যাচসেরা রিশাদ। ২০২১ সালের পর, সর্বোপরি ওয়ানডেতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বাংলাদেশের এটি মাত্র দ্বিতীয় ওয়ানডে সিরিজ জয়। ১ সেঞ্চুরিতে ৮১.৫ গড়ে ১৬৩ রান; পূর্ণাঙ্গ অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব পাওয়ার প্রথম সিরিজেই সিরিজসেরা নাজমুল হোসেন শান্ত। 
চট্টগ্রামের ব্যাটিং সহায়ক উইকেটে ২৩৬ রানের লক্ষ্য মোটেই ‘চ্যালেঞ্জিং’ ছিল না। লিটন বাদ পড়ায় এদিন নতুন ওপেনিং জুটি নিয়ে মাঠে নামে বাংলাদেশ। সৌম্যর হঠাৎ চোটে এনামুল হক বিজয়ের সঙ্গী হন বিশ্বকাপের পর প্রথম সুযোগ পাওয়া তানজিম। তাদের শুরুটাও হয় আশাজাগানিয়া। ৫০ রানের উদ্বোধনী জুটি যখন ভাঙে, এনামুল ফেরেন ২২ বলে ১২ রান করে। অধিনায়ক শান্ত বিদায় নেন ১ রান করেই। তৃতীয় উইকেটে ৪৯ রানের জুটি গড়েন তানজিদ ও তাওহিদ হৃদয়।

প্রথম দুই উইকেট নেওয়া লাহিরু কুমারা এই জুটিও ভাঙেন। লঙ্কান স্বাস্থ্যবান পেসারের শর্ট বলে বজে শটে ২২ রান করে ফেরেন হৃদয়। নিজের পরের ওভারে মাহমুদুল্লাহকেও (১) ফিরিয়ে ওয়ানডেতে প্রথমবার চার উইকেটের স্বাদ পান কুমারা। একটু পর আরও বড় ধাক্কা খায় বাংলাদেশ। ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গাকে উড়িয়ে মারার চেষ্টায় সীমানায় ধরা পড়েন ৮১ বলে ৯ চার ও ৪ ছক্কায় ৮৪ রান করা তানজিদ।  সেখান থেকে মুশফিকুর রহিম ও মেহেদী হাসান মিরাজের ৪৮ রানের জুটি দলকে এগিয়ে নেয় কিছুটা দূর।

হাসারাঙ্গাকে ছক্কার চেষ্টায় মিরাজ যখন আউট হন ২৫ রানে, বাংলাদেশ তখন পড়ে যায় অনিশ্চয়তায়। উইকেট বাকি ছিল ৪টি, রান প্রয়োজন তখনো ৫৮। কিন্তু রিশাদের ব্যাটে উড়ে যায় সব অনিশ্চয়তা। প্রথম বলে ছক্কা দিয়ে শুরু করেন এ লেগস্পিনিং-অলরাউন্ডার। হাসারাঙ্গার ওই ওভারে মারেন আরও একটি করে চার ও ছক্কা। লঙ্কান তারকা লেগস্পিনারের পরের ওভারে তাণ্ডব বইয়ে দেন তিনি। তিন চার ও দুই ছক্কায় ওভার থেকে নেন ২৪ রান। পরের ওভারে মুশফিকের (৩৬ বলে অপরাজিত ৩৭) ব্যাটের কানায় লেগে বাউন্ডারিতে জিতে যায় দল। অবিচ্ছিন্ন জুটিতে আসে ২৫ বলে ৫৯ রান।
এর আগে টস জিতে ব্যাটিং নেয়া শ্রীলঙ্কান শিবিরে শুরুতেই ধাক্কা দেন তাসকিন। ম্যাচের দ্বিতীয় ওভারেই পাথুম নিসাঙ্কাকে (১) এলবিডব্লিউ করেন টাইগার পেসার। রিপ্লেতে যদিও দেখা যায়, বল চলে যাচ্ছিল লেগ স্টাম্পের বেশ বাইরে দিয়ে। তবে রিভিউ নেননি নিসাঙ্কা। তাসকিন পরের ওভারে দারুণ এক আউট সুইঙ্গারে বিদায় করেন আভিশকা ফার্নান্দোকে (৪)। সেই ধাক্কা সামাল দেওয়ার আগেই শ্রীলঙ্কা হারায় সাদিরা সামারাবিক্রমাকে (১৪)। একাদশে ফিরে প্রথম ওভারে উইকেট পান মুস্তাফিজ।

এরপর লড়াইয়ের চেষ্টা করেন অধিনায়ক কুসল মেন্ডিস ও চারিথ আসালাঙ্কা। কিন্তু খুব দীর্ঘায়িত হয়নি তা। রিশাদ আক্রমণে এসেই ফেরান ২৯ রান করা মেন্ডিসকে। তৃতীয় ম্যাচে এসে প্রথম উইকেটের স্বাদ পেলেন এই লেগ স্পিনার। আসালাঙ্কার ইনিংস ৩৭ রানে থামান মুস্তাফিজ। ১৬ বল খেলে প্রথম রানের দেখা পাওয়া দুনিথ ওয়েলালাগে থামেন ওই এক রানেই। হাসারাঙ্গাও (১১) পারেননি টিকতে। দুজনকেই ফেরান মেহেদী হাসান মিরাজ। এই সময়টায় এক প্রান্ত আগলে ছিলেন লিয়ানাগে। তাকে দারুণভাবে সঙ্গ দেন মাহিস থিকশানা। ১৫৪ রানে ৭ উইকেট হারানো দলকে উদ্ধার করে দুজনের ৬০ রানের জুটি। 
মুস্তাফিজ পায়ে টান লাগায় মাঠ ছাড়ার পর ওই ওভার করতে এসে সৌম্য ভাঙেন সফরকারীদের এই ফিফটির জুটি। এরপর লোয়ার অর্ডারদের নিয়ে শতরান পূরণ করেন লিয়ানাগে। ওয়ানডে ক্যারিয়ারে আগের ৫ ইনিংসে একবার ৯৫ রানে থমকে যান তিনি, ফিফটি করেন আরও দুটিতে। এবার স্বাদ পেলেন প্রথম সেঞ্চুরির। ১১ চার ও ২ ছক্কায় ১০২ বলে ১০১ রান করে অপরাজিত থাকেন ২৮ বছর বয়সী ক্রিকেটার। শ্রীলঙ্কা স্পর্শ করে ২৩৫। সেই পুঁজি নিয়ে তারা লড়াই জমিয়ে তোলার ইঙ্গিত দিয়েছিল বটে। কিন্তু শেষের ব্যাটিং-ঝড়ে পার্থক্য গড়ে দেন রিশাদ হোসেন।
স্কোর ॥ শ্রীলঙ্কা ২৩৫/১০ (৫০ ওভার; নিসাঙ্কা ১, আভিশকা ৪, মেন্ডিস ২৯, সামারাবিক্রমা ১৪, আসালাঙ্কা ৩৭, লিয়ানাগে ১০১*, ভেল্লালাগে ১, হাসারাঙ্গা ১১, থিকশানা ১৫, মাদুশান ৩, কুমারা ১; তাসকিন ৩/৪২, মুস্তাফিজ ২/৩৯, সৌম্য ১/১০, মিরাজ ২/৩৮, রিশাদ ১/৫১)
বাংলাদেশ ২৩৭/৬ (৪০.২ ওভার; এনামুল ১২, তানজিদ , শান্ত ১, হৃদয় ২২, মাহমুদুল্লাহ ১, মুশফিক ৩৭*, মিরাজ ২৫, রিশাদ ৪৮*; কুমারা ৪/৪৮, হাসারাঙ্গা ২/৬৪,)।
ফল ॥ বাংলাদেশ ৪ উইকেটে জয়ী।
ম্যাচসেরা ॥ রিশাদ (বাংলাদেশ)
সিরিজ ॥ ৩ ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ বাংলাদেশ ২-১ ব্যবধানে জয়ী। সিরিজসেরা ॥ শান্ত (বাংলাদেশ)

×