ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ০৬ মে ২০২৪, ২৩ বৈশাখ ১৪৩১

কাতারের আমিরের সফর

-

প্রকাশিত: ২০:৩১, ২৪ এপ্রিল ২০২৪

কাতারের আমিরের সফর

সম্পাদকীয়

বর্তমান বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে মধ্যপ্রাচ্যের প্রভাবশালী দেশ কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানির দুই দিনব্যাপী বাংলাদেশ সফরটি নানাদিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ। কেননা, ইসরাইল-হামাস যুদ্ধ পরবর্তী মধ্যপ্রাচ্যে এখন বিরাজ করছে অস্থিরতা, অনিশ্চয়তা ও টানাপোড়েন। সর্বশেষ, ইরান-ইসরাইলের মধ্যে হামলা-পাল্টা হামলা এতে যোগ করেছে নতুন আশঙ্কা। এক কথায় বলা চলে গোটা মধ্যপ্রাচ্য পরিস্থিতি বর্তমানে সংঘাতবহুল হয়ে উঠেছে। যে কোনো সময় এই যুদ্ধক্ষেত্র আরও বিস্তৃত হতে পারে, যা দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে পারে গোটা বিশ্বে।

এমনিতেই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ পরবর্তী সময়ে বিশ্বে বেড়েছে জ্বালানি তেলসহ নিত্যপণ্যের দাম। বৈশ্বিক সরবরাহ ব্যবস্থা হয়ে পড়েছে বিপর্যস্ত। পরবর্তীতে ইসরাইল-হামাস যুদ্ধে যা আরও সম্প্রসারিত ও দীর্ঘমেয়াদি হয়েছে। যুদ্ধাবস্থা আরও ছড়িয়ে পড়লে এর নেতিবাচক প্রভাব হবে আরও অনিশ্চিত ও সুদূরপ্রসারী। যার অনিবার্য শিকার হতে হবে বাংলাদেশকেও। কেননা, মধ্যপ্রাচ্য বাংলাদেশের অন্যতম শ্রমবাজার।

প্রবাসী আয়ের সিংহভাগই এসে থাকে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ থেকে। সে অবস্থায় মধ্যপ্রাচ্য পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত ও সংঘাতবহুল হলে এর অনিবার্য প্রভাব পড়বে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর শ্রমবাজারে। যুদ্ধের প্রভাবে যা সঙ্কুচিত হয়ে পড়তে পারে। 
কাতারের আমিরের ঢাকা সফরটি এক্ষেত্রে আশার আলো হয়ে দেখা দিতে পারে।

বর্তমানে কাতারে বৈধ-অবৈধ চার লক্ষাধিক বাংলাদেশী শ্রমজীবী রয়েছে। যাদের কষ্টার্জিত আয়ে পরিপুষ্ট হচ্ছে বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ। সে দেশে বাংলাদেশী শ্রমজীবীদের রয়েছে পরিশ্রমী ও সুশৃঙ্খল হিসেবে সুনাম। দেশটিতে আরও বাংলাদেশী শ্রমজীবী পাঠানোর সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। যে পাঁচটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হয়েছে তার একটি জনশক্তি বিষয়ক।

অন্য চারটি হলো- বন্দর পরিচালনা সংক্রান্ত, শিক্ষা ও বৈজ্ঞানিক গবেষণা, যুব ও ক্রীড়া ক্ষেত্রে সহযোগিতা এবং কূটনৈতিক প্রশিক্ষণ। উল্লেখ্য, কাতার বাংলাদেশের মাতারবাড়ির গভীর সমুদ্রবন্দর পরিচালনার বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। এ বিষয়ে চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত না নেওয়া হলেও বলতে হবে বিষয়টি ইতিবাচক। 
কাতারের আমিরের ঢাকা সফরকালে যে ৫টি চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে সেগুলো হলোÑ আয়ের ক্ষেত্রে দ্বৈত কর পরিহার ও কর ফাঁকি সংক্রান্ত, আইনি বিষয়ে সহযোগিতা, সাগর পথে পণ্য পরিবহন, উভয় দেশে পারস্পরিক বিনিয়োগ উন্নয়ন ও সুরক্ষা এবং যৌথ ব্যবসা পরিষদ গঠন। উল্লেখ করা আবশ্যক যে, কাতার প্রভূত তেল-গ্যাস সমৃদ্ধ মধ্যপ্রাচ্যের একটি ধনী ও উন্নত দেশ। দেশটি বাংলাদেশের নতুন অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগ করতে পারে। যার ফলে, বিদেশী বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানের পথ প্রশস্ত হবে।

বাংলাদেশ ও কাতারের সম্পর্ক পারস্পরিক শ্রদ্ধা, অভিন্ন মূল্যবোধ, অভিন্ন ধর্মীয় ভিত্তি ও সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যের ওপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত। ১৯৭৪ সালে ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত ওআইসি শীর্ষ সম্মেলনের পর ১৯৭৪ সালে ৪ মার্চ কাতার বাংলাদেশেকে স্বাধীন সর্বোভৌম রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। কাতার মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম প্রভাবশালী দেশ, যে দেশটি ইসরাইল-হামাস যুদ্ধে যুদ্ধবিরতির অন্যতম মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালন করছে। বাংলাদেশের রূপকল্প ২০৪১ এবং কাতারের রূপকল্প ২০৩০ বাস্তবায়নে একে অপরের গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন সহযোগী হিসেবে কাজ করবে বলে দুই দেশের জনগণের প্রত্যাশা।

×