ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ০৪ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১

ধরিত্রীর সুরক্ষা

-

প্রকাশিত: ২০:৩০, ২৩ এপ্রিল ২০২৪

ধরিত্রীর সুরক্ষা

সম্পাদকীয়

২২ এপ্রিল বিশ্বজুড়ে পালিত হয়েছে বিশ্ব ধরিত্রী দিবস। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য হলো ‘এই গ্রহ বনাম মাইক্রোপ্লাস্টিক।’ আমাদের বাসভূমি পৃথিবীর প্রতিপক্ষ হিসেবে দেখা হচ্ছে মাইক্রোপ্লাস্টিককে। প্লাস্টিকের ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র কণাই হলো মাইক্রোপ্লাস্টিক, যা শুধু মানুষ নয়, সকল প্রাণের জন্যই ঝুঁকিপূর্ণ। বাংলাদেশ ও ভারতের গঙ্গা অববাহিকা অঞ্চলের পানি, পলি এবং বাতাসে মাইক্রোপ্লাস্টিকের আশঙ্কাজনক উপস্থিতি দেখা গেছে। দুই দেশের বিজ্ঞানীদের সম্মিলিত এক গবেষণায় এ চিত্র উঠে এসেছে।

এই প্রথমবারের মতো গঙ্গা অববাহিকার মতো এত বড় একটি নদীব্যবস্থার পানি, পলি এবং বাতাসে মাইক্রোপ্লাস্টিকের কণার হিসাব করা হলো। জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব সামলাতে ব্যস্ত বাংলাদেশ। জলবায়ু পরিবর্তন ত্বরান্বিত করছে এই মাইক্রোপ্লাস্টিক, পৃথক আরেক গবেষণায় এমন চিত্রও পাওয়া গেছে। পাঁচ মিলিমিটারের চেয়ে ছোট প্লাস্টিকের কণাকে মাইক্রোপ্লাস্টিক বলা হয়।

গবেষণায় দেখা যায়, পানি ও পলির সঙ্গে মিলে মাইক্রোপ্লাস্টিকের কণা মিশছে বঙ্গোপসাগরে। বিপুল পরিমাণ মাইক্রোপ্লাস্টিক পলিতে জমে যাচ্ছে। গবেষণার উল্লেখযোগ্য দিক হলো, জনসংখ্যার সঙ্গে মাইক্রোপ্লাস্টিকের সম্পর্ক দেখানো হয়েছে। দেখা গেছে, যেখানে জনঘনত্ব বেশি, সেখানে পানি ও বায়ুতে, বিশেষ করে মাইক্রোপ্লাস্টিকের উপস্থিতি বেশি।
বিশ্ব পরিবেশ দিবস এলে প্লাস্টিক দূষণের কথা জোরেশোরে উচ্চারিত হয়। তারপরই সব ভুলে যাওয়া। একবিন্দু পরিমাণ দূষণ কমে না। প্লাস্টিকের ব্যবহারে আসে না কোনো পরিবর্তন। পলিথিনের ব্যবহার নিষিদ্ধ করে আইন করা হলেও কার্যকর প্রয়োগের অভাবে প্লাস্টিক থেকে পরিবেশদূষণ শুধু অব্যাহতই নয়, বরং উদ্বেগজনকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।

প্লাস্টিক বর্জ্যসহ ব্যাপকভাবে বর্জ্য ফেলার কারণে বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, বালু, শীতলক্ষ্যা ও কর্ণফুলী নদী বাংলাদেশের অন্যতম দূষিত নদীতে পরিণত হয়েছে। প্লাস্টিক দূষণের কারণে আমাদের বাস্তুতন্ত্র ও ভূমির ব্যাপক দূষণ ঘটায় গাছপালা ও অন্যান্য প্রাণীর অস্তিত্ব হুমকির সম্মুখীন। এছাড়াও জৈব রাসায়নিক সারে প্রচুর পরিমাণে মাইক্রোপ্লাস্টিক থাকায়, তা কৃষিকাজে ব্যবহারের ফলে স্থায়ীভাবে মাটি দূষিত হচ্ছে। নদীপাড়ের প্লাস্টিক মাইক্রোপ্লাস্টিকে রূপান্তরিত হয়ে নদীতে মিশতে পারে। তা হতে পারে মাছের খাদ্য। সেই মাছ মানুষ খেলে তাদের শরীরেও প্রবেশ করতে পারে প্লাস্টিক। ভয়ংকর কথাই বটে।
আরেকটি বিষয়ও লক্ষণীয়। প্লাস্টিক পোড়ানোর কারণে তাপমাত্রা বেড়ে যাচ্ছে। বাড়ছে বায়ুদূষণ। দেশে প্রতিদিন প্রায় চার হাজার টন প্লাস্টিক বর্জ্য পোড়ানো হয়, যা ব্যাপকভাবে বায়ুদূষণ ঘটাচ্ছে। ধরিত্রী দিবসে আরও জানা গেল যে, ঢাকার বাতাসে উত্তাপ বাড়াচ্ছে পাঁচ ধরনের ক্ষতিকর গ্যাস। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও যুক্তরাষ্ট্রের জর্জিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক দীর্ঘমেয়াদি সমীক্ষা চালিয়ে দেখেছেন, ঢাকার বাতাসে পাঁচ ধরনের গ্যাস জমা হচ্ছে, যা শহরবাসীর নানা রোগবালাই এবং সমস্যা বাড়ানোর পাশাপাশি বাতাসকে আরও উত্তপ্ত করে তুলছে।

প্লাস্টিক দূষণ বাঁচাতে কেবল সচেতন হলেই চলবে না, বৈশ্বিকভাবেই এই সচেতনতা গড়ে তোলাও জরুরি। তা না হলে এই দূষণে মানবজাতিরই অনিবার্য ক্ষতি হবে। ধরিত্রী বাঁচাতে হলে বিশ^নেতাদের একসঙ্গে বসে সমন্বিত সিদ্ধান্ত গ্রহণ বাঞ্ছনীয়।

×