ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ০৪ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১

নারীর প্রতি সহিংসতা

-

প্রকাশিত: ২০:৩২, ২০ এপ্রিল ২০২৪

নারীর প্রতি সহিংসতা

সম্পাদকীয়

দেশে নানা পেশায় যেমন নারীর অংশগ্রহণ বেড়েছে. তেমনি তার যৌন হয়রানির অভিযোগ করার সুযোগও সহজ হয়েছে। এটি সামাজিক অগ্রগতি। একটি লার্নিং শেয়ারিং অনুষ্ঠানে এমন তথ্য জানিয়েছিল ইউএন উইমেন বাংলাদেশ। লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা প্রতিরোধ (কমব্যাটিং জেন্ডার-বেজড ভায়োলেন্স-সিজিবিভি) কানাডা সরকারের অর্থায়নে পরিচালিত একটি প্রকল্প। এটির মাধ্যমে এসব তথ্য উঠে আসে।

প্রকল্পটির লক্ষ্য ছিল দেশে নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে কার্যকর কৌশল নির্ধারণ করা। তবে দুঃখজনক বার্তাটি হলো, বিশ্বের এক-তৃতীয়াংশ নারী এখনো যৌন সহিংসতার শিকার। এসব নারী জীবনে কমপক্ষে একবার হলেও একান্ত সঙ্গী অথবা সঙ্গী নন এমন কারও কাছ থেকে শারীরিক বা যৌন সহিংসতার শিকার হয়েছেন। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে কমপক্ষে ৫০% নারী তাদের পুরুষ সঙ্গীর দ্বারা শারীরিক বা যৌন সহিংসতার শিকার হয়েছেন। 
গণপরিবহনে নারীর ওপর নানা উপায়ে যৌন নিপীড়ন চলে, এটি আমরা কমবেশি জানলেও অনেকটা নীরবতা অবলম্বন করে থাকি। বাস-মিনিবাসে প্রতিবছরই ধর্ষণের শিকার হচ্ছেন নারীরা, এটি একটি অশুভ বাস্তবতা। সতর্ক ও সচেতন না হলে এটি বিষফোঁড়ার মতো বিস্তার লাভ করারই আশঙ্কা। ঢাকা শহরে গণপরিবহন ব্যবহার করেন এমন নারী যাত্রীদের ওপর একটি সমীক্ষায় যেসব চিত্র উঠে এসেছে, তা একদিকে যেমন সমাজের জন্য অশনি সংকেত, অন্যদিকে সমাজের অর্ধেক অংশ নারীর জন্য অত্যন্ত অবমাননারই প্রতিচ্ছবি।

এখানে গণপরিবহন বলতে শুধু বাস-মিনিবাসের যাত্রী বোঝানো হয়নি, একই সঙ্গে ট্রেন, লেগুনা, রাইড শেয়ারিংকেও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। গণপরিবহনে ৬৩ শতাংশ নারীই হয়রানির শিকার হন। যৌন হয়রানির শিকার হন ৪৭ শতাংশ নারী। এর অর্থ হলো দুজন নারী যাত্রীর মধ্যে একজনই হেনস্তা হচ্ছেন। এসব ঘটনার ক্ষেত্রে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে মাত্র ০.৫ শতাংশ। কারা করেন যৌন হেনস্তা? সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে, মধ্যবয়সী পুরুষ যাত্রীরাই এই অপকর্মে সবচেয়ে বেশি এগিয়ে। অপেক্ষাকৃত অল্প বয়সী তরুণীদের ওপর এই যৌন হেনস্তা চলে থাকে। 
নারী নির্যাতন প্রতিরোধ দিবস আসে-যায়, নারীর ওপর সহিংস যৌন নিপীড়নের মাত্রা কমে না। বরং সাম্প্রতিককালে কন্যাশিশুদের ওপর যৌন নির্যাতনের মাত্রা বেড়েই চলেছে। বলাবাহুল্য, সব অপকর্ম গণমাধ্যমে আসে না। এখন সময় এসেছে শুধু পরিবার থেকেই নয়, শিক্ষালয় থেকেও যৌন অপরাধ বিষয়ে শিক্ষার্থীদের সচেতন করে তোলার। অল্প বয়সী শিক্ষার্থী ছেলেমেয়েদের ভেতর স্বাভাবিক সুন্দর সম্পর্ক যাতে গড়ে তোলা যায়, সে জন্য সমাজের ভূমিকা রয়েছে।

সন্তানদের অর্থবহ ভবিষ্যৎ গড়ে তোলার লক্ষ্যে আমাদের অবশ্যই আরও সতর্ক, সচেতন, দায়িত্ববান ও বিবেচক হতে হবে। মানসিকতার পরিবর্তন না হওয়া পর্যন্ত পুরুষের হাতে নারী নিগ্রহ চলতেই থাকবে। তাই আইনের কঠোর প্রয়োগ ও সামাজিক আন্দোলনের মাধ্যমেই কেবল সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন আসতে পারে। কমতে পারে নারীর প্রতি নিপীড়নসহ যৌন সহিংসতা।

×