সম্পাদকীয়
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর নবনির্বাচিত সরকারের আমলে ভুটানের রাজা জিগমে খেসার নামগিয়েল ওয়াংচুকের সস্ত্রীক চারদিনের প্রথম বাংলাদেশ সফরটি নানা দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ। ২৬ মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবসে জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদনসহ এদিন বঙ্গভবনে রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে ব্যস্ত সময় অতিবাহিত করেন ভুটানের রাজা। এই সফরে বাংলাদেশের সঙ্গে ভুটানের ৩টি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হয়েছে।
এগুলো হলো- কুড়িগ্রামে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা, সে দেশের রাজধানী থিম্পুতে বাংলাদেশের সহযোগিতায় একটি বিশেষায়িত বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিট স্থাপন এবং ভোক্তা অধিকার বিষয়ে প্রযুক্তিগত সহায়তা প্রদান। এর বাইরে দুই দেশের মধ্যে সাংস্কৃতিক বিনিময় সংক্রান্ত আরেকটি সমঝোতা স্মারক নবায়ন করা হয়।
শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট পোড়া ও দগ্ধ রোগীর চিকিৎসায় একটি আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান।
ভুটানের রাজা এটি পরিদর্শন করেন এবং সে দেশে এ রকম একটি হাসপাতাল প্রতিষ্ঠায় সহযোগিতা চেয়েছেন বাংলাদেশের। স্বাস্থ্যমন্ত্রী, যিনি নিজে এ বিষয়ে একজন পথিকৃৎ চিকিৎসক, ডা. সামন্ত লাল সেন সর্বতোভাবে সাহায্য-সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। সে দেশের চিকিৎসক-নার্সদের দুই বছর প্রশিক্ষণ কর্মসূচিও সম্পন্ন হবে বাংলাদেশে। তবে সর্বাধিক যেটি গুরুত্বপূর্ণ তা হলো- উত্তরবঙ্গে অনগ্রসর জেলা কুড়িগ্রামে ভুটানিজ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা। বাংলাদেশ ও ভুটান সরকারের যৌথ উদ্যোগে সদর উপজেলার ধরলা নদীর তীরে মাধবরাম গ্রামে গড়ে উঠতে যাচ্ছে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল।
ইতোমধ্যে সরকারি খাস জমিও অধিগ্রহণ করা হয়েছে, যেটি ইতিবাচক। এর মাধ্যমে ভুটানের বিনিয়োগসহ দুই দেশের অর্থনৈতিক সম্পর্ক আরও সুদৃঢ় হবে এবং স্থানীয়ভাবে সৃষ্টি হবে কর্মসংস্থান। দুই দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও বাণিজ্যিক বিকাশ হবে ত্বরান্বিত। কুড়িগ্রাম পরিণত হবে আন্তর্জাতিক স্থল বাণিজ্যের অঞ্চল হিসেবে। এ স্থান পরিদর্শন শেষে এদিনই ভুটানের রাজা সপরিবারে ভুরুঙ্গামারীর সোনাহাট স্থলবন্দর দিয়ে ভারতের অসম সীমান্ত পথে ফিরে গেছেন স্বদেশে। উল্লেখ্য, সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশকে সর্বপ্রথম স্বীকৃতি দেয় ভুটান।
বাংলাদেশের সঙ্গে ভুটানের ২০২০ সালে প্রথম অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তি (পিটিএ) স্বাক্ষর হওয়ার বিষয়টি নিঃসন্দেহে ইতিবাচক এবং তা দুই দেশের জন্যই। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে থিম্পুতে অবস্থানরত ভুটানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী লোটে শেরিংয়ের উপস্থিতিতে ভার্চুয়াল মাধ্যমে দুই দেশের বাণিজ্যমন্ত্রীর মধ্যে স্বাক্ষরিত হয় চুক্তিটি। চুক্তির আওতায় বাংলাদেশের তৈরি পোশাক, প্রক্রিয়াজাত কৃষিপণ্য, ইলেক্ট্রনিকসহ ১০০টি পণ্য শুল্কমুক্ত সুবিধা পাবে ভুটানে।
অন্যদিকে ভুটান থেকে পাথর, বোল্ডার, ফলমূলসহ ৩৪টি পণ্যে একই সুবিধা পাবে বাংলাদেশ। আগামীতে এই তালিকায় আরও পণ্য সংযুক্ত হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। ভুটানের সঙ্গে যে পিটিএ স্বাক্ষর হয়েছে, তা একটি অর্থনৈতিক অর্জন। সেখানে জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের যেমন বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে, তেমনি রয়েছে ওষুধশিল্পে। বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা এসব ক্ষেত্রে ভুটানে নিজস্ব অথবা যৌথ উদ্যোগে বিনিয়োগ করে শিল্পকারখানা গড়ে তুলতে পারেন। আর এখানেই নিহিত রয়েছে আগামীর অমিত সম্ভাবনা।