ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ০৪ মে ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১

প্রসঙ্গ ইসলাম ॥ ইসলামে শহীদের মর্যাদা

প্রকাশিত: ২০:৫৩, ২১ আগস্ট ২০২০

প্রসঙ্গ ইসলাম ॥ ইসলামে শহীদের মর্যাদা

কুরআন মজীদে ইরশাদ হয়েছে : নিশ্চয়ই আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সঙ্গে আছেন। যাঁরা আল্লাহর রাস্তায় কতল হন তাদের তোমরা মৃত বল না। বরং তাঁরা জীবিত কিন্তু তোমরা বুঝে উঠতে পার না। অন্য একটি আয়াতে আছে : শহীদগণ কবরে জীবিত থাকে এবং তাদের কবরে জীবিকা প্রদান করা হয়। হাদিস শরীফে আছে : হাশরের ময়দানে শহীদদের দেখলেই চেনা যাবে। তাঁরা রক্তাক্ত অবস্থায় থাকবে এবং তাঁদের শরীর দিয়ে সুগন্ধ বের হতে থাকবে। তাঁদের বিচারের সম্মুখীন করা হবে না। বিনা হিসেবে তাঁরা বেহেশতে গমন করবে। শহীদদের মর্যাদা বলে শেষ করা যাবে না। ইসলামের ইতিহাস পর্যালোচনা করে দেখা যায় যে, ইসলামে চার খলিফার মধ্যে তিন খলিফাই শহীদ হয়েছিলেন। ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা হযরত উমর (রা) দশ বছর খিলাফত শেষে আবুলুলু নামে এক কাঠমিস্ত্রির বাটালের আঘাতে শহীদ হন। ইসলামের তৃতীয় খলিফা হযরত উসমান (রা) ১২ বছর খিলাফত পরিচালনা করেন। সংঘবদ্ধ হাজার হাজার বিদ্রোহী তাঁর গৃহ ঘেরাও করে তাকে হত্যা করে। এই হত্যাকা- ঠেকাতে গিয়ে তার স্ত্রী হযরত নায়লা তাঁর একটি আঙ্গুল হারান। সামের চতুর্থ খলিফা হযরত আলী (রা)-কে একদিন সকাল বেলায় অস্ত্রের আঘাতে আহত করে। কয়েকদিন পর তিনি নিহত হন। এই হত্যাকা- খারেযী সম্প্রদায় পরিচালনা করেন। মযলুম নামক এক পাষ- আততায়ী হযরত আলীকে তলোয়ার দ্বারা আঘাত করে হত্যা করে। পৃথিবীর ইতিহাসের সর্বাধিক মর্মান্তিক ঘটনা ৬৮০ খ্রিস্টাব্দের ১০ মহরম অর্থাৎ আশুরার দিনে ইরাকের ফুরাত নদীর পূর্ব তীরে ইয়াজিদ বাহিনী হযরত মুহম্মদ (স)-এর দ্বিতীয় নাতি ইমাম হোসাইন আল্লায়হিস সাল্লামকে নির্মমভাবে হত্যা করে। কারবালার প্রান্তরে সংঘটিত ইতিহাসের সর্বাধিক মর্মান্তিক ঘটনা। মাওলানা মুহাম্মদ আলী জওহর লেখেছেন : কতলে হোসাইন আসল্মে র্মগে ইয়াজিদ হত্যা/ইসলামে জিন্দা হোতা হ্যা হায় কারবালা কে বাদ। হোসাইনের হত্যাকা- প্রকৃতপক্ষে মৃত্যু এনেছে ইয়াজিদের/ইসলাম জীবিত হয় প্রত্যেক কারবালার পরে। আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিখ্যাত ‘মহররম’ কবিতায় লিখেছেন : ফিরে এলো আজ সেই মহররম মাহিনা/ত্যাগ চাই, মর্সিয়া ক্রন্দন চাহিনা। শহীদদের মর্যাদা অনেক। সত্যকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য, ন্যায়কে সমুন্নত রাখার জন্য মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা করার জন্য যারা নিহত হন তাঁরাই শহীদ। কুরআন এবং হাদিস শরীফে শহীদানের মর্যাদা সম্পর্কে বহু বর্ণনা রয়েছে। বলা হয়েছে শহীদগণ সরাসরি জান্নাতে যাবে। তাঁরা মুক্ত বিহঙ্গ হয়ে জান্নাতে উড়তে থাকবে। তাঁদের সেবা করার জন্য অসংখ্য হুর গিলমান থাকবে। বাংলা ভাষাকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য আমাদের দেশে অনেক দেশপ্রেমিক নিজের জান বিলিয়ে দিয়েছেন। প্রাণ দিয়ে তারা অমরত্ব লাভ করেছেন। আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে তিন মিলিয়ন মানুষ নিহত হয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে সুপ্রতিষ্ঠিত করেছে। শহীদরাই আল্লাহর প্রিয় বান্দা। লেখক : পীর সাহেব দ্বারিয়াপুর শরীফ
×