ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ০৪ মে ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১

হৃদরোগী নিয়েও বাণিজ্য

প্রকাশিত: ০৩:৩৭, ৩০ নভেম্বর ২০১৬

হৃদরোগী নিয়েও বাণিজ্য

চিকিৎসকদের কাছ থেকে মানুষ অতিমুনাফার পরিবর্তে মানবসেবার মানসিকতাই আশা করে। সমাজে এমন বিবেকসম্পন্ন চিকিৎসকের দৃষ্টান্তও রয়েছে যাঁরা রোগীর অর্থনৈতিক অবস্থার কথা বিবেচনা করেই ব্যবস্থাপত্র দিয়ে থাকেন। কোম্পানির মুনাফা বা নিজের কমিশন প্রাপ্তির দিকটি বিবেচনা না করে রোগীর সামর্থ্যরে বিষয়টি আমলে নেন এবং সেভাবে স্বল্পমূল্যের ন্যূনতম অনিবার্য ওষুধ ও টেস্টের কথা প্রেসক্রিপশনে লেখেন। ভুলে গেলে চলবে না রোগগ্রস্ত বিপুল সংখ্যক মানুষ নিজেদের হৃদয়ে তাদেরকে উচ্চ স্থান দিয়ে থাকেন। ‘ওপরে খোদা নিচে ডাক্তার’- এমন মনোভাব বহু রোগীর। দুঃখজনক হলো হৃদরোগীদের নিয়ে বিভিন্ন সময়ে বাণিজ্যের অভিযোগ উঠে থাকে। সম্প্রতি রিং বাণিজ্যের শিকার হয়ে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে (এনআইসিভিডি) চিকিৎসাধীন এক মহিলা রোগীর মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। প্রতিষ্ঠানটির জনৈক সহযোগী অধ্যাপক ও তার মাধ্যমে বাইরে থেকে রিং সরবরাহকারী চক্রের সদস্যদের দায়ী করেছেন মৃত রোগীর স্বজনরা। একশ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ী ও চিকিৎসকের রিং পরানো নিয়ে কমিশন বাণিজ্য করার বিষয়টি দীর্ঘদিনের আলোচিত বিষয়। গত বছর জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও দেশের যে কোন হাসপাতালে হৃদরোগীর দেহে মেয়াদোত্তীর্ণ রিং প্রতিস্থাপনে নিষেধাজ্ঞা দেন হাইকোর্ট। জনকণ্ঠের রিপোর্টে উঠে এসেছে যে হাসপাতালের চিকিৎসক ও রিং সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে অলিখিত লেনদেন থাকে। রিংয়ের গুণাগুণ বিষয়ে রোগী ও তাদের লোকজনের জানার কোন সুযোগ থাকে না। রিং পরানো নিয়ে কমিশন বাণিজ্যের পসরা সাজিয়ে বসেছেন একশ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ী ও চিকিৎসক। চিকিৎসা এবং শিক্ষকতা- এ দুটি পেশাকে এখনও সমাজ উচ্চ মর্যাদা দিয়ে থাকে। চিকিৎসক ও শিক্ষকরা বিশেষ শ্রদ্ধা ও ভরসার পাত্র। কিন্তু শিক্ষাদান ও চিকিৎসা সেবা প্রদান দুটি মহান আদর্শ হিসেবে ধরে রাখার সংস্কৃতি সমাজে আজ কতটুকু বিদ্যমান? বেশির ভাগ চিকিৎসকের কাছে বর্তমানে মানবসেবার তুলনায় অর্থবিত্ত উপার্জনই অধিক গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত এটা সাধারণভাবেই প্রতিষ্ঠিত। তবে শুধু চিকিৎসকদের অভিযুক্ত করলে অন্যায় হবে, পুরো চিকিৎসা ব্যবস্থাপনাকেই দুষতে হবে। এটি এক বিরাট চক্র বা চেইন। একটির সঙ্গে অন্যটি অঙ্গাঙ্গিভাবে যুক্ত। চিকিৎসক ব্যবস্থাপত্র লিখে দিচ্ছেন। ডাক্তাররা নির্দিষ্ট করে দেন কোন্ প্যাথলজিতে রোগী টেস্টগুলো করাবেন। সেইসঙ্গে কোন্ কোম্পানির ওষুধ তিনি লিখবেন, সেটাও নির্দিষ্ট থাকে। এখানে বলির পাঁঠা হলেন রোগী। ডাক্তার এখানে অন্যায্য বৃত্তের কেন্দ্র। তাকে ঘিরে আছে প্যাথলজি ল্যাব, ওষুধ কোম্পানি এবং হাসপাতাল ক্লিনিক। পদে পদে কমিশন। এই কমিশন বাণিজ্যের চাহিদা অনুযায়ী বাড়তে থাকে রোগীর ব্যয়ের অঙ্ক। যা মেটাতে নাভিশ্বাস উঠে যায়। হার্টের চিকিৎসা অত্যন্ত ব্যয়বহুল। মধ্যবিত্ত পরিবারের সদস্যদের পক্ষে ওই ব্যয়ভার মেটানো কঠিন। আমাদের প্রত্যাশা, হার্টের রোগীদের নিয়ে অনৈতিক বাণিজ্য বন্ধ হোক। এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের অবশ্যই আইনের আওতায় নিয়ে আসতে হবে।
×