ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

রমজানে দাম বাড়াতে সক্রিয় শক্তিশালী সিন্ডিকেট

জিম্মি পণ্য বাজার

এম শাহজাহান

প্রকাশিত: ০১:৩৩, ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

জিম্মি পণ্য বাজার

.

আসন্ন রমজানে ভোগ্যপণ্যের দাম বাড়িয়ে বাজার অস্থিরতায় এবার আটঘাট বেঁধে মাঠে নেমেছে অসাধু ব্যবসায়ীদের ‘শক্তিশালী সিন্ডিকেট’। দেশের ভোগ্য ও নিত্যপণ্যের বাজার মূলত জিম্মি হয়ে পড়ছে ৩৬ কোম্পানি ও প্রতিষ্ঠানের কাছে। রমজানে বেশি ব্যবহার হবে এমন পাঁচ পণ্য- ভোজ্যতেল, চিনি, ডাল, খেজুর ও ছোলা আমদানি করেছে দেশের শীর্ষ ভোগ্যপণ্যের আমদানিকারকরা। এই পণ্যগুলো নিয়ে শুরু হয়েছে কারসাজি।

ডলার সংকটের এই সময়েও সরকারি সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা নিয়ে প্রয়োজনীয় পণ্যের ‘আমদানি স্বল্পতা’ দেখিয়েছে দেশের বড় কোম্পানিগুলো। সেই তুলনায় অপেক্ষাকৃত ছোট ও মাঝারি মূলধনের ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানগুলো পণ্য আমদানি করতে পারছে না। কারণ এ সব প্রতিষ্ঠান ঋণপত্র (এলসি) খুলতে চাহিদামতো ডলার পায়নি। আশঙ্কা করা হচ্ছে, ভোগ্যপণ্যের শীর্ষ কোম্পানিগুলো এবার বাজার নিয়ন্ত্রণ করবে। বিশ্ব বাজারে কমলেও ইতোমধ্যে অভ্যন্তরীণ বাজারে চিনির দাম বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে ইচ্ছেমতো। রমজান মাস সামনে রেখে অন্যান্য পণ্যের দাম বাড়ানোর অপকৌশল নির্ধারণে ব্যস্ত অসাধু ব্যবসায়ীরা।
ডলার সংকটে সবচেয়ে বেশি বেকায়দায় পড়েছেন ছোট ও মাঝারি মানের আমদানিকারকরা। তারা প্রয়োজনীয় পণ্যের এলসি খুলতে পারছেন না। ঢাকা ও চট্টগ্রামকেন্দ্রিক কয়েক হাজার আমদানিকারক রমজানের সময় বিভিন্ন রকমের নিত্য ও ভোগ্যপণ্যের আমদানি বাড়িয়ে থাকেন। গত বছরের তুলনায় এবার তাদের আমদানি অর্ধেকেরও নিচে নেমে এসেছে। আবার কোনো কোনো ব্যবসায়ী ডলার সংকটের কারণে আমদানির এলসিই খুলতে পারেননি। ঢাকার মৌলভী বাজার ও চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জের আমদানিকারক পাইকারি ব্যবসায়ীরা সবচেয়ে বেশি বেকায়দায় রয়েছেন। এ অবস্থায় ব্যবসায় চলে যাচ্ছে কিছু বড় গ্রুপের হাতে। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, ইতোমধ্যে চীন, ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা ও অস্ট্রেলিয়াসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশ থেকে ভোগ্যপণ্য নিয়ে জাহাজগুলো চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরে আসতে শুরু করেছে। এ ছাড়া ভারত থেকে স্থলবন্দর দিয়ে পণ্য প্রবেশ করছে দেশে।
সম্প্রতি বেশ কয়েকটি জাহাজ ব্রাজিল থেকে চিনি নিয়ে পৌঁছেছে চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরে। এ ছাড়া এ সব গ্রুপের অন্যান্য পণ্যের আমদানিও বেশ ভালো। রমজানের আগেই বেশিরভাগ আমদানিকৃত ভোগ্যপণ্য দেশে নিয়ে আসার প্রস্তুতি রয়েছে তাদের।

তবে কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে ডলার সংকটের কথা বলা হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে ভোগ্যপণ্যের অন্যতম জায়ান্ট সিটি গ্রুপের নির্বাহী পরিচালক বিশ্বজিৎ সাহা সম্প্রতি জনকণ্ঠকে বলেন, রমজানের চাহিদা অনুযায়ী পণ্যের সরবরাহ ঠিক রাখতে চলতি জানুয়ারি মাসে ভোজ্যতেল, চিনি ও মসুর ডালের মতো অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের আমদানির জন্য ৩৯০ মিলিয়ন ডলারের এলসি ও খোলার জন্য তারা বিভিন্ন ব্যাংকের দ্বারস্থ হলেও ডলার সংকটের কারণে এখনো তা খুলতে পারেননি। একই অবস্থা আরেক শীর্ষস্থানীয় ভোগ্যপণ্য সরবরাহকারী টিকে গ্রুপেরও। গ্রুপটির পরিচালক মো. শফিউল আতহার তাসলিম জানান, এলসি খোলার ক্ষেত্রে বলার মতো কোনো উন্নতি হয়নি। চাহিদা অনুযায়ী পণ্য আমদানির এলসি খুলতে আমরাও চেষ্টা করছি, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ও চেষ্টা করে যাচ্ছে। আশা করছি, ভালো কিছু হবে। এদিকে রমজানে আমদানি করা ভোগ্যপণ্যের দাম গতবারের চেয়ে ৩০ শতাংশ বাড়বে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে ট্যারিফ কমিশন। অন্যদিকে, এলসি স্বাভাবিক না হলে রমজান মাসে আদা-রসুনের বাজার আরও অস্থির হওয়ার আশঙ্কা করছেন শ্যামবাজার ব্যবসায়ী সমিতির নেতারা।

মৌলভী বাজারের ব্যবসায়ীরাও এলসি সহজ করার দাবি জানিয়েছে সরকারের কাছে। ভোগ্য ও নিত্যপণ্যের মজুত, অতিমুনাফা এবং বাজার অস্থিরতার জন্য দেশের শীর্ষ ৩৬টি কোম্পানি ও তাদের প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকরা (এমডি) সরাসরি জড়িত। তাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে মামলা দায়ের করেছে বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশন। রোজা সামনে রেখে মামলাগুলো সচল করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া অভিযুক্ত ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। শীঘ্রই অভিযান পরিচালনা করতে পারে সরকারি সংস্থাগুলো। এদিকে, কোনো এক অজানা কারণে এ সব মামলার শুনানি দীর্ঘদিন স্থগিত রাখা হলেও প্রতিষ্ঠানগুলোর মালিকরা ব্যবসা ও বাণিজ্যিক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। আশঙ্কা করা হচ্ছে, আসন্ন রমজানে ভোগ্যপণ্যের কৃত্রিম সংকট তৈরি করে বাজার থেকে অতিরিক্ত মুনাফা করা হতে পারে। ইতোমধ্যে চিনির দাম বাড়িয়ে দেওয়ায় সেই সন্দেহ আরও জোরদার হয়েছে। এদিকে, প্রতিযোগিতা কমিশন তাদের নিজস্ব আইনে ইতোমধ্যে রেকর্ড সংখ্যক মামলা দায়ের করেছে। সব মিলিয়ে এ পর্যন্ত ৪৪ মামলায় ৩৬ ব্যবসায়ী ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযোগ উত্থাপন করা হয়েছে।  এ সব কোম্পানি ও ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কমিশনের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ, তারা বাজারে চাল, আটা, ময়দা, ডিম, ব্রয়লার মুরগি ও টয়লেট্রিজ পণ্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি ও কৃত্রিম সংকটের মাধ্যমে অস্থিরতা তৈরি করেছে। রোজা সামনে রেখে সরকারি গোয়েন্দা সংস্থার নজরদারিতে রয়েছেন তারা। তবে ক্ষমতা ও অর্থের জোর এত বেশি যে, এরা মোটেও মামলায় বিচলিত নন বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো।
বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনের একটি দায়িত্বশীল সূত্র জনকণ্ঠকে জানিয়েছে, দ্রব্যমূল্য বাড়িয়ে বাজারে অস্থিরতা তৈরিতে ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে। বেশিরভাগ অভিযোগ ইতোমধ্যে প্রমাণিত। এ কারণে মামলা করা হয়েছে এবং শুনানি শুরু করা হয়েছিল। দেশের মানুষকে কষ্ট দিয়ে যারা অতিরিক্ত মুনাফা করেছেন, তাদের বিরুদ্ধে প্রচলিত আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে কমিশন। এ ব্যাপারে কাউকে ছাড় দেওয়ার সুযোগ নেই। এ প্রসঙ্গে কমিশনের চেয়ারম্যান মো. মফিজুল ইসলাম সম্প্রতি জনকণ্ঠকে জানিয়েছেন, প্রতিযোগিতা কমিশন আইন-২০১২তে অসাধু সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের শাস্তিÍ নিশ্চিত করা হয়েছে। এবার যে ৪৪টি মামলা করা হয়েছে, তার শুনানি শুরু করা হয়েছে। আশা করছি, শুনানি শেষে কমিশনের রায় মেনে নেবেন ব্যবসায়ীরা। তিনি জানান, আইন অবাধ্যে ফৌজদারি মামলা করবে কমিশন। এদিকে, দ্রব্যমূল্য বাড়ায় কষ্টে আছেন সাধারণ মানুষ। দেশে এখন রেকর্ড দামে বিক্রি হচ্ছে ১৭টি অত্যাবশ্যকীয় ভোগ্যপণ্য। নিত্যপণ্যের দাম এত বেড়েছে যে, চাল কিনলে ফুরিয়ে যাচ্ছে লবণের পয়সা।
দেশের ৩৬ প্রতিষ্ঠানের কাছে ভোক্তারা জিম্মি ॥ ভোগ্য ও নিত্যপণ্যের সঙ্গে জড়িত দেশের শীর্ষ ৩৬ কোম্পানি ও প্রতিষ্ঠানের কাছে জিম্মি ভোক্তা সমাজ। ইতোমধ্যে এ সব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ৪৪টি মামলা হয়েছে। রমজান সামনে রেখে নজরদারি বাড়াবে প্রতিযোগিতা কমিশন। কমিশনের দেওয়া তথ্যানুযায়ীÑ চাল, আটা, ময়দা, ডিম, ফার্মের মুরগি, সাবান, সুগন্ধী সাবান, গুঁড়া সাবানসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় বিভিন্ন পণ্যের বাজার অস্থিতিশীল করার অভিযোগে দেশের শীর্ষ ৩৬ কোম্পানি এবং এগুলোর চেয়ারম্যান ও এমডির বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
ডলার সংকটে ঋণপত্র বা এলসি খোলা কমেছে ॥ আগামী মার্চ মাস থেকে রোজা শুরু হচ্ছে। এ কারণে রোজার এক সপ্তাহ আগে বাজারে পণ্য সরবরাহ করতে হলে ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহের মধ্যেই এলসি খোলা জরুরি। এলসি খোলার পরও বিভিন্ন পণ্য দেশে আসতে ১৫ থেকে ৩০ দিন সময় লাগে। পাম তেল আমদানির পর বাজারজাত করতে প্রায় ২০ দিন এবং ক্রুড সয়াবিন তেল পরিশোধন করে বাজারজাত করতে ৪৫ থেকে ৬০ দিন সময় লাগে। অপরিশোধিত চিনি আমদানির পর পরিশোধন  শেষে বাজারজাত করতেও প্রায় দুই মাস সময় লাগে। রমজানে ভোজ্যতেল, চিনি, ছোলা, পেঁয়াজ, খেজুর, ডালসহ কয়েকটি নিত্যপণ্যের চাহিদা দ্বিগুণ হয়ে যায়। তবে এবার ডলার সংকটের কারণে আমদানিনির্ভর চিনি ও ছোলাসহ কিছু পণ্যের এলসি খোলা কমে গেছে বলে জানা যায়। তবে ডিসেম্বরে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৫০ শতাংশ বেশি খেজুর আমদানির এলসি খোলা হয়েছে বলে জানান কর্মকর্তারা।

তা ছাড়া বাজারে দেশি পেঁয়াজের পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকায় রোজায় এর সংকট হওয়ার কোনো আশঙ্কা নেই বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। গত ডিসেম্বরে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ক্রুড সয়াবিনের এলসি খোলার পরিমাণ আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় অর্ধেকে নেমে গেছে। পরিশোধিত পাম তেলের এলসি খোলার হার আগের বছরের একই সময়ের কাছাকাছি হলেও গত ডিসেম্বরে পরিশোধিত সয়াবিন ও ক্রুড পাম তেল আমদানির কোনো এলসিই খোলা হয়নি।
অথচ গত বছরের ডিসেম্বরে এ দুটি পণ্যের এলসি খোলা হয়েছিল প্রায় ৪০ হাজার টনের। এ ছাড়া ২০২১ সালের জুলাই-ডিসেম্বরের তুলনায় গত বছরের একই সময়ে চিনি আমদানি ২ লাখ টনের বেশি কমে গেছে। গত ডিসেম্বরে অপরিশোধিত চিনি আমদানির এলসি খোলা হয়েছে মাত্র ৬৯ হাজার ৫২ টনের, আগের বছরে একই সময়ে এর পরিমাণ ছিল ২ লাখ ৫ হাজার ১১৯ টনের। এ ছাড়া আগের বছরের শেষ ছয় মাসের তুলনায় ২০২২ সালের একই সময়ে ছোলা আমদানি কমেছে ১৪ হাজার ১৬৪ টন। গত ডিসেম্বরে ছোলা আমদানির এলসি খোলা হয়েছে ১৯ হাজার ৮১৮ টনের, আগের বছরে একই সময়ে এর পরিমাণ ছিল ৭২ হাজার ৯৩৩ টন। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. মেজবাউল হক জনকণ্ঠকে জানান, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক কোম্পানিগুলোর এলসি খোলার তথ্য নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করছে বলেও জানান তিনি। জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান জনকণ্ঠকে জানান, বিশ্ব বাজারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ডলারের বাড়তি দামের কারণে আদা, রসুনের দাম সর্বোচ্চ ২৫ শতাংশ বৃদ্ধির কথা থাকলেও পণ্যগুলো অনেক বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে।
বড়দের কব্জায় ভোগ্যপণ্যের বাজার ॥ ভোগ্যপণ্যের বাজার এখন বড়দের কব্জায় চলে গেছে। ডলার সংকটের কারণে রোজানির্ভর পণ্য আমদানি করতে ছোট ব্যবসায়ীরা এলসি খুলতে পারছেন না। ডলারের সংস্থান করে কেবল বড় ব্যবসায়ীরা এ সব পণ্যের এলসি খুলে আমদানি করছেন। এ কারণে সিন্ডিকেট করে পণ্যের দাম বাড়ানোর সুযোগও রয়েছে তাদের। একই সঙ্গে রোজাকে কেন্দ্র করে ব্যবসায়ীদের মধ্যে মাত্রাতিরিক্ত মুনাফা করার প্রবণতার কারণেও পণ্যের দাম বাড়ছে। গত জুনে প্রতি ডলারের দাম ছিল ৯৩ টাকা। ডিসেম্বরে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০৭ টাকা। আলোচ্য সময়ে ডলারের দাম বেড়েছে ১৪ টাকা বা ১৫ শতাংশ। মূলত ডলারের দাম বাড়ার কারণে আমদানিতে সব খাতে খরচ বেড়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যমতে, আসন্ন রোজা উপলক্ষে চিনি, মসলা, দুধ ও দুগ্ধজাতীয় পণ্যের এলসি খোলা কমেছে গড়ে প্রায় ৪০ শতাংশ। দুধ ও দুগ্ধজাতীয় পণ্যের আমদানি ডলারের হিসাবে সামান্য বাড়লেও আন্তর্জাতিক বাজারে এর দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় আমদানি বরং কমেছে। তবে  ভোজ্যতেলের আমদানি বেড়েছে। ডাল ও ছোলার আমদানি ডলারের হিসাবে সামান্য বাড়লেও আন্তর্জাতিকভাবে দাম বৃদ্ধির তুলনায় কমেছে। তথ্যমতে, ভোগ্যপণ্যের বড় ব্যবসায়ীদের অনেকে রপ্তানির সঙ্গে জড়িত। ফলে রপ্তানি বিল বাবদ তাদের কাছে ডলারের জোগান রয়েছে।
রপ্তানিকারকরা তাদের মোট রপ্তানি আয়ের ৪০ শতাংশ রিটেনশন কোটার (বিদেশে তাদের হিসাবে জমা রাখা) আওতায় রেখে ব্যবসায়িক কাজে খরচ করতে পারেন। ওই ডলার থেকে বড় ব্যবসায়ীরা ভোগ্যপণ্য আমদানির এলসি খুলে পণ্য আমদানি করতে পারছেন। বড় ব্যবসায়ীদের মধ্যে যাদের রপ্তানি আয় নেই, তারা বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে ডলার নিয়ে এলসি খুলছেন। বড় ব্যবসায়ীরা সাধারণত চীন, ভারত, অস্ট্রেলিয়া, ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা ও ইউরোপ থেকে পণ্য আমদানি করেন। ওই সব পণ্য চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে খালাস করেন। এ কারণে ওই বন্দর দিয়ে সার্বিকভাবে পণ্যের খালাস বেড়েছে। ছোট ব্যবসায়ীদের নিজস্ব রপ্তানি আয় নেই। ফলে তারা ডলার পাচ্ছেন না। ব্যাংকও তাদের ডলার দিচ্ছে না। ব্যাংকগুলো বড় ব্যবসায়ীদের ডলার দিয়ে গ্রাহক ধরে রাখছে। কারণ, তাদের কাছ থেকে ব্যবসা বেশি পাচ্ছে ব্যাংক। এ কারণে বড় ব্যবসায়ীদেরই ব্যাংক ডলার দিচ্ছে, সংকটের কারণে ছোট ব্যবসায়ীদের ডলার দিচ্ছে না।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, দেশে গত জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে ভোজ্যতেল আমদানি হয়েছে ৯ লাখ ৮২ হাজার টন। চিনি আমদানি হয়েছে ৬ লাখ ৮৫ হাজার টন। ছোলা আমদানি হয়েছে ৫৩ হাজার ৪৭৬ টন। খেজুর আমদানি হয়েছে ১১ হাজার ৭৭৩ টন। মসুর ডাল আমদানি হয়েছে এক লাখ ৯৮ হাজার টন। পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে ৩ লাখ ৭৬ হাজার টন। রমজানে নিত্যপণ্য সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে ডিসেম্বরের মাঝামাঝি বিজ্ঞপ্তি জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে বলা হয়, ২০২৩ সালের ৩১ মার্চ পর্যন্ত ভোজ্যতেল, ছোলা, ডাল, মটর, পেয়াজ, মসলা, চিনি ও খেজুর ৯০ দিনের সাপ্লায়ার্স বা বায়ার্স ক্রেডিটের আওতায় আমদানির সুযোগ পাবেন ব্যবসায়ীরা।

 

×