নকল চাবি দিয়ে ৫শ’ বাইক চুরি
চাবি দিয়ে বাইক স্টার্ট দিয়ে দিব্যি চালিয়ে চলে যেত। বাইকটি যে চুরি করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, তা পাশের কারও কাছে মনেই হতো না। কেননা, বাইকটি স্টার্ট দেয়ার সময় চোর চক্রের সদস্যদের কোন ঝক্কি ঝামেলাই পোহানো লাগত না। নিজেদের তৈরি নকল চাবি দিয়ে এভাবে বাইক চুরি করত একটি চোর চক্র। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে এভাবে দিবালোকে দামী দামী বাইক চুরি করে আসছিল তারা।
নকল চাবি দিয়ে আসল চাবির মতোই বাইক স্টার্ট দিয়ে নিয়ে যেত। পরে চক্রের সদস্যরা ভারতীয় সীমান্ত দিয়ে আনা হয়েছে জানিয়ে গ্রাহকদের কাছ থেকে অল্প দামে বাইকগুলো বিক্রি করত। চক্রটি ২০১৬ সাল থেকে এ যাবত পর্যন্ত এভাবে নকল দাবি দিয়ে ৫০০ বাইক চুরি করেছে বলে জানিয়েছে ডিবি।
সম্প্রতি গেন্ডারিয়া থানার একটি মোটরসাইকেল চুরির মামলা তদন্ত করতে গিয়ে সিসিটিভি ফুটেজ ও বিভিন্ন প্রযুক্তির সহায়তায় প্রথমে দুজন পরে আরও তিনজনকে গ্রেফতারের পর এমন তথ্য উঠে এসেছে। গ্রেফতারকৃতরা হলো- নূর মোহাম্মদ (২৬), রবিন (২৩), সজল (১৮), মনির (২২) ও আকাশ (২২)। এ সময় তাদের কাছ থেকে বিভিন্ন মডেলের ১৩টি মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়।
বুধবার দুপুরে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে গোয়েন্দা পুলিশের প্রধান অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, পুরান ঢাকার বিভিন্ন এলাকা থেকে দীর্ঘদিন ধরে মোটরসাইকেল চুরি করে আসছিল একটি চক্র। গত কয়েক বছরে এই চক্রের সদস্যরা অন্তত ৫০০ মোটরসাইকেল চুরি করেছে। এমন অভিযোগে তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় চোর চক্রকে ধরতে অভিযান শুরু করে ডিবির ওয়ারী বিভাগ।
সিসিটিভি ফুটেজ দেখে চোর চক্রের মূলহোতা নূর মোহাম্মদ ও রবিনকে শনাক্ত করে রাজধানীর শনিরআখড়া এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়। তাদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে চক্রের অন্যান্য সক্রিয় সদস্য সজল, মনির ও আকাশকে যাত্রাবাড়ীর ধলপুর এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়।
জিজ্ঞাসাবাদে চক্রের মূলহোতা নূর মোহাম্মদ জানায়, সে মূলত জুরাইন এলাকা থেকে চুরি শুরু করলেও পরে ঢাকা শহরের বিভিন্ন এলাকায় চোর চক্র গড়ে তোলে। চোর চক্রের অন্যতম সহযোগী রবিনের মাধ্যমে জিক্সার মোটরসাইকেলের চাবি তৈরি করত। চাবি ব্যবহার করে তারা জিক্সার মোটরসাইকেল অনায়াসেই স্টার্ট করতে পারত।
মোটরসাইকেল চুরি থেকে বিক্রি পর্যন্ত চক্রের সদস্যরা ভিন্ন ভিন্ন দায়িত্ব পালন করত। তাদের মধ্যে অন্যতম সজল, মনির ও আকাশ ক্রেতা সংগ্রহ করত। মূলত ঢাকা মহানগর এলাকা থেকে মোটরসাইকেল চুরি করে মুন্সীগঞ্জ জেলার বিভিন্ন এলাকা, ঢাকা জেলার দোহার ও নবাবগঞ্জসহ পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন জেলায় বিক্রি করত।
এ সংঘবদ্ধ চক্র চোরাই মোটরসাইকেল বিক্রির সময় ক্রেতাদের বলত, এগুলো ভারতীয় সীমান্ত থেকে আনা গাড়ি, তাই কম দামে বিক্রি হবে। প্রতিটি চোরাই মোটরসাইকেল তারা ৪০ থেকে ৮০ হাজার টাকায় বিক্রি করত। চক্রটি ২০১৬ সাল থেকে মোটরসাইকেল চুরি করে আসছিল। তারা এ পর্যন্ত পাঁচ শতাধিক মোটরসাইকেল চুরি করেছে। গ্রেফতার নূর মোহাম্মদের বিরুদ্ধে চারটি মামলা, তার অন্যতম সহযোগী রবিনের বিরুদ্ধে তিনটি মামলা এবং অন্য তিনজনের বিরুদ্ধে একটি করে মামলার তথ্য পাওয়া গেছে।
এদিকে মোটরসাইকেল পার্কিংয়ের ক্ষেত্রে সবাইকে সতর্ক থাকার অনুরোধ জানিয়ে গোয়েন্দা প্রধান বলেন, ঢাকার যেকোন স্থানে গাড়ি পার্কিং করার ক্ষেত্রে সাবধান হতে হবে। এছাড়া গাড়ি নিজেদের তত্ত্বাবধানে রাখতে হবে। আর কোন ধরনের চুরির ঘটনা ঘটলে সঙ্গে সঙ্গে সংশ্লিষ্ট থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করে গোয়েন্দা পুলিশকে অবহিত করতে হবে। ডিবি তার অভিজ্ঞতা, তথ্যপ্রযুক্তিগত জ্ঞান ও কৌশল দিয়ে সাধারণ মানুষের মূল্যবান সম্পদ উদ্ধার করে দিতে সর্বদা সচেষ্ট।