ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

তাসকিন একাই নিলেন ৪ উইকেট

রাজশাহীকে সহজেই হারাল রংপুর

প্রকাশিত: ১১:১৬, ১ জানুয়ারি ২০২০

রাজশাহীকে সহজেই হারাল রংপুর

মিথুন আশরাফ ॥ বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগে (বিপিএল টি২০) ঢাকায় তৃতীয় পর্বের শেষ ম্যাচে মঙ্গলবার ব্যাটিং দ্যুতি ছড়ান নাঈম শেখ (৫৫ রান)। তার ব্যাটিংয়ে বড় স্কোর গড়ে রংপুর রেঞ্জার্স। এরপর বোলিংয়ে রংপুরের পেসার তাসকিন আহমেদ (৪/২৯) ছন্দে ফিরে এমনই গতির ঝড় তুলেন, তাতে ছাড়খার হয়ে যায় রাজশাহী রয়্যালস। ২০১৯ সালের শেষ ম্যাচে নাঈমের ব্যাটিং আর তাসকিনের বোলিং ঝলকে রংপুর রেঞ্জার্সের কাছে ৪৭ রানে হারে রাজশাহী রয়্যালস। মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে টস জিতে আগে ফিল্ডিং করার সিদ্ধান্ত নেয় রাজশাহী। ব্যাটিং করার সুযোগ পেয়ে ৬ উইকেট হারিয়ে ২০ ওভারে ১৮২ রান করে রংপুর রেঞ্জার্স। নাঈম শেখ অসাধারণ ব্যাটিং করেন। নাঈমের ৫৫ রানের ইনিংসের সঙ্গে ক্যামেরন ডেলপোর্টের ৩১, লুইস গ্রেগরির ২৮, জহুরুল ইসলাম অমির অপরাজিত ১৯, মোহাম্মদ নবীর ১৬, আল আমিন জুনিয়রের অপরাজিত ১৫ রানে এত বড় স্কোর গড়ে রংপুর। জবাব দিতে নেমে তাসকিন আহমেদের গতির ঝড়ের মুখে পড়ে ৮ উইকেট হারিয়ে ২০ ওভারে ১৩৫ রান করতে পারে রাজশাহী। অলক কাপালী সর্বোচ্চ ৩১ রান করেন। তাসকিন ৪ উইকেট নেন। রাজশাহীর ইনিংসের শুরুতে গ্রেগরি শূন্যে লাফ দিয়ে এমন এক ক্যাচ ধরেন, সবাই চমকে যান। এরচেয়েও বড় বিষয় হলো, রাজশাহী যে গ্রেগরির দুর্দান্ত ক্যাচে আফিফ হোসেন ধ্রুবকে (৭) শুরুতেই হারায়, এই উইকেটটি নেন তাসকিন আহমেদ। যিনি টানা তিন ম্যাচ পর উইকেট শিকার করতে পারেন। উইকেট না পাওয়ার দুর্ভিক্ষ কাটান তাসকিন। তাতে স্বস্তিও খুঁজে পান। এমনই স্বস্তি মিলে ব্যাটিং ঝলক দেখাতেই থাকেন। ১০ ওভারে ৫৯ রান করে রাজশাহী। এরআগেই লিটন কুমার দাস ও শোয়েব মালিককেও আউট করে দেন তাসকিন। হ্যাটট্রিকের আশা জাগান। তা হয়নি। তবে রাজশাহীর ব্যাটিংয়ে ধস নামান ঠিকই। বোলিংয়ে তাসকিন যেন ফুরিয়ে যাচ্ছেন। এমনই যখন ভাবনা হয়, তখনই বছরের শেষটায় এসে দেখান চমক। অলক কাপালী জৌলুস ছড়ানোর চেষ্টা করেন। তবে ৩১ রানের বেশি করতে পারেননি। রবি বোপারা ব্যাট হাতে নামেন। ধুমধারাক্কা ব্যাটিং করে ২৮ রান করে আউট হয়ে যান। দলের ১১৮ রানে নাহিদুল ইসলাম (১৯) সাজঘরে ফিরতেই ৬ উইকেটের পতন ঘটে যায়। একই রানে যখন আন্দ্রে রাসেলও (১৭) রান আউট হয়ে যান, রাজশাহীর জয়ের আশাই শেষ হয়ে যায়। তাসকিন নিজের চতুর্থ ওভার করতে এসে ফরহাদ রেজাকেও আউট করে দেন। শেষপর্যন্ত ১৩৫ রান করতে পারে রাজশাহী। দেশের মাটিতে ২০১৯ সালের শেষ ক্রিকেট ম্যাচটি খেলতে নেমে নাঈম দর্শক মাতান। টি২০তে তিনি যে সম্ভাবনাময় প্রতিভাবান ব্যাটসম্যান, তা তো ভারতের বিরুদ্ধে টি২০ সিরিজেই প্রমাণ দেন। প্রতিটি ম্যাচেই ভাল ব্যাটিং করেন। এরপর দক্ষিণ এশিয়ান গেমসে (এস এ গেমস) নিজেকে মেলে ধরতে না পারলেও বিপিএলে আবার নিজের দ্যুতি ছড়াতে থাকেন। এক, দুই ম্যাচ পরপরই বড় ইনিংস খেলছেন। যদিও রংপুর এবার বিপিএলে খুব ভাল কিছু করতে পারছে না। তবে ব্যক্তিগত নৈপুণ্য ঠিকই দেখাচ্ছেন নাঈম। মঙ্গলবার ২০১৯ সালের শেষদিনটিতে যেমন ব্যাট হাতে নেমে শুরু থেকেই মারমুখী হয়ে খেলতে থাকেন। ৪০ বলে হাফসেঞ্চুরি করে ফেলেন। এরপর ৪৭ বলে ৬ চার ও ১ ছক্কায় ৫৫ রান করে থামেন নাঈম। তার এই দুর্দান্ত ব্যাটিংয়েই আসলে এতদূর এগিয়ে যেতে পারে রংপুর। শুরুতে শেন ওয়াটসনকে নিয়ে খুব বেশিদূর যেতে পারেননি। দলের ৩৮ রানে ওয়াটসন (৭) আউট হয়ে যান। এরপর ক্যামেরন ডেলপোর্টকে নিয়ে অনেকটা পথ এগিয়ে যান নাঈম। দুইজন মিলে দ্বিতীয় উইকেটে ৫৪ রানের জুটিও গড়েন। যখন দক্ষিণ আফ্রিকান ডেলপোর্ট উইকেটে থাকেন আর ধুন্ধুমার ব্যাটিং করতে থাকেন, তখন নাঈম নিজেকে একটু সামলে রাখেন। দলের ৯২ রান হতেই আফিফ হোসেনের বলে ডেলপোর্ট (১৭ বলে ৩১ রান) আউট হওয়ার পরও উইকেট আঁকড়ে থাকেন নাঈম। আউট হওয়ার আগে আফিফের করা ১১তম ওভারে টানা তিন বলে দুই ছক্কা ও এক চার হাঁকান ডেলপোর্ট। দ্রুত স্কোর ১০০ রানের কাছে চলে যায়। ইংল্যান্ডের লুইস গ্রেগরিও মারমুখী ব্যাটিং করতে থাকেন। কিন্তু নাঈম আর বেশিদূর এগিয়ে যেতে পারেননি। দলের ১১০ রানে গিয়ে কামরুল ইসলাম রাব্বির বলে কট এ্যান্ড বোল্ড হয়ে যান নাঈম। রানের গতি তখন কিছুটা কমে যায়। ১৩তম ওভারের প্রথম বলে গিয়ে দলের স্কোরবোর্ডে ১০০ রান জমা হয়। দলের ১২৯ রানে ২৭ রানে থাকা গ্রেগরিকে আউট করার সুযোগ মিললেও কামরুল ক্যাচ ধরতে পারেননি। গ্রেগরি অবশ্য বেশিক্ষণ টিকেও থাকতে পারেননি। ১৭ বলে ২৮ রান করতেই সাজঘরে ফেরেন। ফজলে মাহমুদ রাব্বি আসেন আর ফিরেন। মোহাম্মদ নবীও (১৬) খুব বড় কিছু করতে পারেননি। তবে শেষদিকে জহুরুল ইসলাম অমি (১৯*) যে শেষ ওভারে চারটি চার হাঁকান, তাতেই রান ১৮২ হয়ে যায়। আল আমিন জুনিয়রও (১৫*) ব্যাটিং ঝলক দেখান। তবে শুরুতে যে নাঈম শেখ ব্যাটিং ঝলকানি দেখান, সেটি রাজশাহীর ইনিংস শুরু হওয়ার আগ পর্যন্ত আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতেই থাকে। যখন রাজশাহীর ইনিংস শুরু হয়। তাসকিন তখন আলোচনায় এসে পড়েন। বোলিংয়ে আবার যে ছন্দ খুঁজে পান। তবে নাঈম আর তাসকিন ঝলকেই টানা দ্বিতীয় জয় পায় রংপুর। স্কোর ॥ রংপুর রেঞ্জার্স-রাজশাহী রয়্যালস ম্যাচ-মিরপুর রংপুর রেঞ্জার্স ইনিংস ১৮২/৬; ২০ ওভার; নাঈম ৫৫, ওয়াটসন ৭, ডেলপোর্ট ৩১, গ্রেগরি ২৮, নবী ১৬, রাব্বি ০, আল আমিন ১৫*, অমি ১৯*; ইরফান ২/৩৫, আফিফ ২/৪০। রাজশাহী রয়্যালস ইনিংস ১৩৫/৮; ২০ ওভার; লিটন ১৫, আফিফ ৭, কাপালী ৩১, মালিক ০, বোপারা ২৮, নাহিদুল ১৯, রাসেল ১৭, ফরহাদ ০, তাইজুল ৪*, কামরুল ৫*; তাসকিন ৪/২৯, গ্রেগরি ২/২৮। ফল ॥ রংপুর রেঞ্জার্স ৪৭ রানে জয়ী।
×