ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

আজ আফগানদের ইতিহাস গড়ার দিন?

প্রকাশিত: ১০:৩০, ৯ সেপ্টেম্বর ২০১৯

 আজ আফগানদের ইতিহাস গড়ার  দিন?

মিথুন আশরাফ ॥ অলৌকিক কিছু ঘটলেই একমাত্র হারের লজ্জা এড়াতে পারে বাংলাদেশ। আর যদি সারাদিন বৃষ্টি পড়ে, খেলা না হয়, তাহলেই হার থেকে মুক্তি পাবে সাকিবের দল। তা কী হবে, নাকি বাংলাদেশকে লজ্জায় ডুবিয়ে ইতিহাস গড়বে আফগানিস্তান? বাংলাদেশের জিততে দরকার আরও ২৬২ রান। হাতে আছে মাত্র ৪ উইকেট। কঠিন পথ। চট্টগ্রাম টেস্টের শেষদিনে আজই ফয়সালা হয়ে যাবে। বাস্তবতা বলছে কোনভাবেই সম্ভব নয়। প্রথম ইনিংসে আফগানিস্তান ৩৪২ রান করার পর বাংলাদেশ প্রথম ইনিংসে ২০৫ রানের বেশি করতে পারেনি। প্রথম ইনিংসেই ১৩৭ রানে পিছিয়ে থাকে বাংলাদেশ। দ্বিতীয় ইনিংসে শেষ মুহূর্তে আফসার জাজাইয়ের (৪৮*) ব্যাটিং ঝলকে শেষ পর্যন্ত আফগানরা ২৬০ রান করেছে। বাংলাদেশের সামনে জিততে ৩৯৮ রানের টার্গেট দাঁড় হয়েছে। বাংলাদেশ দ্বিতীয় ইনিংসে চতুর্থদিন শেষে ৬ উইকেট হারিয়ে ১৩৬ রান করেছে। প্রথম ইনিংসের চেয়েও করুণ অবস্থা হচ্ছে। এখন ব্যাটিংয়ে আছেন সাকিব (৩৯*)। সৌম্য সরকার, মেহেদী হাসান মিরাজ, তাইজুল ইসলাম, নাঈম ইসলামও রয়েছেন। যেখানে ৩ উইকেট নেয়া রশীদ খান ও ২ উইকেট নেয়া জহির খানের স্পিন ঘূর্ণিতে টালমাটাল হয়ে গেছে বাংলাদেশের ব্যাটিং। ব্যাটিং লাইনআপে এত পরিবর্তনে গোলমাল বেধে গেছে। লিটন কুমার দাস (৯), সাদমান ইসলাম (৪১), মোসাদ্দেক হোসেন (১২), মুশফিকুর রহীম (২৩), মুমিনুল হক (৩), মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের (৭) মতো ব্যাটসম্যানরা কিছুই করতে পারেননি। সেখানে সাকিব শেষ পর্যন্ত টিকে থাকলেও বাকি ব্যাটসম্যানরা কী দলকে জিতিয়ে মাঠ ছাড়তে পারবেন? তা কী সম্ভব? অবশ্য বাংলাদেশ টেস্ট অধিনায়ক সাকিব সম্ভাবনার পথ দেখিয়েছেন। সেই পথের কথা শুনে আবার হাসি ছাড়া আর কিছুই কারও মুখে নেই। আফগান স্পিনে তছনছ হয়ে যাওয়ার পরও চট্টগ্রাম টেস্টে জেতার ফর্মুলা দেখিয়েছেন সাকিব। সেই ফর্মুলাও আবার হাস্যকরই বটে। তিনি বলেছেন, ‘টেস্ট জিততে আর কত দরকার? ২৭০ (২৬২)। একজন ১৫০ আর একজন ১২০ করলেই তো হয়ে যাবে। আমি যদি দেড় শ’ করিও, অন্য প্রান্তে আরেকজনকে এক শ’ তো করতে হবে। সেটা এখন সৌম্যকে করতে হবে।’ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে নিশ্চিত হারের সম্ভাবনা জাগার পরও যে জয়টি এসেছিল, তাতে সাকিব ও মাহমুদুল্লাহর জোড়া সেঞ্চুরিতে ২০০ ছাড়ানো (২২৪ রানের) জুটিতে জয় তুলে নেয়া গিয়েছিল। এবার এ্যাসেজে বেন স্টোকসও তো অসম্ভবকে সম্ভব করে দেখিয়েছেন। ৩৫৯ রানের টার্গেটে খেলতে নেমে অপরাজিত ১৩৫ রানের মহাকাব্যিক এক ইনিংস খেলে ইংল্যান্ডকে জিতিয়েছেন। তবে স্টোকস যখন ব্যাট হাতে নামেন তখন জিততে আরও ২১৮ রান দরকার ছিল। হাতে উইকেট ছিল সাতটি। যদিও ভরসাবান বাকি ব্যাটসম্যানরা রান করে ভরসা হয়ে উঠতে পারেননি। তবে উইকেট আঁকড়ে থেকে স্টোকসকে সমর্থন জাগিয়েছেন। চট্টগ্রাম টেস্টে বাংলাদেশের হাতে আছে মাত্র ৪টি উইকেট। সাকিবের সঙ্গে বাকিরা কী উইকেট আঁকড়ে থাকতে পারবেন? বৃষ্টি যদি চতুর্থদিনের খেলার সাড়ে তিন ঘণ্টার বেশি কেড়ে না নিত, তাহলে হয়তো টেস্ট শেষ হয়ে যেত। ৫১ ওভারের মতো চতুর্থদিনে খেলা হয়েছে। যেভাবে বাংলাদেশের উইকেট পড়তে শুরু করে তাতে চার উইকেটও খতম হয়ে যেতে পারত। বৃষ্টির জন্য টেস্ট পঞ্চমদিনে গড়ায়। বৃষ্টি যদি আজ বাধা হয়ে না দাঁড়ায় তাহলে বাংলাদেশের হার যেন সময়ের ব্যাপার হয়ে দাঁড়াতে পারে। আফগানিস্তানের বৈচিত্র্যময় স্পিনই যে ডোবাচ্ছে বাংলাদেশকে। ৩৯ রানে থাকা সাকিব ও ০ রানে থাকা সৌম্যর পর মিরাজ, তাইজুল, নাঈমের জন্যও তাই ২৬২ রান করে জয় তুলে নেয়া মহাকঠিন। আফগানিস্তান যখনই জুটি গড়েছে, সেই জুটি অনেক বড় হয়েছে। জুটি এক শ’ রান ছাড়িয়েছে, নয়তো এক শ’ রানের কাছাকাছি গেছে। দুই ইনিংসেই একটি করে এক শ’ রান ছাড়ানো জুটি আছে আফগানদের। সেখানে বাংলাদেশের দুই ইনিংসে একটি ৫০ রানের জুটিও নেই। প্রথম ইনিংসে ৪০ উর্ধ একটি জুটি আছে। দ্বিতীয় ইনিংসে ৩০ উর্ধ জুটিরই এখন পর্যন্ত দেখা মিলেনি। এমন অবস্থা হলে কী আর জেতা সম্ভব? কোন দলের বিরুদ্ধেই জেতা সম্ভব নয়। আফগানিস্তান যে পথে হাঁটছে, টেস্ট ক্রিকেটের ১৪২ বছরেও সেই পথে কোন দল হাঁটতে পারেনি। ১৮৭৭ সালের ১৫ মার্চ আন্তর্জাতিক টেস্ট ক্রিকেটের যাত্রা শুরু হয়। সেই থেকে এখন পর্যন্ত কোন দল নিজেদের প্রথম তিন টেস্টের মধ্যে টানা দুটি টেস্টে জিততে পারেনি। প্রথম তিন টেস্টের মধ্যে আবার শুধু অস্ট্রেলিয়াই দুটি টেস্ট জিতেছে। উপমহাদেশের কোন দলই এমনটি করতে পারেনি। আফগানিস্তান তাই ইতিহাস গড়ার পথেই আছে। বাংলাদেশের চার উইকেট আজ দ্রুত তুলে নিতে পারলেই ইতিহাস গড়বে আফগানরা। অস্ট্রেলিয়া তিন টেস্ট খেলেই দুটিতে জিতেছিল। আর কোন দলই তা করতে পারেনি। আফগানিস্তান আজ তা করে ফেলতে পারে। আফগানিস্তান এই ইতিহাস গড়লে বাংলাদেশ পাবে লজ্জা। ১৯ বছর ধরে টেস্ট ক্রিকেট খেলে তাহলে কী শিখল বাংলাদেশ? সেই প্রশ্নও উঠে গেছে। অলৌকিক কিছু না ঘটলে কিংবা বৃষ্টিতে দিনটি পরিত্যক্ত না হলে বাংলাদেশের টেস্ট ক্রিকেট ইতিহাসে আজ কলঙ্কমাখা একটি দিনই অপেক্ষা করছে।
×