ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

মাদারীপুরে ১২শ’ হেক্টরের ধান নষ্ট

প্রকাশিত: ১০:০৮, ৯ মে ২০১৯

মাদারীপুরে ১২শ’ হেক্টরের ধান নষ্ট

নিজস্ব সংবাদদাতা, মাদারীপুর, ৮ মে ॥ ঘূর্ণিঝড় ফণীর প্রভাবে জেলার শিবচরের পদ্মার চরাঞ্চলের নদী তীরবর্তী মাঠের পাকা ও আধাপাকা ধানের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বিচ্ছিন্ন চরাঞ্চলের ৪ ইউনিয়নের প্রায় ১২শ’ হেক্টর জমির পাকা ও আধা-পাকা ধান পানিতে তলিয়ে গেছে। কৃষকরা এসব ধান কাটতে বাধ্য হওয়ায় উৎপাদন মারাত্মক হ্রাস পাওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। চরাঞ্চলের কৃষকরা সরকারের কাছে সহায়তার দাবি জানিয়েছেন। জানা গেছে, ঘূর্ণিঝড় ফণীর প্রভাবে ৪/৫ দিন ধরে পদ্মা নদীর পানি অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পেয়ে শিবচর উপজেলার পদ্মার বিচ্ছিন্ন চরাঞ্চলের নদী তীরবর্তী ফসলের মাঠ তলিয়ে গেছে। এতে চরাঞ্চলের কাঁঠালবাড়ি, চরজানাজাত, বন্দরখোলা ও মাদবরচর ইউনিয়নের নদী তীরবর্তী মাঠের ধানের ক্ষেতসহ বিভিন্ন ফসলের মাঠ তলিয়ে যায়। হঠাৎ আগাম পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় আধাপাকা ধান কাটা নিয়ে বিপাকে পড়েছে কৃষকরা। প্রকৃতির কাছে এ যেন অসহায় আত্মসমর্পণ। প্রায় ১২শ’ হেক্টর জমির ধানসহ ফসল তলিয়ে যায় পানিতে। তলিয়ে যাওয়া মাঠের অধিকাংশ ধানই পাকা ও আধাপাকা। ৪ দিন পানির নিচে থাকায় নদীতে ভেসে আসা ময়লায় অন্তত ৫শ’ হেক্টর জমির ধান প্রায় বিনষ্ট হয়ে গেছে। বাকি পাকা ও আধাপাকা ধান সম্পূর্ণভাবে পুষ্ট হওয়ার আগেই পানির নিচ থেকে কাটতে বাধ্য হওয়ায় উৎপাদন নিয়ে শঙ্কায় পড়েছে কৃষকরা। ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় চরের সহস্রাধিক কৃষকের মাঝে হতাশা নেমে এসেছে। চরাঞ্চলের মানুষের প্রধান জীবিকা এ ধান থেকেই আসে। অধিকাংশ কৃষকই এনজিও, ব্যাংক অথবা চড়া সুদে মহাজনী ঋণে টাকা এনে বোরো ধানের আবাদ করে। অনেকে তলিয়ে যাওয়া ধান তোলার চেষ্টা করলেও ধান পরিপক্ক না হওয়ায় হতাশ তারা। ধান ছাড়াও খড়কুটা, গবাদিপশুর খাদ্য সরবরাহে অন্যতম উপাদান। কাঁঠালবাড়ির ইউসুফ হাওলাদারকান্দি গ্রামের কৃষক ফিরোজ হাওলাদার বলেন, আর এক সপ্তাহ বা ১৫ দিনের মধ্যে সব ধান ঘরে উঠত। ঘূর্ণিঝড় ফণীর কারণে পদ্মার চরে ৩দিনে ৪/৫ ফুট পানি বেড়েছে। এতে নদীপারের আমার ১৪ বিঘা পাকা ও আধাপাকা ধানের ৭ বিঘাই তলিয়ে গেছে। আমাগো ইউনিয়নের মতো চরজানাজাত, মাদবরচর, বন্দরখোলার নদীপারের হাজার হাজার মাইনষের ধান পানিতে নষ্ট হয়েছে। কৃষক মজিবর মুন্সী বলেন, ‘আধাপাকা ধান পানিতে তলানোয় কিছু টিকব কিছু টিকব না। আমি এনজিও থিকা ঋণ আইনা ধান লাগাইছিলাম। আমার মতো অনেকেই বিভিন্ন জায়গা থিকা ঋণ কইরা ধান লাগাইছে। সরকার যদি আমাগো দিকে না তাকায় তয় খুব অসুবিধায় পড়মু। কাঁঠালবাড়ি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মহসিন উদ্দিন সোহেল বেপারি বলেন, ঘূর্ণিঝড় ফণীর প্রভাবে আমার ইউনিয়নসহ চরাঞ্চলের নদী তীরবর্তী পাকা ও আধাপাকা ধানের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। আমরা কৃষকদের জন্য সহায়তা ও প্রণোদনা আশা করছি। শিবচর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা অনুপম রায় বলেন, ঘূর্ণিঝড় ফণীর প্রভাবে শিবচর উপজেলার চরাঞ্চলের পদ্মা নদী তীরবর্তী ধানসহ ১২শ’ হেক্টর জমির ফসল আক্রান্ত হয়েছে। ক্ষতি নিরূপণের কাজ চলছে। কলাপাড়ায় মাদ্রাসা ভবন বিধ্বস্ত নিজস্ব সংবাদদাতা কলাপাড়া থেকে জানান, কলাপাড়ায় ঘূর্ণিঝড় ফণীর প্রভাবে আরামগঞ্জ আলীগঞ্জ দারুল ইসলাম দাখিল মাদ্রাসার মিলনায়তন, অফিস কক্ষ ও শ্রেণীকক্ষ বিশিষ্ট একটি ভবন বিধ্বস্ত হয়ে গেছে। হাজিরা খাতাসহ অফিস ব্যবস্থাপনার প্রয়োজনীয় কাগজপত্র উড়িয়ে যত্রতত্র ও পানিতে ভিজে নষ্ট হয়ে গেছে। পাকা ভবনের অভাবে দীর্ঘ যুগ ধরে শ্রেণী কক্ষগুলো পাঠ দানে অনুপযোগী। তার ওপর ফণীর তা-বে গুরুত্বপূর্ণ ভবনটি বিধ্বস্ত হওয়ায় এখন শিক্ষা কার্যক্রম চালাতে চরম দুরবস্থায় পড়েছেন মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ। বিপাকে পড়েছে ২৬৭ শিক্ষার্থী। সরেজমিনে দেখা গেছে, কলাপাড়া উপজেলার মিঠাগঞ্জ ইউনিয়নের ৫ নং ওয়ার্ডে আরামগঞ্জ দাখিল মাদ্রাসার শ্রেণীকক্ষ অফিস ও মিলনায়তন বিশিষ্ট ভবনটি ঘূর্ণিঝড় ফণীর আঘাতে ল-ভ- হয়ে পড়ে আছে। ভবনের টিনের চাল উড়িয়ে অন্যত্র ফেলে দিয়েছে। ১৯৯০ সালে স্থাপিত মাদ্রাসাটি ওই এলাকার একমাত্র শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। মাদ্রাসাটিতে মোট চারটি টিনশেড ভবন। একটি ভবন ঘূর্ণিঝড়ে দুমড়েমুচড়ে গেছে আর বাকিগুলোর অবস্থা বেহাল। সামান্য বৃষ্টিতে শ্রেণীকক্ষে পানি পড়ে শিক্ষার্থীর বই-খাতা নষ্ট হয়ে পাঠ দানে ব্যাঘাত ঘটে। শিক্ষার স্বাভাবিক পরিবেশ বজায় থাকে না। ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাকা কোন ভবন নেই। প্রতিটি ভবন মাটির মেঝে আর টিনের বেড়া ও চাল। বৃষ্টি ও সামান্য বাতাসে শ্রেণীকক্ষে অবস্থান করার কোন পরিবেশ থাকে না। তাছাড়া ওই এলাকায় কোন সাইক্লোন শেল্টার নেই। তাই এলাকাবাসী ও মাদ্রাসার শিক্ষক ছাত্রছাত্রীদের আরামগঞ্জ দাখিল মাদ্রাসাটি পাকা ভবন নির্মাণ করাই তাদের একমাত্র দাবি। সুনাম রয়েছে মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠাকালীন থেকে প্রায় প্রতিবছর শতভাগ দাখিল পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়। ষষ্ঠ শ্রেণীর শিক্ষার্থী সিয়াম জানায়, অল্প বৃষ্টিতেই টিন দিয়ে পানি পড়ে। আবার একটু বাতাসে বাইরের বৃষ্টি ক্লাসের মধ্যে এসে পড়ে। তখন আমরা আর থাকতে পারি না। চতুর্র্থ শ্রেণীর শিক্ষার্থী মারুফা জানায়, বর্ষাকালে আসতে হয় কাদা পেরিয়ে। মাদ্রাসার ভবন মাটির হওয়ায় প্রায়ই আছার খেতে হয় আমাদের। মাদ্রাসার সুপার মুহাঃ মুরশিদুল আলম বলেন, ঘূর্ণিঝড় ফণীতে ভবনের চাল উপবৃত্তির কাগজ, হাজিরা খাতাসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্রাদি উড়ে নিয়ে গেছে। অনেক কাগজ পানিতে ভিজে নষ্ট হয়েছে। আসবাবপত্র ভেঙ্গে চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। আমরা মাদ্রাসার পক্ষ থেকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে ভবন পাকা নির্মাণের জন্য আবেদন করেছি। ইঞ্জিনিয়ার এসে পরিদর্শন করেছেন। কিন্তু আজ পর্যন্ত পাকা ভবন জোটেনি।
×