বিশেষ প্রতিনিধি ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসএসসি, দাখিল ও সমমানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ শিক্ষার্থী, তাদের অভিভাবক এবং শিক্ষকমন্ডলীকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন। পাশাপাশি অনুত্তীর্ণদের আগামীতে ভাল ফল করার সাহসও যুগিয়েছেন তিনি। উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে করে তিনি বলেন, তোমরাই আগামীর বাংলাদেশের কর্ণধার। তোমাদেরই এদেশের জনগণ এবং বিশ্ববাসীর সেবায় নিয়োজিত হতে হবে। এজন্য জ্ঞান-বিজ্ঞান, প্রযুক্তি আয়ত্তের পাশাপাশি দেশপ্রেমিক এবং মানবিকতায় পরিপূর্ণ মানুষ হয়ে গড়ে উঠতে হবে।
সোমবার এসএসসি, দাখিল ও সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশ উপলক্ষে দেয়া এক বাণীতে এবং লন্ডন থেকে ফোন করে প্রধানমন্ত্রী এই শুভেচ্ছা জানান। শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি সোমবার বেলা ১১টায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে আনুষ্ঠানিকভাবে ফলের সারসংক্ষেপ তুলে ধরেন। এ সময় শিক্ষা বিষয়ক উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব সোহরাব হোসাইনসহ শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানরা উপস্থিত ছিলেন।
রেওয়াজ অনুযায়ী প্রতি বছর ফল ঘোষণার দিন সকালে প্রধানমন্ত্রীর হাতে ফলের সারসংক্ষেপ তুলে দেন বোর্ডের চেয়ারম্যানরা। পরে সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে শিক্ষামন্ত্রী ফলের বিস্তারিত তুলে ধরেন। কিন্তু এবার প্রধানমন্ত্রী দেশের বাইরে থাকায় বিভিন্ন বোর্ডের চেয়ারম্যানরা শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনির হাতে ফল তুলে দেন। এরপর লন্ডনে অবস্থানরত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ফোন করে পাস করা শিক্ষার্থীদের অভিনন্দন জানান এবং যারা উত্তীর্ণ হতে পারেনি তাদের ধৈর্য ধরে মনোযোগ সহকারে পুনরায় প্রস্তুতি গ্রহণের আহ্বান জানান। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর প্রেরিত বাণী পড়ে শোনান শিক্ষামন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ২০১৯ সালের এসএসসি, দাখিল ও সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হচ্ছে। এ উপলক্ষে আমি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ শিক্ষার্থী, তাদের অভিভাবক এবং শিক্ষকম-লীকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাচ্ছি। আর যেসব শিক্ষার্থী উত্তীর্ণ হতে পারেনি, আমি তোমাদের ধৈর্য ধরে, মনোযোগ সহকারে আবার প্রস্তুতি নেয়ার আহ্বান জানাচ্ছি যাতে আগামীতে ভালভাবে উত্তীর্ণ হতে পার।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, মানুষের অসাধ্য কিছুই নেই। একাগ্রতা, অধ্যবসায় এবং পরিশ্রম যে কোন অসাধ্যকে সাধন করতে সহায়তা করতে পারে। তোমরা যারা যে কোন কারণেই হোক উত্তীর্ণ হতে পারনি, তাদের হতাশ হওয়ার কিছু নেই। এখন থেকে চেষ্টা করলে ভবিষ্যতে নিশ্চয়ই তোমরা এ বাধা অতিক্রম করে ভাল ফল অর্জন করতে পারবে। তিনি বলেন, এ বছর রেকর্ড ২০ লাখ ৩১ হাজার ৮৯৯ শিক্ষার্থী এসএসসি, দাখিল এবং সমমানের পরীক্ষায় অবতীর্ণ হয়েছিল। যেসব শিক্ষার্থী ভাল ফল করেছ, তোমাদের এই ধারাবাহিকতা ধরে রেখে ভবিষ্যতে আরও ভাল ফল করতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বলিষ্ঠ নেতৃত্বে ৩০ লাখ শহীদ এবং ২ লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে আমরা আমাদের মহান স্বাধীনতা অর্জন করেছি। তাঁর স্বপ্ন ছিল মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তি আনয়নের মাধ্যমে ক্ষুধা-দারিদ্র্য নিরক্ষতামুক্ত সোনার বাংলাদেশ গড়ার। তিনি বলেন, আমরা জাতির পিতার স্বপ্ন বাস্তবায়নে নিরলসভাবে পরিশ্রম করে যাচ্ছি। আমাদের সম্পদের সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও আগামী প্রজন্মকে আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত করে একবিংশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার উপযোগী করে গড়ে তোলার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রতি বছর আমি সশরীরে উপস্থিত থেকে এসএসসি এবং সমমানের পরীক্ষার ফল ঘোষণা করি এবং তোমাদের সঙ্গে আনন্দ ভাগাভাগি করি। এ বছর আমি লন্ডনে থাকার কারণে এ সুযোগ থেকে বঞ্চিত হলাম। এজন্য আমি তোমাদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করছি। তোমরা তোমাদের মেধা-মননের সবটুকু উজাড় করে দিয়ে নিজেদের সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তুলবে এবং আগামীতে দেশ পরিচালনার জন্য নিজেদের যোগ্য করে প্রস্তুত করবে- এই প্রত্যাশা করছি।