ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ০৭ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১

সাম্প্রদায়িক ও জঙ্গীবাদী শক্তিকে প্রতিহত করতে হবে

প্রকাশিত: ১১:২০, ১ মে ২০১৯

সাম্প্রদায়িক ও জঙ্গীবাদী শক্তিকে প্রতিহত করতে হবে

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ দল মত নির্বিশেষে জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে আসার জন্য দেশবাসীর প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছেন ১৪ দলের শীর্ষ নেতারা। তারা বলেন, জাত ধর্ম ভুলে গিয়ে আমরা মুক্তিযুদ্ধে যেমনভাবে যুদ্ধ করেছিলাম, তেমনিভাবে বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িক ও জঙ্গীবাদী শক্তিকে প্রতিহত করতে হবে। জঙ্গীবাদের পৃষ্ঠপোষক, আশ্রয়-প্রশ্রয়দাতাদেরও সর্বত্র প্রতিহত করতে হবে। মঙ্গলবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ১৪ দলের শান্তি সমাবেশ থেকে জোটের নেতারা এ আহ্বান জানান। সভাপতির বক্তব্যে ১৪ দলের মুখপাত্র ও আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য মোহাম্মদ নাসিম সন্ত্রাস-জঙ্গীবাদবিরোধী লড়াইয়ে সকলকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে বলেন, আসুন আমরা সকলে মিলে ঐক্যবদ্ধভাবে জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলি। জঙ্গীবাদকে শুধু নিয়ন্ত্রণ নয়, সমূলে উৎপাটন করি। শপথ নিয়ে সংসদে যোগ দেয়ায় বিএনপির এমপিদের স্বাগত জানিয়ে মোহাম্মদ নাসিম বলেন, আপনারা অনেক পরে হলেও সংসদে যোগদান করেছেন। এ জন্য কেন্দ্রীয় ১৪ দলের পক্ষ থেকে আপনাদের ধন্যবাদ জানাচ্ছি। এবার আপনারাও জঙ্গীবাদ ও সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করার জন্য এগিয়ে আসুন। ধর্ম-বর্ণ, দলমত নির্বিশেষে সবাইকে সন্ত্রাস-জঙ্গীবাদী কর্মকা-ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। তিনি বলেন, সন্ত্রাসীদের কোন দল ও ধর্ম নেই। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার সাহসী ও যোগ্য নেতৃত্বের কারণে জঙ্গী দমন করতে সক্ষম হয়েছি। তবে উন্নত দেশগুলোতে যেহেতু সন্ত্রাসীর ঘটনা ঘটছে, তাই আমাদের সজাগ থাকতে হবে। সবার চোখ খোলা রাখতে হবে। ঘরে ঘরে জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে জনসচেতনা সৃষ্টি করতে হবে। ধর্মের নামে একজন আরেক জনকে হত্যা করা-কোন ধর্মই সমর্থন করে না। আমরা বিশ্বব্যাপী শান্তি চাই। সমাবেশে আসন্ন পবিত্র রমজান মাসে দেশের বিভাগীয় ও জেলা পর্যায়ে কেন্দ্রীয় ১৪ দলের উদ্যোগে জঙ্গীবাদ ও সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী সমাবেশ করা হবে। আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য ও সাবেক কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী বলেন, জঙ্গী-সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোই হোক আজকের দিনের আহ্বান। পাকিস্তান আমল থেকেই দেখে আসছি, যখনই গণতন্ত্র মজবুত হতো, তখনই সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার ঘটনা ঘটানো হতো। ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে জঙ্গীবাদকে উস্কে দেয়া হচ্ছে। এক্ষেত্রে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ এবং ধর্মের বিদ্বেষ প্রচার বন্ধ করতে হবে। টেলিভিশন টকশতে গিয়ে একজন মাওলানা সাহেব বলেন, কাফের ও মুরতাদদের কতল করা ইসলাম জায়েজ করেছে। কিন্তু এর বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেই। ওয়াজেও নানা উস্কানিমূলক কথা বলা হয়, মোবাইল খুললেই তা দেখা যায়। জঙ্গীবাদ মোকাবেলা করতে মানবতার জন্য সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেন, গণতন্ত্রের ভেতর সাম্প্রদায়িকতা থাকতে পারবে না। সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ দমন করলেও এখন তারা বুদবুদ করে মাথাচাড়া দিচ্ছে। তাই সকলকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। জঙ্গীবাদের প্রধান পৃষ্ঠপোষক, রাজনৈতিকভাবে যারা আশ্রয়-প্রশ্রয় দিচ্ছে তাদের প্রতিহত করবে। এখনও ধর্মের মুখোশধারীরা হিন্দু ধর্মের বিরুদ্ধে, নারীদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ ছড়াচ্ছে। জঙ্গী সন্ত্রাসীদের উস্কানি দিচ্ছে। এ রকম পরিস্থিতিতে রাজনৈতিকভাবে আমাদের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা দরকার। কেন্দ্রীয় ১৪ দলের সমন্বয়ক মোহাম্মদ নাসিমের সভাপতিত্বে বৈঠকে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া, আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য এ্যাডভোকেট আব্দুল মতিন খসরু, জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পীকার এ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বি মিয়া, ব্যারিস্টার ফজলে নুর তাপস এমপি, সাবেক খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম, সাবেক মন্ত্রী শাজাহান খান, জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি মুহাম্মদ শফিকুর রহমান এমপি, একাত্তরের ঘাতক-দালাল-নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির, আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার আব্দুস সবুর, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব পীযুষ বন্দোপাধ্যায়, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি অধ্যাপক ড. নিম চন্দ্র ভৌমিক, সাবেক প্রতিমন্ত্রী ক্যাপ্টেন (অব) এবি তাজুল ইসলাম, ছাত্রলীগের সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন, মুক্তিযুদ্ধের সন্তানদের পক্ষে ফারহানা আক্তার পপি, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) সাবেক সভাপতি মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল, বাংলাদেশ সম্মিলিত ইসলামী জোটের সভাপতি হাফেজ মাওলানা জিয়াউল হাসান, ইঞ্জিনিয়ার আবু হানিফ, কলামিস্ট সৈয়দ আবুল মকসুদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য খন্দকার গোলাম মাওলা নকশেবন্দী, কৃষিবিদ মোঃ খায়রুল আলম প্রমুখ। সমাবেশ পরিচালনা করেন আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক আব্দুস সোবহান গোলাপ এমপি।
×