ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

নির্বাচন ॥ ধর্মীয় সম্প্রদায়ের করণীয় শীর্ষক আলোচনা

স্বাধীনতার পক্ষের শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান

প্রকাশিত: ০৫:৫২, ৯ ডিসেম্বর ২০১৮

স্বাধীনতার পক্ষের শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান

স্টাফ রিপোর্টার ॥ মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় জঙ্গীবাদমুক্ত অসাম্প্রদায়িক, মানবিক ও সম্প্রীতির বাংলাদেশ গড়তে আগামী নির্বাচনে স্বাধীনতার পক্ষের শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন সমাজের বিশিষ্টজনেরা। তারা বলেছেন, ধর্মীয় পরিচয়ে যদি কোন জনগোষ্ঠীর ওপর আঘাত আসে, তবে একযোগে সবাইকে রুখে দাঁড়াতে হবে। এ সময় দেশের উন্নয়ন-অগ্রযাত্রাকে এগিয়ে নিতে হবে। তরুণ প্রজন্মের জন্য সম্ভাবনার নতুন দুয়ার খুলে দিতে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির কোন বিকল্প নেই। রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে সম্প্রীতি বাংলাদেশ আয়োজিত ‘আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন: ধর্মীয় সম্প্রদায়ের করণীয়’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় বক্তারা এ কথা বলেন। আলোচনায় অংশ নেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক সামীম মুহাম্মদ আফজাল, খ্রীস্টান ধর্মীয় নেতা বিশপ পল এস সরকার, বৌদ্ধ ধর্মালম্বীদের নেতা সংঘনায়ক শুদ্ধানন্দ মহাথেরো, রামকৃষ্ণ মিশনের মৃদুল মহারাজ, ভূ-রাজনীতি ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল এ কে মোহাম্মদ আলী শিকদার (অব), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন, রেভারেন্ড মার্টিন অধিকারী, ভিয়েনাপ্রবাসী সাংবাদিক এম নজরুল ইসলাম, কবি আসাদ মান্নান, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডাঃ উত্তম বড়ুয়া। গোলটেবিল আলোচনায় মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন গবেষক ও কলামিস্ট সুভাষ সিংহ রায়। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের আহ্বায়ক বিশিষ্ট নাট্যজন পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায়। অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় ছিলেন সাংবাদিক আলী হাবিব। বক্তারা বলেন, বাংলাদেশ এখন এক যুগসন্ধিক্ষণের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। নির্বাচন সামনে রেখে মুক্তিযুদ্ধের নামে একটি চক্র জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করতে চাচ্ছে। একজন রাজাকার সারাজীবনের জন্য রাজাকার। একজন মুক্তিযোদ্ধাকে সারাজীবন তার আদর্শের পরীক্ষা দিয়ে যেতে হয়। আজ মুক্তিযুদ্ধের নামে যারা জামায়াত-বিএনপির সঙ্গে হাত মিলিয়েছে, তাদের কোনভাবেই মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের মানুষ বলা যাবে না। মুক্তিযুদ্ধের কথা বলে জনগণের সঙ্গে প্রতারণা ও বিভ্রান্তি ছড়াতে চায় তারা। ড. কামাল হোসেনরা মুক্তিযুদ্ধের প্রতিপক্ষ। নির্বাচন এলেই এদেশের ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দেয়। সংখ্যাগুরু সম্প্রদায়ের উচিত সংল্যালঘুর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। এদেশের তরুণ ভোটাররা, যারা এবারই প্রথম ভোট দিতে যাচ্ছেন, তাদের কোনভাবেই ভুল করা যাবে না। এখন সিদ্ধান্ত নেয়ার সময় এসেছে, কার পক্ষে যতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে নাকি স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তির পক্ষে। ধর্মীয় সংখ্যালঘু শুধু নয়, দেশের সব মানুষের উচিত স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তিকে রুখে দেয়া। এটা এখন সবার দায়িত্ব। আলোচনায় বলা হয়, অতীতে বিভিন্ন নির্বাচনকে ঘিরে ধর্মীয় পরিচয়ের কারণে নাগরিকদের ওপর সহিংসতা চালানোর চিত্র ওঠে আসে। এ সময় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ধরে রাখতে মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের শক্তির পক্ষে ঐক্য গড়ার ওপর গুরুত্ব দেন ধর্মীয় গুরুরা। মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানোর অপচেষ্টা হতে পারে এমন আশঙ্কা প্রকাশ করেন বিশিষ্টজনরা। মেজর জেনারেল এ কে মোহাম্মদ আলী শিকদার (অব) বলেন, আজ মুক্তিযুদ্ধের কথা বলে ড. কামাল হোসেনরা জামায়াত-বিএনপির সঙ্গে হাত মিলিয়েছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, নির্বাচনকে ঘিরে যেকোন ধরনের সহিংসতা ও দেশী-বিদেশী ষড়যন্ত্র রুখে দিতে সব সম্প্রদায়কে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে গোলটেবিল আলোচনায় বক্তারা বলেন, সংখ্যাগুরুর দায়িত্ব হচ্ছে সংখ্যালঘুর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। ঝুঁকিপূর্ণ ও স্পর্শকাতর এলাকায় প্রতিরোধ মঞ্চ গড়ে তোলারও আহ্বান জানানো হয়। মূল প্রবন্ধে সুভাষ সিংহ রায় উল্লেখ করেন, ‘ধর্মীয় সংখ্যালঘুÑএটা কারও পরিচয় হতে পারে না। যার যার ধর্ম আলাদা হতে পারে। এদেশে আমরা সবাই বাংলাদেশের নাগরিক। আমরা সবাই বাঙালী। এটাই আমাদের জাতিগত পরিচয়। ধর্মীয় পরিচয়ে যদি কোন জনগোষ্ঠীর ওপর আঘাত আসে, তাহলে সবাইকে একযোগে রুখে দাঁড়াতে হবে। ধর্মীয় পরিচয়ে যারা সংখ্যাগুরু তাদের দায়িত্ব সংখ্যালঘুর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। ধর্ম যার যার, বাংলাদেশ সবার, এই বোধ আজ সবার মধ্যে জাগিয়ে তুলতে হবে। ধর্ম-বর্ণ-লিঙ্গ নির্বিশেষে সব সম্প্রদায়ের মানুষের কণ্ঠে আজ উচ্চারিত হোক এক ও অভিন্ন স্লোগান। ‘আমার ভোট আমি দেব, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে দেব’, ‘আমার ভোট আমি দেব, স্বাধীনতার পক্ষে দেব’। গোলটেবিল আলোচনায় বক্তব্য রাখেন, জন্মাষ্টমী পরিষদের সভাপতি গৌরাঙ্গ দে, নিউইয়র্ক প্রবাসী মুক্তিযোদ্ধা গোলাম মোস্তফা মিরাজ, অধ্যাপক মিল্টন বিশ্বাস, অধ্যাপক অরুণ কুমার গোস্বামী, অধ্যাপক আ বা ম ফারুক, অধ্যাপক চন্দ্রনাথ পোদ্দার, বিএমএ কেন্দ্রীয় প্রচার ও জনসংযোগ সম্পাদক অধ্যাপক ডাঃ মাহবুবুর রহমান, সাবেক অডিটর ও কম্পট্রোলার জেনারেল শাসুদ আহমেদ, বুদ্ধিস্ট ফেডারেশনের নির্বাহী সভাপতি অশোক বড়ুয়া, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. অসীম কুমার সরকার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অনুরাগ চাকমা, কালীদাস ভক্ত। এছাড়াও বক্তব্য রাখেন ডেনমার্ক থেকে আগত সমাজকর্মী এ্যান মার্থা কমব্যাক প্রমুখ।
×