ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

মূল হোতা মঞ্জিল পরিবহনের চালককে গ্রেফতারের চেষ্টা

বাইক আরোহী নাজিমের মৃত্যুতে মামলা, ২ জন জেলহাজতে

প্রকাশিত: ০৫:১৫, ১৯ মে ২০১৮

বাইক আরোহী নাজিমের মৃত্যুতে মামলা, ২ জন জেলহাজতে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দুই বাসের প্রতিযোগিতার মধ্যে পড়ে একটি বাসের ধাক্কায় ঢাকা ট্রিবিউনের বিজ্ঞাপন বিভাগের কর্মকর্তা নাজিম উদ্দিনের (৪১) মৃত্যুর ঘটনায় মামলা হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাতে নিহতের ভায়রা আব্দুল আলীম বাদী হয়ে এ মামলা দায়ের করেন। যাত্রাবাড়ী থানার ওসি আজিজুর রহমান জানান, মামলায় দুজনকে গ্রেফতার করা হলেও মূল হোতা মঞ্জিল বাসের ঘাতক, চালক পলাতক। তাকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। এই মামলায় গ্রেফতার শ্রাবণ সুপার পরিবহনের চালক ওহিদুল ও মঞ্জিল পরিবহনের চালকের সহকারী কামালকে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। মামলাটির তদন্ত চলছে। প্রত্যক্ষদর্শী রাসেল মাহমুদ জানান, বৃহস্পতিবার সকাল পৌনে নয়টার দিকে রাজধানীর হানিফ ফ্লাইওভারের এক লেনের রাস্তায় এক বাস আরেক বাসকে ওভারটেক করার জন্য রেষারেষির মধ্যে পড়ে একটি বাসের ধাক্কায় অনলাইন পত্রিকার বিজ্ঞাপন কর্মকর্তা নাজিম উদ্দিনের মৃত্যু হয়েছে। তিনি জানান, ওই সময় হানিফ ফ্লাইওভার দিয়ে আমিও নাজিম ভাইয়ের পেছনে আরেকটি মোটরসাইকেলে গুলিস্তানের দিকে যাচ্ছিলাম। এক লেনের রাস্তা হওয়ায় তাকে ওভারটেক করা সম্ভব নয় বলে আমি আর ওভারটেকের চেষ্টা করিনি। কিন্তু ফ্লাইওভারে ওঠার পর দেখতে পাই যাত্রাবাড়ী থেকে দুটি বাস রেষারেষি করে চলছে। ওই ভাই (নাজিম উদ্দিন) ফ্লাইওভারের ডানপাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। এ সময় বাসগুলো একবার ডান, একবার বাঁ দিকে যাচ্ছিল। তাই তিনি বারবার বাসগুলোকে হর্ন দিয়ে সতর্ক করছিলেন। মাঝে মাঝে আমিও হর্ন দিচ্ছিলাম। কিছুক্ষণ পর সায়েদাবাদের জনপথ মোড় বরাবর প্রায় ১০০ গজ আগে বাঁ পাশে থাকা বাসটি ওনার বাইককে ধাক্কা দেয়। তিনি বাইক থেকে রাস্তায় ছিটকে পড়ে যান। আমি দ্রুত আমার বাইক থেকে নেমে ওনাকে তুলতে যাওয়ার আগেই ওই বাসের চালক তার ওপর পেছনের দুটি চাকা তুলে দেয়। তিনি জানান, এমন মর্মান্তিক দৃশ্য দেখে আমি স্তম্ভিত হয়ে যাই। এত জোরে চিৎকার দিলাম তবুও মনে হলো কেউ শোনেনি। আমার চোখের সামনে এমন দৃশ্য আমি কোনদিন দেখিনি। সেই দৃশ্যটা এখনও ভাসছে। চালক তাকে ধাক্কা দেয়ার পর যদি গাড়িটি থামাত তাহলে ভাইটা প্রাণে বেঁচে যেত। কিন্তু ঘাতক চালক গাড়ি তো থামালোই না উল্টো গলার ওপর চাকা তুলে দিয়ে পালিয়ে যাচ্ছিল। পরে কয়েক পথচারীর সহযোগিতায় নাজিম ভাইকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরী বিভাগে আনা হয়। এ সময় কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। সে সময় এমন ঘটনা দেখে তিনি বারবার সংবাদকর্মীদের বলছেন, এটা দুর্ঘটনা নয়, হত্যা। এমন হত্যা কোনভাবেই যেন দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ছাড়া পার না পায় সেজন্য সংবাদকর্মীদের ভূমিকা রাখার অনুরোধ করেন তিনি। নিহতের ভাগ্নে মোঃ শাহীন জানান, তিনদিন আগে রাজধানীর আদদ্বীন হাসপাতালে রাইসা আক্তার নামে একটি কন্যাসন্তানের জনক হয়েছেন মামা নাজিম। তিনি জানান, বৃহস্পতিবার সকালে যাত্রাবাড়ীর বাসা থেকে বের হয়ে হাসপাতালে সেই কন্যাসন্তান দেখতে মামা নাজিম মোটরসাইকেল চালিয়ে হানিফ ফ্লাইওভার দিয়ে আসার পথে এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনার শিকার হয়েছেন। নাজিমের গ্রামের বাড়ি ভোলার লালমোহন উপজেলার কালমা ইউপির বালুচরে। বাবার নাম আনিসুল হক। তারা তিন ভাই, পাঁচ বোন। ভাইদের মধ্যে সবার বড় ছিল নাজিম। এছাড়া মুনমুন নামে আট বছরের আরও একটি কন্যা রয়েছে। তার স্ত্রী এখনও আদদ্বীন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
×