ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

গণভবনে আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠক

নৌকায় ভোট চাওয়‍া ‍আমার রাজনৈতিক অধিকার ॥ প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশিত: ০৪:৫৮, ১ এপ্রিল ২০১৮

নৌকায় ভোট চাওয়‍া ‍আমার রাজনৈতিক অধিকার ॥ প্রধানমন্ত্রী

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা সরকারী খরচে নির্বাচনী প্রচার ও জনসভা করার বিষয়ে বিএনপির সমালোচনার জবাবে বলেছেন, ‘আমি একটি দলের সভাপতি। দলের সভাপতি হিসেবে আমি দলের পক্ষে ভোট চাইতেই পারি। এটি আমার রাজনৈতিক অধিকার।’ শনিবার রাতে গণভবনে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে সূচনা বক্তব্য রাখতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী আগামী নির্বাচন সামনে রেখে মানুষের ঘরে ঘরে গিয়ে নৌকার পক্ষে ভোট চাওয়ার জন্য দলীয় নেতাকর্মীদের আহ্বান জানিয়ে বলেন, দেশের মানুষের ঘরে ঘরে গিয়ে বুঝাতে হবে যে, একমাত্র নৌকায় ভোট দিলেই দেশের উন্নয়ন হয়, অগ্রগতি হয়। মানুষের কল্যাণ হয়। নৌকা আমাদের স্বাধীনতা দিয়েছে। নৌকা উন্নয়ন ও অগ্রগতি দিয়েছে। নৌকায় ভোট দিয়েই মানুষ উন্নয়ন পেয়েছে। দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতির এই ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে হবে। আমরা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। এগিয়ে নিয়ে যাব। আমরা উন্নয়নশীল দেশ হয়েছি। ইনশাল্লাহ আমরা উন্নত দেশেও পরিণত হতে পারব। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের সকলকে নৌকা মার্কায় ভোট চাওয়ার আহ্বান জানিয়ে দলটির সভাপতি বলেন, আগামী নির্বাচন হবে। অবশ্যই আমাদের সকলকে জনগণের কাছে যেতে হবে। নৌকায় ভোট চাইতে হবে। সকলকে বলতে হবে এবং বোঝাতে হবে; একমাত্র নৌকায় ভোট দিলেই এ দেশের মানুষ উন্নতি পায়। তিনি বলেন, নৌকায় ভোট দিয়েই দেশের মানুষ স্বাধীনতা পেয়েছে, রাষ্ট্রভাষা বাংলা পেয়েছে আর দেশের উন্নতির ছোঁয়াটাও নৌকা মার্কায় ভোট দিয়েই পেয়েছে। কাজেই এই কথাটা সকলকে বলতে হবে যে, আমরা নৌকা মার্কায় ভোট চাই আর দেশের উন্নয়ন করার সুযোগ চাই। বিএনপি-জামায়াত জোটের সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা ক্ষমতায় আসে ভোগবিলাস করতে, অর্থসম্পদ বানাতে আর মানুষ খুন করতে। ওই বিএনপি জামায়াত জোট মানুষ পুড়িয়ে মারতে পারে। মানুষের ক্ষতি করতে পারে। মানুষকে অত্যাচার করাই তাদের কাজ। আর আমাদের কাজ হচ্ছে আমরা দেশকে শান্তিপূর্ণ করে প্রতিষ্ঠা করতে চাই। মানুষকে সেবা করাই আমাদের কর্তব্য। এই সেবা করার সুযোগটাই আমরা চাই। ভূ-রাজনৈতিক অবস্থানের ফলে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের মধ্যে বাংলাদেশের গুরুত্ব তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের ভৌগলিক অবস্থানের কারণে এখানে আমরা অনেক কাজ করতে পারি। যার মাধ্যমে আমরা নিজেরাই অর্থ উপার্জনের পথ করে নিতে পারি। কিন্তু এ দিকে কেউ কখনও দৃষ্টি দেয়নি। প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের মাঝে সেতুবন্ধন করার দায়িত্বটা বাংলাদেশ নিতে পারে। সেখান থেকেই আমদের বিরাট অর্থনৈতিক অর্জন হতে পারে। কিন্তু এগুলো কখনও কেউ সেভাবে বোঝেও নাই, ভাবেও নাই। সম্প্রতি বাংলাদেশের স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীল দেশের স্বীকৃতি অর্জনের প্রসঙ্গ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, বাংলাদেশ আজ উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হয়েছে। এ ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে হবে। আমরা চাই বাংলাদেশের মানুষের জীবন উন্নত হোক। তারা খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, স্বাস্থ্য ও শিক্ষা পাবে। একটি মানুষও গৃহহারা থাকবে না। জাতির পিতার নেতৃত্বে যুদ্ধ করে আমরা দেশকে স্বাধীন করেছি। আমরা বিজয়ী জাতি। মুক্তিযুদ্ধ করে বিজয় অর্জন করেছি। বিজয়ী জাতি হিসেবেই আমরা বিশ^ দরবারে মাথা উঁচু করে চলব। আমরা কারও কাছে মাথানত করব না। আগামী ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত হওয়ার আশাবাদ ব্যক্ত করে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার সেবক হিসেবে মানুষের কল্যাণ ও উন্নয়নে কাজ করে চলছে। আগামী ২০২০ সালের মধ্যে দেশকে আমরা জাতির পিতার স্বপ্নের ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত দেশে পরিণত করতে পারব। স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী-২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হবে। ২০৪১ সালের মধ্যে অবশ্যই উন্নত ও সমৃদ্ধশালী দেশে পরিণত হবে। প্রারম্ভিক বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু মাত্র সাড়ে ৩ বছরে দেশকে স্বল্পোন্নত দেশে পরিণত করেছিলেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের হত্যাকা-ের পর দেশ পিছিয়ে যায়। ওই সময় যারা ক্ষমতায় এসেছিল, তারা খুনীদের পুরস্কৃত করেছিল, ক্ষমতায় বসিয়েছিল, স্বাধীনতাবিরোধীদের হাতে পতাকা তুলে দিয়েছিল। এর ধারাবাহিকতা এইচএম এরশাদ, খালেদা জিয়া রক্ষা করেছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর সূচনা বক্তব্যের পর তাঁর সভাপতিত্বে কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠক শুরু হয়। বৈঠকে দেশের সর্বশেষ আর্থÑসামাজিক ও রাজনৈতিক এবং দলের সাংগঠনিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা ও সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। বৈঠকে দলের সিদ্ধান্ত অমান্যকারী এবং দলের মধ্যে কোন্দল-দ্বন্দ্ব সৃষ্টিকারীদের বিষয়ে কড়া হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলা হয়, আগামী নির্বাচনের আগেই দলের মধ্যে কোন্দল সৃষ্টিকারীদের তালিকা করে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। বৈঠকে আগামী ১৭ এপ্রিল মুজিব নগর দিবস ও মহান মে দিবস এবং বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের জš§বার্ষিকী উপলক্ষে দলীয় কর্মসূচী চূড়ান্ত করা হয়।
×