স্টাফ রিপোর্টার ॥ যেসব বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ম না মেনে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করছে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেবে সরকার। এ ঘোষণা দিয়ে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেছেন, বহুবার বলার পরও এখনও অনেক বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় ন্যূনতম নিয়ম না মেনে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বেশি মুনাফার লোভে নির্ধারিত ক্যাম্পাস না করে একাধিক ক্যাম্পাসে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এ অনিয়ম করতে পারবে না। তাদের সঠিকভাবে পরিচালনার জন্য আইনগত পথে হাঁটবে সরকার।
রবিবার রাজধানীর ফার্মগেটে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ (কেআইবি) মিলনায়তনে সেন্ট্রাল উইমেন্স ইউনিভার্সিটির সমাবর্তনে তিনি এসব কথা বলেন। সমাবর্তনে মূল বক্তা ছিলেন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ও লেখক ড. রওনক জাহান। উপস্থিত ছিলেন- বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক আব্দুল মান্নান, সেন্ট্রাল উইমেন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. পারভীন হাসান, বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান কাজী জাহেদুল ইসলাম প্রমুখ। শিক্ষামন্ত্রী বলেন, দারিদ্র্য দূরীকরণে শিক্ষার বিকল্প নেই। যতদিন দক্ষ ও যোগ্যতাসম্পন্ন শিক্ষার্থী তৈরি না হয় ততদিন দারিদ্র্য দূর হবে না। এজন্য শিক্ষার্থীদের নিজেদের দক্ষ ও যোগ্য হিসেবে গড়ে তুলতে হবে।
নারী উন্নয়নের অগ্রগতি তুলে ধরে তিনি বলেন, এক সময় নারীদের জন্য সফলতা অর্জন করা কঠিন ছিল। আজ নারীরা অনেক সাহসী। সমাজ ও দেশের কল্যাণে তারা সফলতার সঙ্গে কাজ করছে। তাদের অগ্রগতিতে সামাজিক বাধাও অনেক কমে এসেছে।
ড. রওনক জাহান বলেন, দেশের প্রথম নারী হিসেবে আমি হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটিতে পড়াশোনা করি। আমি শিখেছি আকাক্সক্ষার কোন সীমা নেই। আকাশসম ইচ্ছা থাকতে হবে। একটা সময় নারীদের চলার পথ কঠিন ছিল। এখন আমূল পরিবর্তন হয়েছে। শিক্ষকতার সুযোগ ছাড়া অন্য কাজের সুযোগ বহুগুণে বেড়েছে। শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, সফলতার পথে চলতে গেলে সামাজিক বাধার কথা ভাবলে হবে না। সমাজ তোমার সমালোচনা করবে। মনে রাখবে, যখন সমাজ বোঝে সমাজ উপকৃত হচ্ছে, তখন সমাজে পরিবর্তন আসে। এজন্য নিন্দুকেরা সমালোচনা করবে, নিন্দুকের কথা না শুনে সমাজে রোল মডেল হতে হবে। নারীর অধিকার আদায়ে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি আরও বলেন, অধিকার আদায়ে নারীকেই সোচ্চার হতে হবে। নারীকে স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠায় অর্থনৈতিক স্বাধীনতা ও উপার্জনে নিজের নিয়ন্ত্রণ রাখতে হবে। মনের আনন্দের জন্য ব্যক্তিগত স্বার্থ হাসিলে সব সময় ব্যয় না করে কিছু সময় স্বেচ্ছাশ্রমেও ব্যয় করার আহ্বান জানান জানান ড. রওনক জাহান।
নতুন গ্রেডিংয়ে দুর্নীতি ও অনিয়মের আশঙ্কা ॥ স্বীকৃতিপ্রাপ্ত শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানে নতুন করে গ্রেডিং করলে দুর্নীতি ও অনিয়মের আশঙ্কা করছে নন-এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষক কর্মচারী ফেডারেশন। জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় ফেডারেশনের নেতারা এ আশঙ্কার কথা জানান। ফেডারেশনের সভাপতি অধ্যক্ষ গোলাম মাহমুদুন্নবী ডলারের সভাপতিত্বে সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক।
প্রধান অতিথি বলেন, তিনি বলেন, উন্নত দেশগুলোতে প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থা অনেক বেশি উন্নত। প্রাথমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষকদের ব্যাপক মূল্যায়ন করা হয়। কেননা মূল কাজটি তারাই সম্পাদন করেন। প্রধানমন্ত্রী এমপিওভুক্তির আশ্বাস দিয়েছেন। সে কাজ দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য আমাদের সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টার প্রয়োজন। আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে অনেক সময় এ সমস্যায় পড়তে হয়, সেদিকে সচেতন থাকতে হবে। দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার কিছুটা পরিবর্তন প্রয়োজন বলেও মনে করেন এ শিক্ষাবিদ।
জিপিএ-৫ এর সমালোচনা করে এ শিক্ষাবিদ বলেন, জিপিএ-৫ পাওয়ার প্রতিযোগিতা আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। আমাদের মানবিক গুণাবলী অর্জন করা প্রয়োজন কিন্তু তা সঠিকভাবে হচ্ছে না। আমরা কোন ধরনের ছেলেমেয়ে তৈরি করছি সে বিষয়ে আমাদের লজ্জা হওয়া উচিত। তারা অবলীলায় দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত হয়ে যাচ্ছে।
এ অবস্থা থেকে আমাদের পরিত্রাণ পেতে হবে। আলোচনায় অংশ নেন কলামিস্ট সৈয়দ আবুল মকসুদ, ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ ড. বিনয় ভূষণ, বেগম নূর আফরোজ আলী, বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) নেতা রাজেকুজ্জামান রতন, সিরাজ উদ্দীন আহমেদ, কাজী ফারুকসহ প্রমুখ।