ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

আজ বিজয়া দশমী, প্রতিমা বিসর্জন

প্রকাশিত: ০৫:০৯, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৭

আজ বিজয়া দশমী, প্রতিমা বিসর্জন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আজ বিজয়া দশমী। প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে আজ শেষ হচ্ছে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব দুর্গা পূজা। গতকাল শুক্রবার ছিল দুর্গোৎসবের চতুর্থ দিন; মহানবমী। মহানবমী পূজা শুরু হয় সকাল সাড়ে ৬টায়। সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত হয় আরতি প্রতিযোগিতা। এদিকে শুক্রবার রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ বানানী পূজামন্ডপ পরিদর্শন করেছেন। তিনি এ সময় বলেছেন, বিশ্বকে অবশ্যই ধর্মভিত্তিক রাষ্ট্র গঠনের ধারণা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে এবং ধর্মের অপব্যাখ্যা সম্পর্কে সকলকে সজাগ থাকতে হবে। শুক্রবার দিনভর চলেছে চন্ডীপাঠ আর ভক্তদের কীর্তনবন্দনা। বৃষ্টি উপেক্ষা করে মহানবমীতে বিভিন্ন মন্দির ও মন্ডপে ছিল ভক্ত ও দর্শনার্থীদের ভিড়। অশ্রুসজল নয়নে ভক্তরা দুর্গোতিনাশিনী দেবী দুর্গার পায়ে অঞ্জলি দিয়েছেন। দেবীর বন্দনায় প্রতিটি পূজামন্ডপ ছিল কেবলই বিষাদের ছায়া। রাষ্ট্রপতি পূজামন্ডপ পরিদর্শন শেষে বলেন, ‘অশুভ শক্তি এখনও ধর্মভিত্তিক জাতি অথবা রাষ্ট্র গঠনের চেষ্টায় লিপ্ত যা আমরা লক্ষ্য করি। কিন্তু বিশ্ববাসীকে ধর্মভিত্তিক রাষ্ট্র গঠনের এই মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে’। রাষ্ট্রপতি শুক্রবার হিন্দু সম্প্রদায়ের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজা উপলক্ষে রাজধানীর বনানী পূজামন্ডপে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বক্তৃতাকালে এ কথা বলেন রাষ্ট্রপতি জনগণের সঙ্গে জনগণের অথবা জাতির সঙ্গে জাতির মধ্যে বিরোধের কারণে জনগণ বিভ্রান্ত হয়, এমন কোন ধর্মীয় বাণী অথবা বার্তার অপব্যাখ্যা সম্পর্কে সতর্ক থাকতে জনগণের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, অতীতে ধর্মভিত্তিকে রাষ্ট্রকে কেন্দ্র করে জাতিতে জাতিতে বহু সংঘাত হয়েছে, যুদ্ধ হয়েছে। ধর্মের নামে মনুষ্যত্ব, ভ্রাতৃত্ববোধ, সহমর্মিতা ভুলুন্ঠিত হয়েছে। তিনি বলেন, আমরা এখনও প্রত্যক্ষ করছি, একটি অশুভ মহল ধর্মভিত্তিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, কোন একক ধর্ম নয়, বরং ধর্মনিরপেক্ষতা হবে একটি জাতি ও দেশ গঠনের ভিত্তি। রাষ্ট্রপতি বলেন, কোন একক ধর্ম নয়, বরং সকল ধর্মের অনুসারীদের নিয়ে গড়ে তুলতে হবে ধর্মীয় ও মানবিক মূল্যবোধ সম্পন্ন সৌহার্দ্যময় সমাজ ও রাষ্ট্র। যেখানে সকল ধর্মের লোক পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ, পরমতসহিষ্ণুতা, উদার দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে নিজ নিজ ধর্ম পালন করবে। রাষ্ট্রপতি বলেন, ধর্মীয় উৎসব উদযাপনে ভিন্নতা থাকবে, তবে হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ ও খ্রীস্টানসহ সকল ধর্মের অনুসারীদের চেতনা ও মূল সুর একই। বাংলাদেশে দীর্ঘদিন ধরে সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে সকল ধর্মের লোক নিজ নিজ ধর্ম পালন করে আসছে। তিনি বলেন, অনেক রক্তের বিনিময়ে আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছি। আমাদের প্রধান লক্ষ্যই হচ্ছে, একটি উন্নত ও সমৃদ্ধশালী দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে গড়ে তোলা। বাংলাদেশের প্রতিটি ধর্মের মানুষ নিজ নিজ ধর্ম পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ রেখে পালন করছে। রাষ্ট্রপতি হামিদ বলেন, দেশের প্রতিটি মানুষ যাতে ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের সুফল ভোগ করতে পারে এবং বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারে, এ জন্য সকলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে। রাষ্ট্রপতি এর আগে গুলশান-বনানী সার্বজনীন পূজা পরিষদ আয়োজিত সেখানকার পূজামন্ডপ পরিদর্শন করেন। যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী ড. বীরেন সিকদার, পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি সুভাস চন্দ্র ঘোষ এবং সাধারণ সম্পাদক সুধাংশু কুমার দাস অন্যান্যের মধ্যে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে ছিলেন। শাস্ত্রে আছে, নবমী তিথীতে রাবণ বধের পর শ্রীরামচন্দ্র এই পূজা করেছিলেন। নীলকণ্ঠ ফুল, যজ্ঞের মাধ্যমে অনুষ্ঠিত হয় নবমী বিহিত পূজা। নবমী পূজার মাধ্যমে মানবকুলে সম্পদলাভ হয়। শাস্ত্র অনুযায়ী, শাপলা, শালুক ও বলিদানের মাধ্যমে শুক্রবার দশভুজা দেবীর পূজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। পূজা শুরুর পর ভক্তরা প্রার্থনা করতে থাকেন দেবীর উদ্দেশে। নীল অপরাজিতা ফুল নবমী পূজার বিশেষ অনুষঙ্গ। নবমী পূজায় যজ্ঞের মাধ্যমে দেবী দুর্গার কাছে আহূতি দেয়া হয়। ১০৮টি বেল পাতা, আম কাঠ, ঘি দিয়ে এই যজ্ঞ করা হয়। পূজা শেষে যথারীতি অঞ্জলি, প্রসাদ বিতরণ অনুষ্ঠিত হয়। শুক্রবার শেষবারের মতো দেবীর আশীর্বাদ কামনায় নারী, পুরুষ, শিশু-কিশোর সব বয়সের ভক্ত নিবিষ্ট মনে প্রার্থনা করেন। প্রতিটি ম-পেই কয়েক দফা করে পুষ্পাঞ্জলি দেয়া হয়। বিদায় বেলায়ও চলেছে ঢাক আর শঙ্খধ্বনি, টানা মন্ত্র পাঠ, উলুধ্বনি, অঞ্জলি, ঢাকের বাজনার সঙ্গে ধুনচি নৃত্য। সন্ধ্যায় মন্ডপে মন্ডপে অনুষ্ঠিত হয়েছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। আজ শনিবার সকাল সাড়ে ৭ টায় দশমী পূজা আরম্ভ হবে রামকৃষ্ণ মঠ ও রামকৃষ্ণ মিশনে। ৯টা ৫১ মিনিটের মধ্যে পূজা সমাপন ও দর্পণ বিসর্জন করা হবে। সন্ধ্যায় প্রতিমা বিসর্জন এবং শান্তিজল গ্রহণ। ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির প্রাঙ্গণ থেকে বেলা ৩টায় বিজয়া শোভাযাত্রা বের হবে। সনাতন বিশ্বাস ও বিশুদ্ধ পঞ্জিকামতে, জগতের মঙ্গল কামনায় দেবী দুর্গা এবার মর্ত্যলোকে (পৃথিবী) আসবেন নৌকায় চড়ে। যার ফল হচ্ছে অতি বৃষ্টি ও শস্যবৃদ্ধি। আর স্বর্গালোকে বিদায় নেবেন ঘোটকে (ঘোড়া) চড়ে। যার ফল হচ্ছে রোগ, ব্যধি বাড়বে ও ফসল নষ্ট হবে। বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের তথ্য অনুযায়ী, এবছর সারা দেশে ৩০ হাজার ৭৭টি মন্ডপে শারদীয় দুর্গোৎসব অনুষ্ঠিত হবে। গত বছর ২৯ হাজার ৩৯৫টি মন্ডপে দুর্গা পূজা অনুষ্ঠিত হয়। গত বছর রাজধানীতে ৩২৬টি মন্ডপে দুর্গা পূজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এবছর এ সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৩১টি। বিজয়া দশমী উপলক্ষে বাংলাদেশ বেতার, বাংলাদেশ টেলিভিশনসহ অন্যান্য বেসরকারী টিভি চ্যানেল ও রেডিও বিশেষ অনুষ্ঠানমালা সম্প্রচার করবে। তাছাড়া জাতীয় দৈনিকগুলো এ উপলক্ষে বিশেষ নিবন্ধ প্রকাশ করবে।
×