ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপন জারি

আখতারুজ্জামান ঢাবির ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য

প্রকাশিত: ০৫:৪৬, ৫ সেপ্টেম্বর ২০১৭

আখতারুজ্জামান ঢাবির ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে বর্তমান উপউপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মোঃ আখতারুজ্জামানকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের এ অধ্যাপককে সোমবার উপাচার্য হিসেবে সাময়িকভাবে দায়িত্ব দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এর ফলে উপাচার্য হিসেবে অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকের দেয়াদের শেষ মুহূর্তে এ পদের জন্য সরকার সমর্থক শিক্ষকদের মধ্যে চলা বিরোধের আপাত অবসান হলো। একটি অংশের ভোট ছাড়াই উপাচার্য প্যানেল চূড়ান্ত করা নিয়ে সমালোচনা এবং কয়েক রেজিস্টার্ড গ্র্যাজুয়েটের করা মামলায় ওই প্যানেলের কার্যক্রম স্থগিত হয়ে যাওয়ার এক মাসের মাথায় সোমবার সরকারের তরফ থেকে উপাচার্যের বিষয়ে নতুন এ সিদ্ধান্ত এলো। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকের মেয়াদ পূর্ণ হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের এ্যাকাডেমিক ও প্রশাসনিক কাজ সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার স্বার্থে বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যাপক মোঃ আখতারুজ্জামানকে সাময়িকভাবে উপাচার্যের দায়িত্ব দিয়েছেন। প্রজ্ঞাপনের শর্তে বলা হয়েছে, রাষ্ট্রপতি মনে করলে যেকোন সময় তাকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিতে পারবেন। বিধি অনুযায়ী পদ সংশ্লিষ্ট সুযোগ-সুবিধা ভোগ করবেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান নির্বাহী হিসেবে সর্বক্ষণিক বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অবস্থান করবেন। সরকারের আদেশের পর প্রতিক্রিয়ায় বরগুনার পাথরঘাটায় গ্রামের বাড়িতে অবস্থানরত অধ্যাপক ড. মোঃ আখতারুজ্জামানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, কিছুক্ষণ আগেই শিক্ষামন্ত্রী ফোনে আমাকে বিষয়টি জানিয়েছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদের সাবেক ডিন অধ্যাপক আখতারুজ্জামানকে ২০১৬ সালের ২২ জুন উপউপাচার্য নিয়োগ দেয়া হয়। আওয়ামী লীগ সমর্থক শিক্ষকদের নীল দলের প্যানেল থেকে ২০০৪, ২০০৫ ও ২০০৬ মেয়াদে তিন দফা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছিলেন এ শিক্ষাবিদ ও শিক্ষক নেতা। এই সময় সমিতির সভাপতি ছিলেন সদ্য বিদায়ী উপাচার্য, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক। ১৯৯০ সালে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের প্রভাষক হিসেবে যোগ দেয়ার পর ২০০৪ সালে অধ্যাপক হন ড. আখতারুজ্জামান। তিনি পিএইচডি করেন ভারতের আলীগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ে। ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের চেয়ারম্যান ও কলা অনুষদের ডিন দায়িত্ব পালন করা অধ্যাপক আখতারুজ্জামানকে ২০১৬ সালের ২২ জুন উপউপাচার্য নিয়োগ দেয় সরকার। গত ২৪ আগস্ট উপাচার্য হিসেবে অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকের স্বাভাবিক মেয়াদ শেষ হয়। সিনেটের বিশেষ অধিবেশনে উপাচার্য প্যানেল নির্বাচনের মাধ্যমে ২০১৩ সালের ২৪ আগস্ট তিনি চার বছরের জন্য নিয়োগ পেয়েছিলেন। তবে এর আগে ২০০৯ সালে রাষ্ট্রপতি তাকে অস্থায়ী হিসেবে নিয়োগ দিয়েছিলেন। এবার উপাচার্য প্যানেল নির্বাচন নিয়ে সরকার সমর্থক শিক্ষকদের দুটি অংশ অনেকটা মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছিল। এর আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে কখানই যা ঘনেটি। উপাচার্য হিসেবে অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকের মেয়াদ শেষে আবার এ পদের জন্য তিনি যেমন আগ্রহী ছিলেন তেমনি তার পক্ষে শিক্ষক ও সরকারের বড় একটি অংশের সমর্থন ছিল। তবে সরকার সমর্থক আরেকটি পক্ষ তাদের মধ্য থেকে উপাচার্য করার পক্ষে মত দিয়ে শক্ত অবস্থান নিয়ে সামনে চলে আসেন। বিএনপি-জামায়াত সমর্থক শিক্ষকরাও প্রকাশ্যে আরেফিন সিদ্দিকের নতুন করে নিয়োগের উদ্যোগের বিরোধিতা করেন। এমন অবস্থায়, গত ১৬ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়ের এক চিঠিতে জানানো হয়, ২৯ জুলাই সিনেটের বিশেষ অধিবেশন ও উপাচার্য প্যানেল নির্বাচন হবে। এই চিঠির বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ২৪ জুলাই ১৫ শিক্ষক ও রেজিস্টার্ড গ্র্যাজুয়েট হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন। হাইকোর্ট ওই চিঠির কার্যকারিতা স্থগিত করে। পরে হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত চেয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২৬ জুলাই হাইকোর্টের ওই আদেশ স্থগিত করে চেম্বার আদালত। আর আবেদনটি আপীল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে শুনানির জন্য পাঠিয়ে দেয়া হয়। চেম্বার আদালতের স্থগিতাদেশ নিয়ে ২৯ জুলাই উপাচার্য প্যানেল নির্বাচন সম্পন্ন হয়। শিক্ষকদের মধ্যে বিএনপি সমর্থকদের বর্জন এবং সরকার সমর্থকদের একাংশের আপত্তির মধ্যেই উপাচার্য প্যানেল মনোনয়নে সিনেটের সভা অনুষ্ঠিত হয়। সিনেটের এই বিশেষ অধিবেশনে নির্বাচিত উপাচার্য প্যানেলে আসে তিন জনের নাম। যারা হলেন- উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক কামাল উদ্দিন, বিজ্ঞান অনুষদের ডিন ও নীল দলের আহ্বায়ক আবদুল আজিজ। পরে ৩ আগস্ট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নির্বাচনের জন্য মনোনীত তিন সদস্যের প্যানেলের পরবর্তী কার্যক্রম স্থগিত করে রিট আবেদনটি চার সপ্তাহের মধ্যে হাইকোর্টকে নিষ্পত্তির নির্দেশ দেয় আপীল বিভাগ। আদেশে আপীল বিভাগ জানায়, রিট আবেদন নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান উপাচার্য তার দায়িত্ব পালন করে যাবেন। বিচারপতি জিনাত আরা ও বিচারপতি কাজী মোঃ ইজারুল হক আকন্দের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ গত ২১, ২২ ও ২৩ আগস্ট রিটের শুনানি গ্রহণ করেন। আগামী ৩ অক্টোবর পরবর্তী শুনানির তারিখ নির্ধারিত আছে। এদিকে সরকারের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, উপাচার্য পদ নিয়ে সরকার সমর্থক শিক্ষকদের দুই পক্ষ মুখোমুখি অবস্থানের কারণে বিকল্প চিন্তাভাবনা করছে সরকার। সবার কাছে গ্রহণযোগ্য ব্যক্তি হিসেবে অধ্যাপক ড. আখতারুজ্জামানকে উপাচার্য হিসেবে পরবর্তীতে পূর্ণাঙ্গ দায়িত্বে দেয়া হতে পারে। শিক্ষকরাও মনে করছেন সঙ্কট সমাধানে বিকল্প এ চিন্তাই হতে পারে সবচেয়ে ভাল সমাধান।
×