ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

ফখরুলের গাড়িবহরে হামলার প্রতিবাদে আলোচনা সভা

আগামীতে বিএনপিকে ছাড়া আর নির্বাচন হতে দেয়া হবে না ॥ মওদুদ

প্রকাশিত: ০৬:১৮, ২৪ জুন ২০১৭

আগামীতে বিএনপিকে ছাড়া আর নির্বাচন হতে দেয়া হবে না ॥ মওদুদ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বর্তমান সরকার সমঝোতার মাধ্যমে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে রাজি না হলে বিএনপির কাছে আন্দোলনের বিকল্প থাকবে না বলে হুঁসিয়ারি উচ্চারণ করেছেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ। দলের নেতাকর্মীদের সেই আন্দোলনের জন্য প্রস্তুতি নেয়ার আহ্বানও জানান তিনি। শুক্রবার জাতীয় প্রেসক্লাবে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের গাড়িবহরে হামলার প্রতিবাদে স্বাধীনতা ফোরাম আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। সরকারকে উদ্দেশ করে মওদুদ বলেন, অনেক হলো এখন আপনারা বিদায় নেন। দেশের মানুষ আপনাদের থেকে মুক্তি চায়। মানুষ আপনাদের আর চায় না। তিনি বলেন, আগামীতে আর একদলীয়ভাবে জাতীয় সংসদ নির্বাচন করতে দেয়া হবে না। বিএনপিকে ছাড়া নির্বাচন হতে দেয়া হবে না। ব্যারিস্টার মওদুদ বলেন, দেশের অবস্থা এমন হবে এমনটা কখনও চিন্তাও করিনি। এই পরিস্থিতি কীভাবে মোকাবিলা করা যায় এটা এখন ভাবতে হবে। এজন্য সবাইকে আন্দোলনের জন্য প্রস্তুত হতে হবে। তিনি বলেন, চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ায় মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের গাড়িবহরে হামলার পর বিএনপির স্থানীয় নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে পাল্টা মামলা দায়েরকে দুরভিসন্ধিমূলক। অপরাধ করল তারা আবার তারাই উল্টা মামলা দায়ের করেছে। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের গাড়িবহরে হামলার দৃশ্য সবাই দেখেছে ভিডিও ফুটেজে। কারা কারা সেখানে ছিল তাও দেখেছে। ঘটনায় জড়িত সমস্ত মানুষের ছবি স্পষ্টভাবে দেখা গেছে। তারা সকলে ছিল আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের। এটা সারা জাতি দেখেছে। এখানে তদন্ত করার কী আছে? মওদুদ বলেন, আওয়ামী লীগের স্বভাব তো আমরা জানি। তারা নিজেরা অপরাধ করে তারপরে যারা অপরাধ করে নাই, তাদের বিরুদ্ধে আরেকটা মামলা দাঁড় করান। কারণ আদালতে গেলে সুবিধা পায় তারা। তারা বলবে যে, এখানে দুটি মামলা হয়েছে। একটা মামলা পক্ষ, আরেক মামলা প্রতিপক্ষ করেছে। নিজেদের অবস্থানকে একটু সহজ করবার জন্য তারা এই কাজটা করেছে। আয়োজক সংগঠনের নেতা আবু নাসের মুহাম্মদ রহমাতুল্লাহর সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শওকত মাহমুদ, বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান হাবিব, দলের কেন্দ্রীয় নেতা খালেদা ইয়াসমীন, নিপুর রায় চৌধুরী, শাহ নেসারুল হক, এলডিপির যুগ্ম মহাসচিব সাহাদাত হোসেন সেলিম, জাতীয় দলের সভাপতি সৈয়দ এহসানুল হুদা প্রমুখ। খালেদা জিয়াকে ঘন ঘন আদালতে যেতে বাধ্য করা সরকারের নীলনক্সাÑ রিজভী দুর্নীতির মামলায় বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে ঘন ঘন আদালতে যেতে বাধ্য করা সরকারের নীল নক্সা বলে অভিযোগ করেছে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রীর প্রতি এই আচরণ অমানবিক, ন্যায়নীতি পরিপন্থী ও একদলীয় দুঃশাসনের বর্ধিত প্রকাশ। শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর নয়াপল্টন বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ অভিযোগ করেন। রিজভী বলেন, সামনে ঈদ অথচ সাধারণ মানুষের মনে আগের মতো ঈদের সেই আনন্দ নেই। কারণ মোটা চাল কিনতে হচ্ছে ৫০ থেকে ৫৫ টাকায়। তার ওপর নিত্য প্রয়োজনীয় অন্যান্য দ্রব্যমূল্যের সীমাহীন উর্ধগতির কারণে মানুষ হিমশিম খাচ্ছে। ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের জন্য ঈদের নতুন পোশাক কিনতে বাবা মায়ের নাভিশ্বাস উঠছে। বিএনপির মুখপাত্র বলেন, যারা ক্ষমতায় আছেন তারা তো হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট করছেন তাদের তো কোন অসুবিধা নেই। তারা দেশে ঈদের মার্কেট করছেন না, শোনা যাচ্ছে সিঙ্গাপুর, ব্যাংকক ও কলকাতার মার্কেটে তাদের ভিড়। তাই তারা দেশের দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারে কোন চিন্তা করে না। রিজভী বলেন, দেশের রাষ্ট্র ব্যবস্থা এখন এমন অবস্থায় উপনীত হয়েছে যে, ভারতের ওপর নির্ভরশীলতাই যেন দেশের মানুষের ভাগ্যে নির্ধারিত হয়েছে। গণমাধ্যমের সংবাদ অনুযায়ী এবার দুই লাখ লোক কলকাতাসহ ভারতের বিভিন্ন মার্কেটে ঈদের কেনাকাটা করেছে। তাই দেশের ব্যবসায়ীদের মাথায় হাত। দেশের ব্যবসা প্রতষ্ঠান ও বিপণিবিতানগুলোতে বেচাকেনা নেই বললেই চলে। সারাদেশের মানুষের মধ্যে অনিশ্চয়তা ও হতাশার ছাপ বিদ্যমান। রুহুল কবির রিজভী বলেন, বৃহস্পতিবার খালেদা জিয়া আদালতে হাজিরা দিতে গেলে সেখানে উপস্থিত নেতাকর্মীদের মধ্য থেকে হাজারীবাগ থানা যুবদল সভাপতি আবুল খায়ের লিটন, যুবদল নেতা হৃদয়, বিএনপি নেতা মোখলেছুর রহমান, সোলেমান আলী ও লুৎফর রহমানকে গ্রেফতার করে পুলিশ। আমি এই গ্রেফতারের ঘটনার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং অবিলম্বে তাদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলা প্রত্যাহার ও নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানাচ্ছি। রিজভী বলেন, ঈদের মাত্র ক’দিন বাকি থাকলেও বৃহস্পতিবার খালেদা জিয়াকে আদালতে হাজিরা দিতে হয়েছে। তার আগের সপ্তাহগুলোতেও বিএনপি চেয়ারপার্সনকে একইভাবে রাজনৈতিক হয়রানিমূলক মামলায় আদালতে হাজিরা দিতে হয়েছে। ঈদের দুদিন পর অর্থাৎ ২৯ জুন তাকে আবারও হাজিরা দিতে হবে। এটি বিএনপি চেয়ারপার্সনের ওপর সরকারের পরিকল্পিত নির্যাতনের বহিঃপ্রকাশ। কোন রকম বিরাম বা বিরতি না দিয়ে ক্রমাগত প্রতি সপ্তাহে আদালতে উপস্থিত করানো বিএনপি চেয়ারপার্সনকে হয়রানি করার উদ্ধত আচরণ। রিজভী বলেন, বিএনপির মতো বিরোধী দলগুলোকে বিপর্যস্ত করাই বর্তমান সরকারের একমাত্র টার্গেট। এরই অংশ হিসেবে চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ায় মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের গাড়ি বহরে হামলা করা হয়েছে। যদি বিএনপি মহাসচিব রাস্তা পরিবর্তন না করতেন তাহলে তার প্রাণনাশেরও আশংকা ছিল। আর এ ঘটনায় যখন সমালোচনার ঝড় বইছে, তখন আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ তার দলীয় ক্যাডারকে সিএনজি ড্রাইভার বানিয়ে বিএনপি নেতাদের নামে বানোয়াট, ভিত্তিহীন ও কাল্পনিক মামলা দায়ের করেছেন। আমরা অবিলম্বে এ মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছি। সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, হাবিব-উন-নবী খান সোহেল, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ প্রমুখ।
×