ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

বাজেট নিয়ে মতবিনিময়

শিক্ষা স্বাস্থ্য ও সামাজিক নিরাপত্তায় আরও বেশি বরাদ্দ প্রয়োজন ছিল

প্রকাশিত: ০৫:০৪, ৮ জুন ২০১৭

শিক্ষা স্বাস্থ্য ও সামাজিক নিরাপত্তায় আরও বেশি বরাদ্দ প্রয়োজন ছিল

স্টাফ রিপোর্টার ॥ প্রস্তাবিত ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেট যতটা প্রবৃদ্ধিমুখী ততটা উন্নয়নমুখী নয়। বাজেটে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সামাজিক নিরাপত্তা খাতে আরও বেশি বরাদ্দ প্রয়োজন ছিল। শিক্ষায় জিডিপির মাত্র ২ দশমিক ২ শতাংশ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। তা বৃদ্ধি করে সর্বনিম্ন ৪ শতাংশ করা প্রয়োজন। সরকার ব্যাংক খাতে যে ভর্তুকি দিচ্ছে তা দিয়েই অন্তত ৫ লাখ মানুষের দারিদ্র্য দূর করা সম্ভব। জনগণের করের টাকায় রুগ্ন ব্যাংক ও শিল্পকে টিকিয়ে রাখার কোন মানে নেই। বাজেটের আকার বাড়লেও শতাংশিক হিসেবে বাজেট বাস্তবায়ন কমে আসছে। ২০১১-১২ অর্থবছরে বাজেটের ৯৩ শতাংশ বাস্তবায়ন হলেও ২০১৫-১৬ অর্থবছরে তা কমে ৭৮ শতাংশে নেমে এসেছে। এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে প্রশাসনিক দক্ষতা নিশ্চিত করতে হবে। একই সঙ্গে বাজেট বাস্তবায়নে সরকারকে আরও বেশি মনোযোগ দিতে হবে। বুধবার রাজধানীর মহাখালী ব্র্যাক সেন্টারে ‘জাতীয় বাজেট ২০১৭-১৮ : প্রত্যাশা প্রাপ্তি ও চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন। এই মতবিনিময় সভার আয়োজন করে ব্র্যাক ও ইনস্টিটিউট অব ইনফরমেটিকস এ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (আইআইডি)। এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ব্র্যাকের গবেষণা ও মূল্যায়ন বিভাগের পরিচালক অধ্যাপক ড. আব্দুল বায়েস। মূল প্রবন্ধ পাঠকালে অধ্যাপক ড. আব্দুল বায়েস বলেন, ব্যাংকের ভর্তুকি দিয়েই ৫ লাখ মানুষের দারিদ্র্য দূর করা সম্ভব। জনগণের করের টাকায় এ ধরনের রুগ্ন ব্যাংক ও শিল্পকে টিকিয়ে রাখার কোন মানে নেই। এর মাধ্যমে অদক্ষতাকেই পুরস‹ৃত করা হচ্ছে। এ সময় তিনি কয়েকটি সুপারিশ তুলে ধরে বলেন, প্রস্তাবিত বাজেট যতটা প্রবৃদ্ধিমুখী ততটা উন্নয়নমুখী নয়। শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সামাজিক নিরাপত্তা খাতে আরও বেশি বরাদ্দ প্রয়োজন। শিক্ষায় মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ২ দশমিক ২ শতাংশ বরাদ্দ হয়েছে। তা বৃদ্ধি করে সর্বনিম্ন ৪ শতাংশ করা প্রয়োজন। স্বাস্থ্য খাতেও বরাদ্দ বাড়ানো দরকার জানিয়ে তিনি বলেন, স্বাস্থ্য সেবায় এনজিও’র অংশীদারিত্ব বৃদ্ধি করতে হবে। আমরা মনে করি, ভ্যাটের হার ১৫ শতাংশের নিচে হলে ভাল হয়। ব্যাংক হিসেবের ওপর যে আবগারি শুল্কের প্রস্তাব করা হয়েছে, আমরা চাই তা তুলে নেয়া হোক। অনুষ্ঠানে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা মোঃ আজিজুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশে বাজেট বাস্তবায়ন একটা বড় সমস্যা। প্রতিবছরই বাজেট বাস্তবায়নের মাত্রা কমছে। ২০১১-১২ অর্থবছরে বাজেটের ৯৩ শতাংশ বাস্তবায়ন হয়েছিল। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে তা কমে ৭৮ শতাংশে নেমে এসেছে। এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে হলে প্রশাসনিক দক্ষতা নিশ্চিত করতে হবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশে ভাল কর্মকর্তাদের পুরস্কারের কোন ব্যবস্থা নেই। আবার যারা দুর্নীতিবাজ ও অদক্ষ, তাদেরও শাস্তির কোন ব্যবস্থা নেই। ফলে দুর্নীতি বাড়ছে। ভাল কাজ কমছে। তিনি আরও বলেন, অবকাঠামো খাতে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি) যথেষ্ট সফলতা পেয়েছে। প্রতিবেশী দেশ ভারতেও পিপিপি এখন বেশ জনপ্রিয়। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী এতে সরাসরি তত্ত্বাবধান করলেও এ খাতের অগ্রগতি সন্তোষজনক নয়। প্রতিবছর কেবল পিপিপিতে বরাদ্দ রাখা হয়। কিন্তু তা খরচ হয় না। ব্র্যাক ও আইআইডির করা এক জরিপে দেখা গেছে, দেশের ৫৬ দশমিক ৫ শতাংশ মানুষ মনে করে বাজেট ঘোষণার পরপর নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়ে। আর ৫১ দশমিক ৫ শতাংশ সন্তানের লেখাপড়াকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মনে করেন। ওই জরিপে ৫ হাজার মানুষের মতামত নেয়া হয়েছে বলে জানানো হয়। ব্র্যাকের পক্ষে অনুষ্ঠানে এই তথ্য তুলে ধরা হয়। স্ট্র্যাটেজি, কমিউনিকেশন্স এ্যান্ড এমপাওয়ারমেন্টের উর্ধতন পরিচালক আসিফ সালেহর সভাপতিত্বে সভায় প্যানেল আলোচক হিসেবে আরও অংশ নেন ব্র্যাকের মাইক্রোফিন্যান্স ও টিইউপি কর্মসূচীর পরিচালক শামেরান আবেদ, শিক্ষা কর্মসূচীর পরিচালক ড. শফিকুল ইসলাম, স্বাস্থ্য ও পুষ্টি কর্মসূচীর পোগ্রাম হেড মোঃ আরিফুল আলম প্রমুখ।
×