ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

যুদ্ধাপরাধী বিচার;###;রঞ্জিত ভট্টাচার্যের জবানবন্দী

রাজাকার ও পাক আর্মি আমাদের বাড়িতে লুটপাট চালায়

প্রকাশিত: ০৬:১৪, ৩০ মে ২০১৭

রাজাকার ও পাক আর্মি আমাদের বাড়িতে লুটপাট চালায়

স্টাফ রিপোর্টার ॥ একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে মৌলভীবাজারের শামসুল হোসেন তরফদারসহ ৫ রাজাকারের বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের ১৩তম সাক্ষী রঞ্জিত ভট্টাচার্য জবানবন্দী প্রদান করেছেন। জবানবন্দীতে সাক্ষী বলেন, রাজাকার ও পাকিস্তানী আর্মিরা আমাদের বাড়িতে লুটপাট চালায়। এরপর আমাকে, আমার বড় ভাই রসরাজ ভট্টাচার্য, জেঠাত ভাই মনোরঞ্জন ভট্টাচার্যকে ও তার ছেলে মনিন্দ্র ভট্টাচার্যকে ধরে নিয়ে যায়। চরথাপ্পড় মেরে আমাকে ছেড়ে দেয়। পরবর্তীতে অন্যান্যদেরও নির্যাতন শেষে ফেরত দেয়া হয়। সাক্ষীর জবানবন্দী শেষে আসামিপক্ষের আইনজীবী তাকে জেরা করেন। পরবর্তী সাক্ষীর জন্য ২৪ নবেম্বর দিন ধার্য করা হয়েছে। অন্যদিকে শেরপুরের নকলা থানার দুই রাজাকার আকরাম হোসেন ও এমডি ইমদাদুল হককে অধিকতর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তদন্ত সংস্থার কর্মকর্তাবৃন্দ ১১ ও ১২ জুন তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করবেন। চেয়ারম্যান বিচারপতি আনোয়ারুল হকের নেতৃত্বে তিন সদস্যবিশিষ্ট আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ আদেশ প্রদান করেছেন। এ সময় প্রসিকিউশনের পক্ষে ছিলেন প্রসিকিউটর সুলতান মোঃ সিমন, প্রসিকিউটর আবুল কালাম। অন্যদিকে আসামিপক্ষে ছিলেন এ্যাডভোকেট আবদুস সুবহান তরফদার। সাক্ষী তার জবানবন্দীতে বলেন, আমার নাম রঞ্জিত ভট্টাচার্য। আমার বর্তমান বয়স আনুমানিক ৭৭ বছর। আমার ঠিকানা গ্রাম-উত্তরভাগ, থানা-রাজনগর, জেলা-মৌলভীবাজার। ১৯৭১ সালে আমি চাঁনভাগ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করতাম। বর্তমানে আমি অবসর জীবনযাপন করছি। ১৯৭১ সালের ২৭ নবেম্বর সকাল ৯টার দিকে আসামি মোঃ উজের আহম্মেদ ও আসামি মোঃ নেচার আলীসহ কয়েকজন রাজাকার আমাদের বাড়িতে এসে লুটপাট করে। এরপর এই আসামি ও রাজাকাররা আমাকে, আমার বড় ভাই রসরাজ ভট্টাচার্য, আমার জেঠাত ভাই মনোরঞ্জন ভট্টাচার্য ও তার ছেলে মনিন্দ্র ভট্টাচার্যকে আটক করে বেঁধে উত্তর দিকে হাজী নছিব আলীর (বর্তমানে মৃত) বাড়ির দিকে নিয়ে যায়। নছিব আলী ছিল উত্তরবাগ ইউনিয়নের শান্তি কমিটির কনভেনার। আমাদের বাড়ির বাইরে পুকুর পাড়ে নিয়ে যাওয়ায় পর আসামি মোঃ নেছার আলী ও আসামি মোঃ উজেব আহম্মেদ চৌধুরী আমাকে চরথাপ্পড় মেরে ছেড়ে দেয় এবং বাকি তিনজনকে নিয়ে যায়। আমি তারপর আমাদের ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শাহ কুতুব আলীর (বর্তমানে মৃত) বাড়ির দিকে যাওয়ার পথে তার সঙ্গে আমার দেখা হয়। এবং তাকে উল্লেখিত ঘটনা বলি। তখন তিনি আমাকে বলেন, আমি নছিব আলীর বাড়িতে যাব, তুমি তোমার বাড়িতে চলে যাও। ওই দিন সকাল আনুমানিক সাড়ে ৯টা ১০টার দিকে আমি বাড়িতে ফিরে আসার পথে দেখি, ১০-১২ জন পাকিস্তানী আর্মি নছিব আলীর বাড়ি থেকে মনোরঞ্জন ভট্টাচার্য (বর্তমানে) ও মনিন্দ্র ভট্টাচার্য (বর্তমানে মৃত) আমাদের বাড়িতে আসে। তাদের কছে আমি আমার ভাই রসরাজ ভট্টাচার্যের খবর জানতে চাইলে তারা জানায়, তিনি আসবেন কি না জানি না। বিকেল ৪টা ৫টার দিকে হঠাৎ দেখি আমার ভাই রসরাজ ভট্টাচার্য (বর্তমানে মৃত) বাড়িতে ফিরে আসেন। তিনি ফিরে এসে জানান, তিনি পাকিস্তানী আর্মি ও রাজাকারদের কাছে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্পর্কে তথ্য প্রদান করবে মর্মে অঙ্গীকার প্রদান করলে, তারা তাকে ছেড়ে দেয়। আমরা বড় ভাই রসরাজ ভট্টাচার্য ২০১৬ সালে নবেম্বরে মারা যান। আমার বর্ণিত দুইজন আসামি আমাদের স্থানীয় বিধায় তাদের ঘটনার আগে থেকে চিনতাম। তদন্তকারী কর্মকর্তা আমাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন। আমি বর্তমানে চোখে ভাল দেখি না।
×