ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে কক্সবাজারে নামবে বোয়িং ৭৩৭

প্রকাশিত: ০৫:৪৪, ৬ মে ২০১৭

প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে কক্সবাজারে নামবে বোয়িং ৭৩৭

আজাদ সুলায়মান/এইচ এম এরশাদ ॥ অবশেষে এলো সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। যার অপেক্ষায় ছিল কক্সবাজারবাসী। এখানেই আজ নামানো হচ্ছে বোয়িং ৭৩৭ উড়োজাহাজ। আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে উন্নীত করার আগে এটিই প্রথম বাণিজ্যিক ফ্লাইট। কক্সবাজারবাসীর জন্য নিঃসন্দেহে আজ এক ঐতিহাসিক দিন। সূচিত হতে যাচ্ছে নবদিগন্তের। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বহনকারী মধ্যম সারির বোয়িং ৭৩৭ উড়োজাহাজ আজ কক্সবাজার অবতরণের মধ্য দিয়ে পূরণ হবে দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্ন। প্রথমবারের মতো বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বোয়িং ৭৩৭-৮০০ উড়োজাহাজের কক্সবাজার রুটে বাণিজ্যিক ফ্লাইট পরিচালনার শুভ সূচনা। প্রধানমন্ত্রী ছাড়া আরও বেশকিছু বাণিজ্যিক যাত্রী থাকছেন এই ভিভিআইপি ফ্লাইটে। মাত্র দুই বছর আগে প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা দিয়েছিলেন এটাকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে উন্নীত করার। তারপর সিভিল এভিয়েশন দিবারাত্রি, শীত-বর্ষা সব মৌসুমে সমানতালে চালিয়েছে নির্মাণযজ্ঞ। ৬শ’ কোটি টাকা ব্যয়ে এই প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ের কাজ শেষ হচ্ছে এ বছরের শেষ দিন। পহেলা জানুয়ারি উদ্বোধনের লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে যাওয়া কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। এরই মধ্যে ৭০ ভাগেরও বেশি কাজ সমাপ্তির পথে। প্রধান প্রকৌশলী সুধেন্দুু বিকাশ গোস্বামীর নেতৃত্বে গড়া ৫৮ দেশী-বিদেশী মেধাবী ও অভিজ্ঞ প্রকৌশলী এই বিমানবন্দরের উন্নয়ন কাজে ব্যস্ত। সিভিল এভিয়েশনের চেয়ারম্যান এহসানুল গনি চৌধুরী বলেছেন, অবিশ্বাস্য গতিতে শেষ করা হচ্ছে কক্সবাজার বিমানবন্দরের প্রথম পর্যায়ের কাজ। দ্বিতীয় পর্যায়েরও কাজও শুরু করার পরিকল্পনা চূড়ান্ত। এজন্যই কক্সবাজারবাসীর জন্য আজ শুধুু আনন্দের দিনই নয়, গৌরবেরও। পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকতে বিশ্বের যে কোন দেশ থেকে সরাসরি আকাশপথে পৌঁছার সব রকমের অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ও সুযোগ-সুবিধা সংবলিত কক্সবাজার বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে উন্নীত করার প্রকল্পটি বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর আগ্রহের ফসল। তিনি এ প্রকল্পের বিষয়ে যথেষ্ট কৌতূহলী। বর্তমান সরকারের বিগত আমলেই প্রকল্পের কাজটি হাতে নেয়া হয়। কিন্তু দরপত্র জটিলতায় সে সময়ে কাজ শুরু করা সম্ভব হয়নি। দেশী-বিদেশী অর্থায়নে প্রকল্পটি দুটি পর্যায়ে ভাগ করা হয়। প্রথম পর্যায়ে প্রায় ৬শ’ কোটি টাকা ব্যয়ে ৩০ মাসের মধ্যে এটিকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে উন্নীত করার জন্য কার্যাদেশ দেয়া হয়। এ জন্য নিয়োগ করা হয় দেশী-বিদেশী তিন পরামর্শক প্রতিষ্ঠানÑ কোরিয়ার ইয়োশিন ইঞ্জিনিয়ারিং কর্পোরেশন, আইএল শিন হাইটেক ও দেশী ডেভেলপমেন্ট ডিজাইন কনসালট্যান্ট লি। প্রকল্পের ঠিকাদারির দায়িত্বও পেয়েছে কোরিয়ার হাল্লা এমএইচ শিওকওয়াং জেভি ও দেশীয় শীর্ষস্থানীয় মীর আখতার হোসেন লিমিটেড। বেসামরিক বিমান ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন জানিয়েছেন, এ প্রকল্পের আওতায় প্রায় শেষের পথে রয়েছে-বর্তমান রানওয়ে ৭৬৬৫ ফুট থেকে ৯ হাজার ফুটে উন্নীত করণ, ১৫০ ফুট রানওয়ের চওড়া বৃদ্ধি করে ২০০ ফুটে উন্নীতকরণ, রানওয়ের শক্তিবৃদ্ধিকরণ, এয়ারফিল্ড লাইটিং সিস্টেম স্থাপন, ফায়ার ফাইর্টিং ভেহিক্যাল ক্রয়, সমুদ্র তীরবর্তী বাঁধ নির্মাণ ও নাব্য যোগাযোগের জন্য আইএলএস, ডিভিওআর স্থাপন। প্রকল্পের জন্য প্রয়োজনীয় ৩২১ দশমিক ৩৪ হেক্টর ভূমি ইতোমধ্যে অধিগ্রহণ করে ভূমি উন্নয়নের কাজ বহুলাংশেই সমাপ্তির পথে। এ জন্য ক্ষতিগ্রস্ত লোকদের পুনর্বাসনের কাজও যথেষ্ট গুরুত্ব সহকারে করা হচ্ছে। এ ছাড়াও প্রকল্পের অন্যান্য গুরুত্ব কাজগুলো হচ্ছেÑ ৮৩৯০ বর্গমিটার নিরাপত্তা প্রাচীর নির্মাণ, ড্রেনেজ সিস্টেম নির্মাণ ও অগ্নি নির্বাপক গাড়ি সরবরাহ। পুরনো জরাজীর্ণ কক্সবাজার বিমানবন্দরের চারপাশেই একযোগে চলছে কর্মযজ্ঞ। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সাইট অফিস, লেবার শেড, স্টোর, ল্যাবরেটরি ভবন, মেটারিয়াল স্টেক ইয়ার্ড ও প্লান্ট নির্মাণের মাধ্যমে গোটা বিমানবন্দরের চেহারা বদলে দিয়েছে। সমুদ্র তীরবর্তী জমি থেকে মাটি ও বালু কেটে সমতল করার কাজ সম্পন্ন হয়েছে। দিবারাত্রি বুলডেজার দিয়ে মাটি খনন ও মসৃণ করা হয়েছে। রাতে এক শ’ ফ্লাড লাইটের আলোতে যখন সবকটা পয়েন্টে কাজ চলে তখন সমুদ্রের নাবিকেরও দৃষ্টিগোচর হয় দিবালোকের মতোই। উল্লেখ্য, চল্লিশের দশকে ব্রিটিশরা যুদ্ধবিমান উড্ডয়ন অবতরণের জন্য কক্সবাজারে প্রথম এয়ারফিল্ড তৈরি করে। সে সময় ২ আসন বিশিষ্ট যুদ্ধ বিমানের জন্য এটি নির্মিত হলেও সময়ের ব্যবধানে এখন দেড় শতাধিক যাত্রী বহনকারী উড়োজাহাজও ওঠানামা করতে পারে এই বিমানবন্দরে। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে ছোট বাণিজ্যিক বিমান পরিচালনার উপযোগী করে গড়ে তোলা হয় কক্সবাজার বিমানবন্দরকে। প্রথমে এ্যাডভান্স টার্বো-প্রফ (এটিপি) বিমান চলাচল করলেও বিগত এক দশকে এখানে ড্যাশ-৮ কিউ-৪০০ উড়োজাহাজ দিয়ে ফ্লাইট পরিচালনা করে বাংলাদেশ বিমানসহ দেশীয় বিভিন্ন এয়ারলাইন্স। আজ থেকে ১৬২ আসনবিশিষ্ট উড়োজাহাজ ঢাকা-কক্সবাজার রুটে নিয়মিত চলবে। এ বিমানবন্দর চালু হলে গোটা কক্সবাজারের চেহারা পাল্টে যাবে। দেশের সীমানা ছাড়িয়ে আন্তর্জাতিক পরিম-লে বিস্তুৃতি ঘটবে পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকতের সৌন্দর্যের বর্ণচ্ছটা। বিশেষ করে আঞ্চলিক দেশগুলোর মধ্যে- মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, হংকং, মিয়ানমার, ভারত, সিঙ্গাপুর ঝুয়াংঝু ও কোরিয়ার অন্যতম নির্ভরযোগ্য বিমানবন্দরের মর্যাদা পাবে এটা। এটা তখন পর্যটনের এভিয়েশন সেক্টরের আঞ্চলিক হাব হিসেবে গড়ে উঠবে। যা গোটা কক্সবাজার নয়- গোটা দেশের অর্থনীতি ও ঐতিহ্যকে সমৃদ্ধ করবে। এদিকে প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। তিনি ৮০ কিলোমিটার মেরিন ড্রাইভসহ সাতটি প্রকল্পের উদ্বোধন ও আটটি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন। তাকে স্বাগত জানাতে জেলা প্রশাসন, সেনাবাহিনী, আওয়ামী লীগ, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। জনসভার মঞ্চ তৈরির কাজও শেষ পর্যায়ে। নিরাপত্তার জন্য প্রস্তুত রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাও। কক্সবাজার সফরে একটি জনসভায় প্রধান অতিথির ভাষণ ছাড়াও সাত প্রকল্পের উদ্বোধন করবেন। এছাড়া আটটি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন। কক্সবাজার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর উদ্বোধনের তিনি ইনানিস্থ সেনাবাহিনীর অধীনে নির্মিত মেরিন ড্রাইভ সড়কের উদ্বোধন করবেন। এছাড়া কক্সবাজার সরকারী কলেজের একাডেমিক ভবন, কক্সবাজার সরকারী কলেজ ও সরকারী মহিলা কলেজের ছাত্রী নিবাস, মহেশখালী আনোয়ারা গ্যাস সঞ্চালন পাইপ লাইন, উখিয়ার বঙ্গমাতা ফজিলাতুননেছা মুজিব মহিলা কলেজের ভবন উদ্বোধন করবেন। প্রধানমন্ত্রী একই সঙ্গে বাঁকখালী নদীর ওপর বক্সগার্ড ব্রিজ, কক্সবাজার আইটি পার্ক, নাফ ট্যুরিজম পার্ক, এলএনজি টার্মিনাল, এসপিএম প্রকল্প, কক্সবাজার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের কার্যালয় ও কুতুবদিয়া কলেজের ভবন নির্মাণ কাজের ভিত্তিপ্রস্তুর স্থাপন করবেন।
×