স্টাফ রিপোর্টার ॥ নব্য জেএমবির আধ্যাত্মিক নেতা ও আমির মাওলানা মোঃ আবুল কাশেমের অনুমতির পর গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তরাঁয় হামলা চালিয়েছিল জঙ্গীরা। শুধু হলি আর্টিজান নয়, তিনি বহু হামলার অনুমতি দিয়েছেন। নিয়মানুযায়ী তার অনুমতির পরেই জঙ্গীরা অনেক হামলার ঘটনা ঘটিয়েছে। তাকে সাত দিনের রিমান্ডে পাঠিয়েছেন আদালত।
শুক্রবার ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে এ সংক্রান্ত এক সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপির কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম জানান, মাওলানা আবুল কাশেমকে (৬০) বৃহস্পতিবার রাতে মিরপুর সেনপাড়া পর্বতা এলাকার একটি বিকাশের দোকানের সামনে থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতারের সময় আবুল কাশেম একজনের পাঠানো পনেরো হাজার টাকা ওই বিকাশের দোকানে তুলতে গিয়েছিলেন।
মনিরুল ইসলাম জানান, আবুল কাশেম দিনাজপুরের রানীরবন্দর এলাকার একটি মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল ছিলেন। অনেক আগে থেকেই তিনি সপরিবারে জেএমবির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। জেএমবির আমির ও জামায়াতে ইসলামীর সাবেক কেন্দ্রীয় সূরা কমিটির সদস্য মুফতি মাওলানা সাইদুর রহমান জাফর ২০১০ সালে গ্রেফতার হন। এরপর নারায়ণগঞ্জে পুলিশের সঙ্গে নিহত গুলশান হামলার অন্যতম মাস্টারমাইন্ড বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত কানাডার নাগরিক তামিম চৌধুরীর ২০১৩ সালে বাংলাদেশে আসেন। তিনি রাজশাহীতে জেএমবি সদস্যদের নিয়ে বৈঠক করেন। সেই বৈঠকে আবুল কাশেমও উপস্থিত ছিলেন। এরপর তামিম চৌধুরীর সঙ্গে পরামর্শ করে ২০১৩ সালেই আবুল কাশেম বাংলাদেশে নব্য জেএমবির কার্যক্রম শুরু করেন। আবুল কাশেম জেএমবির বিদ্রোহী অংশ যেটি নব্য জেএমবি হিসেবে পরিচিত তার আমির হন। তিনিই নিজস্ব মতবাদ দিয়ে নব্য জেএমবিকে হিংস্র করে তোলেন।
তিনি নব্য জেএমবির আধ্যাত্মিক নেতা ও বড় হুজুর হিসেবে পরিচিত ছিলেন। যেকোন হামলার আগে সাংগঠনিক নিয়মানুযায়ী জেএমবিকে বড় হুজুরের অনুমতি নিতে হতো। গুলশান হামলার আগেও হামলাকারী জঙ্গীরা আবুল কাশেমের অনুমতি নিয়েছিল। আবুল কাশেমও সার্বিক দিক পর্যালোচনা ও বিচার বিশ্লেষণ করে অনুমতি দিয়েছিলেন। আবুল কাশেমের অনুমতির পরেই হলি আর্টিজানে হামলার ঘটনা ঘটায় জঙ্গীরা। হামলার সঙ্গে আবুল কাশেমের সম্পৃক্ততা কোন পর্যায়ের সে বিষয়ে তদন্ত চলছে।
বন্দুকযুদ্ধে নিহত তামিম চৌধুরী ও নুরুল ইসলাম মারজানও আবুল কাশেমের অনুগত ছিলেন। সম্প্রতি গ্রেফতারকৃত গুলশান হামলার অন্যতম পরিকল্পনাকারী জাহাঙ্গীর আলম ওরফে রাজীব গান্ধী গ্রেফতারের পর আবুল কাশেম সম্পর্কে তথ্য বেরিয়ে আসে। সে অনুযায়ী অভিযান চলে। কিন্তু ঠিকানা মোতাবেক আবুল কাশেমকে পাওয়া যায়নি। এছাড়া বড় মিজান গ্রেফতারের পরেও আবুল কাশেম সম্পর্কে তথ্য জানা যায়।
মনিরুল ইসলাম বলছেন, আবুল কাশেম বড় হুজুর হিসেবে পরিচিত থাকলেও তার আসল নাম শায়খ আবু মোহাম্মদ আইমান হাফিজুল্লাহ বলে জানা গেছে। তার বাড়ি কুড়িগ্রামে। তিনি নামে বেনামে ‘দাওলার আসল রূপ, ‘জিহাদ কেন করবেন’, ‘ইসলামি বসন্ত’ এ রকম বহু জঙ্গীবাদী বইয়ের লেখক তিনি।
আবুল কাশেমকে কল্যাণপুরের জাহাজ বাড়িতে জঙ্গীবিরোধী অভিযানের ঘটনায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে দায়ের করা মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়। মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা পরিদর্শক জাহাঙ্গীর আলম আবুল কাশেমকে ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন করে ঢাকার সিএমএম আদালতে সোপর্দ করেন। বিচারক ঢাকার মহানগর হাকিম সত্যব্রত শিকদার আবুল কাশেমকে ৭ দিনের রিমান্ডে পাঠান। শুনানির সময় আদালতে আবুল কাশেমের পক্ষে কোন আইনজীবী ছিলেন না।
এক প্রশ্নের জবাবে মনিরুল ইসলাম জানান, চলতি বছরের শেষদিকে গুলশানের হলি আর্টিজান হামলা মামলার চার্জশীট দেয়ার প্রস্তুতি চলছে। হামলার ঘটনায় এখন পর্যন্ত ২০ থেকে ২২ জনের সরাসরি জড়িত থাকার তথ্য পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ১৪ জন বিভিন্ন সময় নিহত হয়েছে। তবে সব মিলিয়ে হামলায় জড়িত ৩০ থেকে ৩৫।
প্রসঙ্গত, এর আগে গত বছরের ৮ অক্টোবর ঢাকার আশুলিয়ার এক বাড়িতে র্যাবের অভিযানের সময় পাঁচতলা একটি বাড়ি থেকে লাফিয়ে পড়ে জেএমবির শীর্ষ পর্যায়ের নেতা শায়খ আবু ইব্রাহিম আল হানিফ ওরফে আব্দুর রহমান আয়নাল ওরফে সারোয়ার জাহান নামে একজনের মৃত্যু হয়। তিনি জেএমবির অর্থদাতাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন। তার বাসা থেকে নগদ ৩০ লাখ টাকাও উদ্ধার হয়েছিল।
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: