ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

বাড়তি ব্যান্ডউইথ যোগ হচ্ছে ॥ ইন্টারনেটের দাম পুনর্নির্ধারণ এ মাসেই

প্রকাশিত: ০৫:৫০, ১ মার্চ ২০১৭

বাড়তি ব্যান্ডউইথ যোগ হচ্ছে ॥ ইন্টারনেটের দাম পুনর্নির্ধারণ এ মাসেই

ফিরোজ মান্না ॥ ইন্টারনেটের দাম পুনঃনির্ধারণ এ মাসেই। এ জন্য ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সব মহলের সঙ্গে আলোচনা শেষ করেছে। এর আগে মন্ত্রণালয় গ্রাহক পর্যায় থেকে শুরু করে সুবিধাভোগী (স্টেকহোল্ডার) পর্যন্ত সার্ভে করে। এ মাসেই দেশে ১ হাজার ৩০০ জিবিপিএস ইন্টারনেট ব্যান্ডউইথ যোগ হচ্ছে। ফলে ইন্টারনেট সাধারণ মানুষের কাছে সহজলভ্য করতে মন্ত্রণালয় ইন্টারনেটের দাম পুনঃনির্ধারণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে ইন্টারনেটের দাম রাখতে কাজ শুরু করেছে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়। সব পক্ষের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে ইন্টারনেটের দাম ঠিক করা হবে। তথ্যপ্রযুক্তির সুবিধা সবার হাতে পৌঁছে দিতে এ মাসের মধ্যে ইন্টারনেটের দাম ঠিক করার কাজ চলছে। এছাড়া বাজারে বর্তমানে ইন্টারনেটের যে দাম রয়েছে তা সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার রাইরে। এই বিষয়টি চিন্তা করে নতুন দাম নির্ধারণ হবে। যাতে করে গ্রাহক এবং ব্যবসায়ী কোন পক্ষই ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। সরকারের পক্ষ থেকে নির্দিষ্ট একটি মূল্য থাকবে। যার মধ্যে থেকেই গ্রাহক এবং ব্যবসায়ীদের চলতে হবে। দেশের সব প্রান্তে অপটিক্যাল ফাইবার কেবল সংযোগের মাধ্যমে ইন্টারনেট পৌঁছে দেয়ার জন্য কাজ চলছে। ইন্টারনেটের গতি বাড়ানোর জন্যও কাজ করা হচ্ছে। দ্রুতগতির ইন্টারনেট সেবা না হলে কাজেরও কোন গতি আসবে না। তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর তরুণ প্রজন্ম যাতে দ্রুতগতির ইন্টারনেট সেবা পায় সেটা নিশ্চিত করা হবে। তরুণ প্রজন্ম ভবিষ্যতে তথ্যপ্রযুক্তিবিদ হিসেবে গড়ে উঠবে। দেশে এ মাসেই বাড়তি ইন্টারনেট ব্যান্ডউইথ আসছে। বাংলাদেশ সাবমেরিন কেবল কোম্পানি লিমিটেড (বিএসসিসিএল) জানিয়েছে, দ্বিতীয় সাবমেরিন কেবলের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে কুয়াকাটা ল্যান্ডিং স্টেশন। দ্বিতীয় সাবমেরিন কেবল সংযুক্ত হওয়ায় দেশে অতিরিক্ত ১ হাজার ৩০০ জিবিপিএস ব্যান্ডউইথ পাওয়া যাবে। ভবিষ্যতে আরও ২০০ জিবিপিএস ব্যান্ডউইথ সরবরাহ বাড়ানো সম্ভব হবে। বর্তমানে দেশে ইন্টারনেট ব্যবহারের পরিমাণ ৪০০ জিবিপিএসের বেশি। এই ৪০০ জিবিপিএসের মধ্যে ১২০ জিবিপিএস বিএসসিসিএলের প্রথম সাবমেরিন কেবলের মাধ্যমে আসছে। বাকি ২৮০ জিবিপিএস ব্যান্ডউইথ আইটিসির মাধ্যমে ভারত থেকে আমদানি করা হচ্ছে। বর্তমানে কুয়াকাটা-ঢাকা ব্যাকহোল লিংক বা কেবল স্থাপনের কাজ চলমান রয়েছে। বিটিসিএল কর্তৃক এই ব্যাকহোল লিংক স্থাপনের কাজ সম্পন্ন ও টেস্টিং সম্পন্ন হওয়ার পরে দ্বিতীয় সাবমেরিন কেবলের বাণিজ্যিক কার্যক্রম আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু করা হবে। ঢাকা থেকে কুয়াকাটা ল্যান্ডিং স্টেশনের ট্রান্সমিশন লিংক স্থাপনের কাজ শেষ পর্যায়ে। মার্চ থেকেই বাড়তি ইন্টারনেট সুবিধা সাধারণ মানুষ পেতে শুরু করবে। এদিকে, উপজেলা পর্যায়ে ইন্টারনেট ব্রডব্যান্ড সংযোগ দেয়া হচ্ছে। একই সঙ্গে ইউনিয়ন পর্যন্ত টেলিযোগাযোগ নেটওয়ার্কও বিস্তার করার কাজ চলছে। নেটওয়ার্ক আধুনিকায়ন ও ইন্টারনেট সুবিধা বাড়ানোর জন্য অপটিক্যাল ফাইবার কেবল স্থাপনের কাজ হয়েছে গত জুনে। কোন কোন এলাকায় কেবল স্থাপনের কাজ শেষ হয়েছে। এখন ওই সব এলাকায় যন্ত্রপাতি স্থাপন করা হচ্ছে। বেসরকারী মোবাইল অপারেটররা সারাদেশে ওয়ার্লেস নেটওয়ার্কের মাধ্যমে ইন্টারনেট সেবা দিলেও তা অনেক ব্যয়বহুল। এই সেবা সাধারণ মানুষের পক্ষে নেয়া সম্ভব হচ্ছে না। এ কারণে গ্রাম পর্যাযে ইন্টারনেট সেবা দেয়ার জন্য এনএসএনভিত্তিক টেলিকমিউনিকেশন নেটওয়ার্ক স্থাপনে জন্য চীন প্রকল্পে সহযোগিতা দিচ্ছে। সরকারী অর্থায়নে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হবে। অপটিক্যাল ফাইবার কেবল সংযোগ স্থাপিত হলে গ্রাহকরা নিরবচ্ছিন্নভাবে ইন্টারনেট সুবিধা পাবেন। তখন শহর ও গ্রামের বৈষম্য অনেকাংশে দূর হবে। বিটিসিএল সূত্র জানিযেছে, সারাদেশকে ইন্টারনেট সুবিধার আওতায় আনতে ‘অপটিক্যাল ফাইবার নেটওয়ার্ক ডেভেলপমেন্ট এ্যাট উপজেলা লেভেল প্রজেক্ট’ নামের প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করে বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন কোম্পানি লিমিটেড (বিটিসিএল)। এ প্রকল্পের আওতায় ৭ বিভাগের ৬৪ জেলার ২৯০টি উপজেলায় অপটিক্যাল ফাইবার কেবল বসানোর কাজ শেষ হয়েছে। এডিএসএল, ইন্টারনেট ব্যান্ডউইথের চার্জ কমিয়ে আনা হয়েছে। ব্যয়বহুল কপার কেবলের বদলে অপটিক্যাল ফাইবার ব্যবহার করে খরচ কমানোর পদক্ষেপ হাতে নেয়া হয়েছে। এরই মধ্যে দেশের বিভিন্ন স্থানে মোট সাড়ে চার হাজার কিলোমিটার ফাইবার কেবল লাইন স্থাপনের কাজ শেষ করা হয়। বিটিসিএলের অপটিক্যাল ফাইবার কেবলের সংযোগের কারণেই এসব করা সম্ভব হয়েছে। তবে এক হাজার ইউনিয়নে সংযোগ প্রকল্পটি বার বার পিছিয়ে যাচ্ছে টাকার অভাবে। ইউনিয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে গ্রাম পর্যায়ে ইন্টারনেট সেবা পৌঁছে যেত। বিটিসিএলের এক কর্মকর্তা বলেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়নের সব প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করা হয়েছে। এখন টাকা পেলেই প্রকল্পের কাজ শুরু করা যাবে। তবে বিটিসিএলের টার্গেট রয়েছে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই ইউনিয়ন প্রকল্পের কাজ শেষ করা হবে।
×