ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নামে প্রতারণা

প্রকাশিত: ০৪:১৩, ৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নামে প্রতারণা

স্টাফ রিপোর্টার, যশোর অফিস ॥ চটকদারি বিজ্ঞাপনে নামীদামী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নামে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সঙ্গে প্রতারণা করা হচ্ছে। সরকারী নীতিমালা অমান্য করে দোকান ঘর, বিপণি বিতানে গড়ে উঠেছে এসব প্রতিষ্ঠান। নেই অনুমোদনও। এতে অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা প্রতারণা শিকার হচ্ছে। অনুমোদনহীন এসব প্রতিষ্ঠান তদারকি নেই শিক্ষা বিভাগের। জানা গেছে, যশোর সদরের হাশিমপুর বাজারের রহিমা কলেজিয়েট স্কুল ২০১২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। শুরুতে ৬ষ্ঠ থেকে ১০ম শ্রেণীতে ছাত্রছাত্রী ভর্তি করা হতো। এ বছর থেকে প্লে থেকে দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত ভর্তির বিজ্ঞাপন দেয়া হয়েছে। এলাকায় নামীদামী প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচিত এই স্কুলটি বাজারের একটি মার্কেটের দ্বিতীয় তলায় ছোট ছোট খুপড়ি কক্ষে ক্লাস চলছে। প্রতিষ্ঠানটি অনুমোদিত না হলেও চটকদারি বিজ্ঞাপন, লিফলেট, ক্যালেন্ডার সরবরাহ করে অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের আকৃষ্ট করা হচ্ছে। ভর্তির পর শিক্ষার্থীদের অন্য স্কুলের নামে রেজিস্ট্রেশন করিয়ে পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ দেয়া হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে স্কুলের পরিচালক এমএসবি রিজওয়ান কাজল জানান, অনুমোদনের জন্য আবেদন করেছি। তবে কোথায় আবেদন করেছেন তার সদুত্তর দিতে পারেননি তিনি। স্কুলের অষ্টম শ্রেণীর ছাত্রী সাদিয়া আক্তার, ৭ম শ্রেণীর পার্থ বড়ুয়াসহ বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী জানায় প্রতিষ্ঠানটি ভাল তাই হাশিমপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এখানে ভর্তি হয়েছে। স্কুলের অধ্যক্ষ জসীম উদ্দীন জানান, এ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা তালবাড়িয়া বহুমুখী মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে জেএসসি পরীক্ষা দেয়। আর ইছালী প্রি-ক্যাডেট মডেল স্কুল থেকে পিএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয়। অনুমোদনহীন আরও একটি প্রতিষ্ঠান আল-হেরা মডেল স্কুল। যেখানে প্লে থেকে ৭ম শ্রেণী পর্যন্ত ভর্তি করা হচ্ছে। স্কুলের সহকারী প্রধান শিক্ষক এলিজা খাতুন জানান, এ পর্যন্ত ২২০ শিক্ষার্থী রয়েছে। ১২ জন শিক্ষক দিয়ে এ পাঠদান করা হয়। অনুমোদন আছে কি না জানতে চাইলে তিনি জানান, প্রক্রিয়া চলছে। শীঘ্রই অনুমোদন পেয়ে যাব। তিনি জানান, এ স্কুলের শিক্ষার্থীরা উপশহর মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে রেজিস্ট্রশন করে জেএসসি ও পিএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয়। সদর উপজেলার পাঁচবাড়িয়া এলাকার লিডেন গ্রামার স্কুলের ভাইস চেয়ারম্যান রায়হান উদ্দীন জানান, প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে এ বছর প্লে থেকে ৭ম শ্রেণী পর্যন্ত ছাত্রছাত্রী ভর্তি করা হচ্ছে। এখানকার শিক্ষার্থীরা মনোহরপুর লিডেন গ্রামার স্কুল থেকে রেজিস্ট্রেশন করে পিএসসিতে অংশ নেয়। অধ্যক্ষ মোস্তাফিজুর রহমান জানান, অনুমোদনের জন্য আবেদন করা হয়েছে, এখনও অনুমোদন হয়নি। ভাড়া বাড়িতে ১৯৯৯ সাল থেকে এ স্কুল পরিচালিত হচ্ছে বলে তিনি জানান। তবে অবৈধ এই প্রতিষ্ঠানে গত ৫ জানুয়ারি যশোর সদর উপজেলা সহকারী শিক্ষা অফিসার সাইফুর রহমান পরিদর্শন করেছেন। তিনি পরিদর্শন খাতায় লিখেছেন ‘শিক্ষার পরিবেশ সন্তোষজনক।’ অনুমোদনহীন প্রতিষ্ঠানে একজন সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তার সন্তোষজনক মন্তব্য নিয়ে সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে। নানা কায়দায় ম্যানেজ করে যশোর সদরের রহিমা কলেজিয়েট স্কুল, লিডেন গ্রামার স্কুল ও আল-হেরা স্কুলের মতো জেলায় তিন শতাধিক অনুমোদনহীন প্রতিষ্ঠান চলছে দিনের পর দিন প্রশাসনের নাকের ডগায়। যশোর শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, জেলায় অনুমোদনহীন প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে ২৫৫টা। এর মধ্যে মাত্র ৩৫টি প্রতিষ্ঠানের সরকারী বই প্রাপ্তির জন্য নিবন্ধন রয়েছে। অনুমোদনহীন প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে কেশবপুর উপজেলায় ১৫টি, চৌগাছায় ১১টি, ঝিকরগাছায় ৩১টি, বাঘারপাড়ায় ১৮টি, মণিরামপুরে ১৯টি, শার্শায় ৫১টি এবং সদর উপজেলায় ১১০টি। অভয়নগর উপজেলায় অনুমোদনহীন প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কতটি রয়েছে তা জানা যায়নি। তবে এই সংখ্যা প্রাথমিক ও মাধ্যম স্তরে তিন শতাধিক বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। অনুমোদনহীন প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়ে সম্প্রতি জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করেছে যশোর সদর উপজেলার হাশিমপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। প্রতিষ্ঠানটির প্রধান শিক্ষক রণজিত কুমার ঘোষ আবেদনে উল্লেখ করেছেন, ১৯৪১ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে আজ অবধি হাশিমপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয় এ অঞ্চলে নিয়মতান্ত্রিক শিক্ষা বিস্তারে কাজ করে যাচ্ছে। কিন্তু বর্তমানে বিদ্যালয়ের দুইশ’ গজের মধ্যে ভাড়া করা ভবনে কয়েক ব্যবসায়ী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছে। যাদের নিয়মতান্ত্রিক কোন অনুমোদন নেই শিক্ষা সংশ্লিষ্ট কোন দফতরের। এসব ব্যবসায়ী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন প্রলোভন ও চটকদারি বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের আকৃষ্ট করে অনুমোদনহীন এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থী ভর্তি করে চলেছে। ভর্তি করার পর শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের অগোচরে অন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে রেজিস্ট্রেশন করে পিইসি, জেএসসি ও এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে প্রতারণার ষোলকলা পূর্ণ করে। তাদের এ প্রতারণামূলক কাজে হাশিমপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ছাত্রছাত্রী ভর্তিতে সঙ্কট দেখা দিয়েছে বলে তিনি জানান। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ৭৫ বছরের ঐতিহ্যবাহী এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। তিনি তার বিদ্যালয় এলাকায় গড়ে তোলা অনুমোদনহীন হাশিমপুর বাজার রহিমা কলেজিয়েট স্কুল, আল-হেরা মডেল স্কুল ও লিডেন গ্রামার স্কুলের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে পদক্ষেপ নিতে অনরোধ করেছেন কর্তৃপক্ষের কাছে।
×