ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

বাউফলে দুই কোটি টাকার জমি দখল

প্রকাশিত: ০৬:৪০, ২৪ জানুয়ারি ২০১৭

বাউফলে দুই কোটি টাকার জমি দখল

নিজস্ব সংবাদদাতা, বাউফল, ২৩ জানুয়ারি ॥ বাউফলে একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নামে উপজেলার আদাবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদ ভবনসহ প্রায় ২ কোটি টাকা মূল্যের ৪৫ শতাংশ জমি দখল করে নিয়েছে একটি প্রভাবশালী চক্র। সরেজমিন আদাবাড়িয়া ইউনিয়নের মাদবপুর বাজার সংলগ্ন এলাকায় স্থাপিত পুরাতন আদাবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদ এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে পুরাতন ওই পরিষদ ভবনটির প্রবেশ মুখে থাকা বিশাল আকৃতির গেটের উপরে নাম মুছে লেখা হয়েছে ‘পটুয়াখালী কৃষি ডিপ্লোমা ইনস্টিটিউট’। এরপর ভবনটির সামনের অংশে থাকা সীমানা প্রাচীরের বাঁদিকের শেষ প্রান্তে চলছে অপর একটি পাকা ভবনের নির্মাণ কাজ। ওই গেট দিয়ে ভিতরে ঢুকে দেখা যায় আরও একটি সাইনবোর্ড। সেই সাইনবোর্ডটিতেও লেখা রয়েছে ‘পটুয়াখালী কৃষি ডিপ্লোমা ইনস্টিটিউট’। ভবনটির সামনে গিয়ে দেখা যায় ভবনটি তখন তালাবদ্ধ অবস্থায় রয়েছে। তবে ভিতরে কিছু চেয়ার এবং বেঞ্চ দেখা গেলেও ওই সময়ে ভবনটিতে অন্য কোন শিক্ষক কিংবা শিক্ষার্থীর দেখা পাওয়া যায়নি। কথা বলার জন্য ওই ইউপি ভবনের একটু সামনে এগুতেই দেখা যায় অপর একটি লম্বা টিনশেড ঘরের একটি কক্ষে বসে কম্পিউটারে কাজ করছিলেন দুই ব্যক্তি। তাদের কাছে ওই ইনস্টিটিউট লোকজনদের খোঁজ করলে মোঃ মাসুম নামে এক ব্যক্তি বলেন, কি জানতে চান আমার কাছে বলেন। এরপর তাঁর কাছে প্রতিষ্ঠানের ছাত্র এবং শিক্ষকদের খোঁজ করলে বলেন, সেমিস্টার পরীক্ষা চলছে এ জন্য এখন এখানে কেউ নেই। আমি এই প্রতিষ্ঠানের একজন সাহায্যকারী। স্থানীয়রা জানান, ওই গেটের উপর লেখা ছিল আদাবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের নাম আর ভিতরের সাইবোর্ডটিতে লেখা ছিল গ্রাম্য আদালত, আদাবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়। ওই ভবনটিতেই চলত ইউনিয়ন পরিষদ এবং গ্রাম্য আদালতের সকল কার্যক্রম। ১৯৬১সালের ৮ আগস্ট তারিখে ১০২৭২ দলিলমূলে জনৈক উপন্দ্রে লাল ওঝার কাছ থেকে আদাবাড়িয়া মৌজার ১৮৯৮৯/ ৮০ দাগ ও ২০২ খতিয়ানের ৪৫ শতাংশ জমি আদাবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের নামে রেজিস্ট্রি করা হয়। মরহুম জয়নাল আবেদিন উল্লাহ চেয়ারম্যান থাকাকালীন জমিটি ক্রয় করা হয়। এরপর থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত ওই জমিতে নির্মিত এই আধা পাকা টিনশেড ভবনটিতেই চলছিল ইউনিয়ন পরিষদের সকল দাফতরিক কর্মকা-। এরপর মিলঘর এলাকায় নব-নির্মিত ইউনিয়ন পরিষদের দ্বিতল ভবনে কার্যক্রম শুরু হয়। ২০১৬ সালের দিকে স্থানীয় হানিফ উল্লাহ নামে এক ব্যক্তি পূর্বের ইউনিয়ন পরিষদ এবং গ্রাম্য আদালতের সাইবোর্ডটি মুছে সেখানে ওই নামসর্বস্ব কৃষি ডিপ্লোমা ইনস্টিটিউট নাম লিখে ওই ভবন এবং ভবন সংলগ্ন জমি দখলে নিয়ে নেন। হানিফ উল্লাহ এলাকায় সর্বদলীয় নেতা হিসাবে পরিচিত। যে দল যখন ক্ষমতায় থাকে, তিনি সেই দলের নাম ভাঙ্গিয়ে নানা অপকর্ম করেন। পটুয়াখালী কৃষি ডিপ্লোমা ইনস্টিটিউটের নামে ইউনিয়ন পরিষদের ভবনসহ জমি দখলের বিষয়ে হানিফ উল্লাহর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখানে ইউনিয়ন পরিষদের কোন জমি নেই। শুধু পুরাতন একটি পরিত্যক্ত ভবন ছিল। আমি বর্তমান চেয়ারম্যান সাহেবের কাছ থেকে মৌখিক অনুমতি নিয়ে পরিত্যক্ত ভবনটি মেরামত করে ক্লাস চালাচ্ছি। আমি এই প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা। প্রতিষ্ঠানের প্রিন্সিপালের নাম মোঃ জহিরুল ইসলাম। উনি বর্তমানে ছুটিতে আছেন। আর এই প্রতিষ্ঠানের সভাপতি আমার বাবা। নতুন এই কমিটির এখন পর্যন্ত কোন সভা হয়নি। কিছু দিনের মধ্যে এই নতুন কমিটির সভা হবে। ইউনিয়ন পরিষদের জমি দখল করে দোকান নির্মাণের আরেক ব্যক্তি উজ্জ্বল চৌকিদার বলেন, এটা তাঁর পৈত্রিক জমি। তিনি সেখানেই দোকান নির্মাণ করছেন। দখলের অভিযোগ মিথ্যা এবং ভিত্তিহীন। এ বিষয়ে আদাবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান আলহাজ সামসু ফকির মৌখিক অনুমতি প্রদানের বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, ভবনটি দখলের বিষয়টি আমি শুনেছি। ভবনটি উদ্ধারের জন্য আমি উজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবরে শীঘ্রই আবেদন করব। এ বিষয়ে বাউফল উপজেলা এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। ওই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবেদন করলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
×