ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

একুশে গ্রন্থমেলায় স্থান বদলানোর শাস্তি পাচ্ছে ১৫ প্রকাশনা সংস্থা

প্রকাশিত: ০৫:৪৪, ২৮ ডিসেম্বর ২০১৬

একুশে গ্রন্থমেলায়  স্থান বদলানোর শাস্তি পাচ্ছে ১৫ প্রকাশনা সংস্থা

মনোয়ার হোসেন ॥ ২০১৬ সালের অমর একুশে গ্রন্থমেলায় লটারিতে প্রাপ্ত স্থানের পরিবর্তে নিজেদের মতো করে স্টলের বিন্যাস করেছিল ১৫টি প্রকাশনা সংস্থা। আর এই স্টল পরিবর্তনের কারণে মেলার আয়োজক বাংলা একাডেমির ওই প্রকাশনা সংস্থাগুলোর ওপর শাস্তি ধার্য করেছে। ইতোমধ্যে তাদেরকে শাস্তি নিশ্চিত করে চিঠিও তৈরি করেছে। শাস্তি হিসেবে ২০১৬ সালে বরাদ্দকৃত ইউনিটের চেয়ে এবার এক ইউনিট করে কম স্টল বরাদ্দ পাবে প্রকাশনীগুলো। এই ১৫টি প্রকাশনীর মধ্যে আবার সাতটি এক ইউনিটের স্টল হওয়ায় ২০১৭ সালের বইমেলায় তাদের কোন স্টল বরাদ্দ দেয়া হবে না। এছাড়া মেলার স্বার্থবিরোধী কার্যকলাপের কারণে দুই বছরের জন্য নিষিদ্ধ হওয়া শ্রাবণ প্রকাশনী লিখিত ্আবেদন করলে তাদের ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞার সিদ্ধান্তে পরিবর্তন আসতে পারে বলে জানিয়েছে একাডেমি কর্তৃপক্ষ। একাডেমি সূত্র জানায়, ২০১৬ সালের মেলায় ১৫টি প্রকাশনা সংস্থা তাদের বরাদ্দকৃত স্থানের বাইরে নিজেদের ইচ্ছেমতো স্টল নির্মাণ করে। মেলা চলাকালেই তাদের কারণ দর্শানোর চিঠি দেয় বাংলা একাডেমি। পরবর্তীতে ওই প্রকাশনীগুলোর কারণ দর্শানোর জবাব সন্তুষ্ট করতে পারেনি মেলা পরিচালনা কমিটিকে। ফলে ২০১৭ সালের বইমেলায় তাদের এক ইউনিট করে কমিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। এর মধ্যে এক ইউনিটের সাতটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানকে এবার মেলায় স্টল দেয়া হবে না। এগুলো হলোÑ প্লাটফর্ম, রেয়ার বুকস, চিত্রা প্রকাশর্নী, চর্চা গ্রন্থ প্রকাশ, রিয়া প্রকাশনী ও মা প্রকাশনী। গত বছরের দুই ইউনিটপ্রাপ্ত পাঁচটি প্রকাশনীকে এবার এক ইউনিট করে বরাদ্দ দেয়া হবে। এগুলো হলোÑ মৌলি প্রকাশনী, জাতীয় গ্রন্থ প্রকাশন, সালাউদ্দিন বইঘর, গদ্যপদ্য ও শব্দশিল্প। তিন ইউনিটের স্টল রয়েছে শুধুমাত্র সুবর্ণ। এসব প্রকাশনীকে এবার দুই ইউনিট বরাদ্দ দেয়া হবে। গত বছরের চার ইউনিটের স্টলপ্রাপ্ত অ্যাডর্ন পাবলিকেশন্স ও তাম্রলিপিকে এবার তিন ইউনিট করে বরাদ্দ দেয়া হবে। গত মেলায় প্যাভিলিয়নপ্রাপ্ত কাকলী প্রকাশনীকে এবার চার ইউনিট বরাদ্দ দেয়া হবে। এ বিষয়ে মেলা পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব ও বাংলা একাডেমির পরিচালক ড. জালাল আহমেদ জনকণ্ঠকে বলেন, আমরা গত বছরই এদের তালিকা করে চিঠি দিয়েছিলাম ওই ১৫টি প্রকাশনীকে। এবার আমরা শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করব। আর এ পদক্ষেপের ফলে ভবিষ্যতে আর কোন প্রকাশনা সংস্থা নিজের ইচ্ছামতো স্টল পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নেবে না। শ্রাবণ প্রকাশনীর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ওই প্রকাশনা সংস্থা থেকে আবেদন করা হলে আমরা বিষয়টি নির্বাহী পরিষদে উপস্থাপন করব। সেখানে নিষেধাজ্ঞা উঠিয়ে নেয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হতে পারে। ব-দ্বীপ বন্ধ হওয়ার পর শ্রাবণের প্রকাশক রবীন আহসান মুখে কালো কাপড় বেঁধে প্রতিবাদ করেছিলেন। তিনি সরাসরি বাংলা একাডেমির বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছেন, যা মেলার পরিপন্থী। এজন্যই সংস্থাটিকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তবে এখনও বাংলা একাডেমির কাছ থেকে কোন ধরনের চিঠি পাননি বলে জানিয়েছেন আটটি প্রকাশনা সংস্থার স্বত্বাধিকারীরা। তারা এ সিদ্ধান্তকে বাংলা একাডেমির ‘স্বেচ্ছাচারিতা’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তারা বলেন, এ ধরনের সিদ্ধান্ত কোনভাবেই মেনে নেয়া যায় না। কারণ, একাডেমির স্থান বিন্যাস সঠিক হয়নি বলেই তাদের অনুমতিক্রমেই স্টলের বিন্যাসে কিছুটা পরিবর্তন আনা হয়েছিল। গতবার তারা যে চিঠি দিয়েছিল, তারও জবাব দেয়া হয়। এ বিষয়ে অ্যাডর্নের প্রধান নির্বাহী সৈয়দ জাকির হোসাইন বলেন, আমি এখনও এ ধরনের কোন চিঠি পাইনি। সেহেতু এ বিষয়ে কোন মন্তব্য করাটা ঠিক হবে না। এ বিষয়ে রবীন আহসান বলেন, এখন পর্যন্ত আমাদের বাংলা একাডেমি কোন চিঠি দেয়নি। সোমবার ফরম তুলতে গিয়ে জেনেছি, আমরা নিষিদ্ধ। যেহেতু এখনও কোন চিঠি পাইনি তাই আনুষ্ঠানিকভাবে আবেদন করার সিদ্ধান্ত নেইনি। তবে চিঠি পেলে আমরা অবশ্যই সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার জন্য চিঠি দেব। এর আগে গত ১০ নবেম্বর বাংলা একাডেমির নির্বাহী পরিষদের ষষ্ঠ সভায় মেলার ‘স্বার্থবিরোধী কার্যকলাপ’ করায় শ্রাবণ প্রকাশনীকে দুই বছরের জন্য নিষিদ্ধ করে মেলার আয়োজক প্রতিষ্ঠান বাংলা একাডেমি। সে সঙ্গে পাইরেটেড বই বিক্রির জন্য গত ৪ আগস্ট একাডেমির নির্বাহী পরিষদের চলতি বছরের তৃতীয় সভায় পাঁচ বছরের জন্য নিষিদ্ধ করা হয় চারটি প্রকাশনীকে। এ প্রকাশনীগুলো হলো- রঙিনফুল, ঐক্য প্রকাশনী, নীলপরী প্রকাশন এবং ব-দ্বীপ প্রকাশন।
×