ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

র‌্যাব পুলিশ খুঁজছে এই খুনীকে

নারীরাই টার্গেট-কে এই সিরিয়াল কিলার?

প্রকাশিত: ০৫:৪৩, ২০ ডিসেম্বর ২০১৬

নারীরাই টার্গেট-কে এই সিরিয়াল কিলার?

শংকর কুমার দে ॥ কে এই সিরিয়াল কিলার? যার টার্গেট কেবল নারীরা। একের পর এক চার নারীকে খুন করে টাকা, স্বর্ণালঙ্কার, সর্বস্ব লুট করে নিয়ে অদৃশ্য হয়ে ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়ে গেছে এই খুনী। তদন্তে দেখা গেছে, একই কায়দায় প্রতিটি খুন করা, খুনের টার্গেট নারীরা, খুনের পর সর্বস্ব লুট করা, খুনের পর অদৃশ্য হয়ে যাওয়ার কৌশলে মনে হচ্ছে খুনী একজনই, আর সে হচ্ছে সিরিয়াল কিলার। রাজধানীর উত্তরার দক্ষিণখান এলাকায় এ ধরনের এক খুনীকে খুঁজছে র‌্যাব, পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। পুলিশের তদন্তের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত ২৪ জুলাই উত্তরার দক্ষিণখানের উত্তর গাওয়াইরে গৃহকর্ত্রী শাহিদা বেগমকে (৫০) হত্যা করে স্বর্ণালঙ্কার নিয়ে পালিয়ে গেছে ওই খুনী। এরপর এই খুনীই গত ২১ আগস্ট দক্ষিণখানের তেঁতুলতলা রোডে গৃহকর্ত্রী সুমাইয়া বেগমকে (৫২) একই কায়দায় হত্যা করেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এরপর গত ৩১ আগস্ট দক্ষিণখানের মুন্সী মার্কেট এলাকায় জেবুন্নিছা চৌধুরীকে (৫৬) কুপিয়ে স্বর্ণালঙ্কার নিয়ে পালিয়ে যায় ওই খুনী। একই কায়দায় এরপর এই খুনী খুন করে গত ৭ সেপ্টেম্বর দক্ষিণখানের উত্তর গাওয়াইরে ওয়াহিদা আক্তারকে (৪৮)। তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সন্দেহভাজন এই খুনীর বিষয়ে সতর্ক থাকার অনুরোধ জানানো হয়েছে রাজধানীর উত্তরা এলাকায়। পোস্টার সাঁটানো হয়েছে, মসজিদে-মসজিদে মাইকিং পর্যন্ত করা হয়েছে। এ নিয়ে এলাকার মানুষের মধ্যে এক সময়ে চাপা আতঙ্ক বিরাজ করতে শুরু করলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তৎপর হয়ে ওঠে। তদন্ত সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা জানান, রাজধানীর উত্তরার দক্ষিণখান, উত্তরখান, আশকোনাসহ আশপাশের এলাকার মানুষের মধ্যে, বিশেষ করে নারীদের টার্গেট করছে এই সিরিয়াল কিলার। অপরিচিত কোন ব্যক্তি দেখলেই তারা সন্দেহ করছেন ওই এলাকাবাসী। পুলিশের পক্ষ থেকে বাসায় প্রবেশেও কড়াকড়ি আরোপ করতে অনুরোধ করা হয়েছে। র‌্যাবের একজন কর্মকর্তা বলেন, যেসব নারীরা খুন হয়েছেন তাদের একটি বাসায় হত্যাকা- সংঘটনের পর সিসি ক্যামেরায় ধারণ করা ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়- ব্যাগ কাঁধে ওই সন্দেহভাজন খুনী বাসায় প্রবেশ করছে। খুন করে বাসা থেকে স্বর্ণালঙ্কার লুটপাট করে নিয়ে যায় সে। সে চাপাতি চালাতে পারদর্শী। দ্রুততম সময় পেছন থেকে অতর্কিত হামলা করে নারীদের হত্যা করে। খুনের পর কোন প্রমাণও রাখছে না। খুনী খুবই সচেতন এবং সতর্ক। চারটি খুনের ঘটনার তদন্তে প্রতীয়মান হয়েছে, স্বর্ণালঙ্কার লুট করে খুনী হয়ত ধারণা দিতে চায়, এর জন্যই সে খুন করছে। ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, তার বয়স ৩০-এর কাছাকাছি। উচ্চতা প্রায় ৫ ফুট ৬ ইঞ্চি। গায়ের রং ফর্সা। মাথার চুল ছোট। কাঁধে ব্যাগ ঝোলানো। পুলিশের একজন কর্মকর্তার সঙ্গে আলাপ হলে তিনি জানান, তদন্ত করতে গিয়ে পুলিশের কাছে এটা পরিষ্কার যে, ঘটনাগুলোও একই ধরনের। বাড়ি ভাড়া নেয়ার কথা বলে বাসায় প্রবেশের পর নারীদের ওপর হামলা চালায়। খুনীর টার্গেট ধনী-মধ্যবয়সী নারীরা। প্রতিটি ঘটনাই পরিকল্পিতভাবে করা হয়েছে। ওই ব্যক্তি দেখতে ভদ্র ও চাকরিজীবী মনে হওয়ায় তাকে কেউ সন্দেহ করতে পারছে না। তবে পুলিশ, র‌্যাব ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতার মুখে এখন খুন বন্ধ ও খুনী উধাও হয়ে গেছে। সিরিয়াল খুনী কে, তা শনাক্ত করে তাকে গ্রেফতারের জন্য নজরদারি বাড়ানোসহ আইনী তৎপরতা শুরু করা হয়েছে।
×