ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

জনবল সঙ্কটে দুই উপজেলার স্বাস্থ্যসেবা ব্যাহত

প্রকাশিত: ০৫:২৯, ১৯ ডিসেম্বর ২০১৬

জনবল সঙ্কটে দুই  উপজেলার স্বাস্থ্যসেবা ব্যাহত

স্টাফ রিপোর্টার, গলাচিপা ॥ পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেই প্রয়োজনীয় জনবল। জুনিয়র কনসালট্যান্টের দশটিসহ প্রথম শ্রেণীর ৩৯টি পদের মধ্যে ২৪টি পদই শূন্য। দ্বিতীয় শ্রেণীর ২৩টি পদের মধ্যে ১০টি, তৃতীয় শ্রেণীর ১৫৬টির মধ্যে ৪৩টি এবং চতুর্থ শ্রেণীর ২৪৪টি পদের মধ্যে ৮৭টি পদ শূন্য। এর মধ্যে মাঠ পর্যায়ের স্বাস্থ্য সহকারীর ২১টি পদ শূন্য। চারটি উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র ও ১৩টি পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের মধ্যে ১১টিতেই কোন মেডিক্যাল অফিসার নেই। এভাবে বিপুলসংখ্যক কর্মকর্তা-কর্মচারীর পদ শূন্য থাকায় গলাচিপা ও রাঙ্গাবালী দুই উপজেলার স্বাস্থ্যসেবা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের। গলাচিপা উপজেলার চরাঞ্চল প্রধান পাঁচটি ইউনিয়ন নিয়ে ২০১২ সালে রাঙ্গাবালী উপজেলার আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হলেও এখন পর্যন্ত সেখানে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নির্মাণ হয়নি। ফলে রাঙ্গাবালী উপজেলার দুই লাখ মানুষ গলাচিপা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু গলাচিপা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেই চলছে কর্মকর্তা-কর্মচারীর তীব্র সঙ্কট। গলাচিপা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ৫০ শয্যার হাসপাতালে জুনিয়র কনসালট্যান্ট সার্জারি, মেডিসিন, গাইনি, চোখ, ইনটি, কার্ডিওলজি, অর্থপেডিক, শিশু, এ্যানেসথেসিয়া, চর্ম ও যৌন পদগুলো এবং ইএমও বিভাগের একটি সহকারী সার্জনের পদ দীর্ঘদিন ধরে শূন্য পড়ে আছে। প্রতিটি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আয়ুর্বেদি চিকিৎসার মেডিক্যাল অফিসারের পদ সৃষ্টি করা হলেও তাতে আজ পর্যন্ত লোকবল নিয়োগ করা হয়নি। ফলে এ পদটি শুরু থেকে খালি পড়ে আছে। চারটি উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রের তিনটিতে থাকলেও একটি মেডিক্যাল অফিসারের পদ শূন্য আছে। একইভাবে শূন্য আছে ১০টি পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের মেডিক্যাল অফিসার অথবা সহকারী সার্জনের পদ। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ১৪টি পদের বিপরীতে চারটি সিনিয়র নার্স, উপস্বাস্থ্যকেন্দ্র ও ইউএইচসিগুলোর ৮টি মিডওয়াইফ পদের ৬টি, ২৩টি নার্সিং কর্মকর্তা পদের মধ্যে ১০টি খালি এবং সহকারী নার্স নেই একটি পদে। উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিক্যাল অফিসারের ১৯টি পদের মধ্যে ১০টি, মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট (ফার্মাসিস্ট) ৬টির মধ্যে পাঁচটি, মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট (ল্যাবরেটরি) ৩টির মধ্যে ২টি, প্রধান সহকারীর একটি, অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর তিনটির মধ্যে একটি, কম্পাউন্ডারের একটি, ল্যাব এ্যাটেনডেন্টের একটি, ইমার্জেন্সি এ্যাটেনডেন্ট একটি, এমএলএসএস ৮টির মধ্যে ২টি, ওয়ার্ডবয় তিনটির মধ্যে ১টি, আয়া ২টির মধ্যে একটি ও কুক ২টির মধ্যে একটি পদ শূন্য আছে। স্বাস্থ্যসেবা ও প্রশাসনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এসব পদ দীর্ঘদিন ধরে শূন্য থাকায় গলাচিপা ও রাঙ্গাবালী উপজেলার পাঁচ লাখ মানুষ প্রতিনিয়ত চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। ইনডোরে প্রতিদিন গড়ে ৬০ রোগী ভর্তি থাকছে। মাঝে মধ্যে এ সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে। আউটডোরে প্রতিদিন চিকিৎসা নিচ্ছে অন্তত দুশ’ রোগী। কর্মকর্তা-কর্মচারী সঙ্কটে এদের চিকিৎসাসেবা ব্যাহত হচ্ছে। মাঝে মধ্যে অনেক রোগী চিকিৎসা না নিয়ে ফিরে যেতে বাধ্য হচ্ছে। চিকিৎসকদের প্রাইভেট চেম্বারগুলোতে উপচে পড়ছে রোগীর ভিড়। জমজমাট হয়ে উঠেছে প্রাইভেট ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ব্যবসা। শহরের যত্রতত্র গড়ে উঠেছে ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার। নামমাত্র চিকিৎসক দিয়ে পরিচালিত হচ্ছে রোগীদের নানান পরীক্ষা-নিরীক্ষা। এসবে ত্যক্ত-বিরক্ত রোগীদের অনেকে আবার পাড়ি জমাচ্ছে শহরে। এদিকে নিরাপত্তা প্রহরীর দুটি পদই শূন্য থাকায় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কোন প্রহরার ব্যবস্থা নেই। রাতের বেলা অরক্ষিত হয়ে পড়ছে হাসপাতালসহ গোটা কমপ্লেক্স চত্বর। অভিযোগ উঠেছে, ইনডোরে চিকিৎসাধীন মহিলা রোগীদের অনেকেই রাতে নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে। আবাসিক কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও রাতে বের হতে সাহস পায় না। অন্যদিকে ৮৫টি স্বাস্থ্য সহকারীর মধ্যে ২১টি পদ শূন্য থাকায় মাঠ পর্যায়ের স্বাস্থ্যসেবাও বিঘিœত হচ্ছে। গ্রামীণ লোকজন বঞ্চিত হচ্ছে সেবা থেকে। এ তথ্যের সত্যতা স্বীকার করে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ মনিরুল ইসলাম জানান, বিষয়টি নিয়মিত উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হচ্ছে। কিন্তু পদ পূরণে কোন ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। ফলে নানামুখী সঙ্কটের মধ্য দিয়ে স্বাস্থ্যসেবা চালিয়ে নিতে হচ্ছে।
×