ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

হাকিমপুরে যমুনা থেকে বালু উত্তোলন

২শ’ একর জমি বিলীন

প্রকাশিত: ০৪:২১, ১ ডিসেম্বর ২০১৬

২শ’ একর জমি বিলীন

স্টাফ রিপোর্টার, দিনাজপুর ॥ হাকিমপুর উপজেলার খট্টামাধবপাড়া ইউনিয়নের শাখা যমুনা নদীতে শ্যালো চালিত মেশিন বসিয়ে বালু উত্তোলনের ফলে পরিবেশের মারাত্মক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। বালু উত্তোলনের ফলে সেখানকার দু’শ’একর ফসলী জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। বালু পরিবহনের ফলে মংলা-কাটলা সড়ক, মাধবপাড়া গ্রামের ভেতরের পাকা সড়ক এবং ড্রেনসমূহ ভেঙ্গে গেছে। এরফলে হুমকির মুখে এসব এলাকার মানুষ। স্থানীয় সংসদ সদস্য অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধের নির্দেশ দিলেও তা বন্ধ হয়নি। এখনও অবাধে চলছে শ্যালো চালিত দিয়ে নদী থেকে বালু উত্তোলন। বুধবার সরেজমিন গিয়ে দেখা গেল, ইজারাদার মিজানুর লাকজন শাখা যমুনা নদীর মাঝ থেকে শ্যালোচালিত মেশিন বসিয়ে বালু তুলছেন। নদীর দুই অংশের স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, বছরের পর বছর ধরে নিয়ম উপেক্ষা করে শ্যালো মেশিন দিয়ে অবৈধভাবে বালু তুলছেন মিজানুর রহমান। নয়ানগর ও চৌঘরিয়া নৌকা ঘাটের ইজারাদার নাসির উদ্দিন জানান, তিনি ৩০ বছর ধরে এই ঘাট চালাচ্ছেন। গত ১০-১২ বছর ধরে এই ঘাটের পাশ-পাশ থেকে শ্যালো মেশিন দিয়ে বালু তোলা শুরু হয়। বালুর ইজারাদার মিজানুর এইভাবে বালু তুলছেন। শ্যালো মেশিন দিয়ে বালু উঠানোর পলে নদীটির পশ্চিম দিকের পাড় ভাঙতে-ভাঙতে প্রায় পাঁচশ‘গজ সরে এসেছে বলেও জানান তিনি। কাটলা ইউনিয়নের চৌঘুরিয়া গ্রামের রেহানা পারভীন জানান, শ্যালো দিয়ে বালু তোলায় নদীটির বিভিন্ন স্থানে গভীর খাদের সৃষ্টি হয়েছে। তিন বছর আগে গ্রামের এক শিশু নদীর খাদে পড়ে মারা যায়। তখন থেকে গ্রামের মানুষ শ্যালো চালিত মেশিন দিয়ে বালু তোলা বন্ধের দাবি জানিয়ে আসছে। কিন্তু কোন কাজ হয়নি। এ নিয়ে একবার গ্রামের লোকজনের সাথে ইজারাদার মিজানুরের লোকজনদের মধ্যে মারামারি ও মামলা-মোকাদ্দমাও হয়েছিল। একই গ্রামের আবু সাইদ জানান, নদী ভাঙনে তার দুই একর, সামছুল হকের দশ কাঠা, নাসির উদ্দিনের দুই বিঘা জমি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। তারা সকলেই জানান, এ বিষয়ে গত বছর তারা স্থানীয় আওয়ামী লীগ সংসদ সদস্য শিবলী সাদিকসহ সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের কাছে লিখিতভাবে অভিযোগ করেন। কিন্তু তাতে কোন লাভ হয়নি। উল্টো বালু মহাল ইজারাদার মিজানুরের সন্ত্রাসীরা তাদের ভয়ভীতিসহ হুমকি-ধামকি দিয়ে আসছে। অভিযুক্ত বালুমহাল ইজারাদার মিজানুর রহমান জানান, তিনি প্রথম শ্রেণীর ঠিকাদার। জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের কর্মকর্তারা তাকে নির্দেশ দিয়েছেন, প্রথম শ্রেণীর ঠিকাদার যদি কেউ হয়, তাহলে ওই ঠিকাদার শ্যালো মেশিন দিয়ে বালু তুলতে পারবে। তাদের এমন কথায় তিনি বালু উত্তোলন করছেন। এ ব্যাপারে হাকিমপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শুকরিয়া পারভীন জানান, কাউকেই শ্যালো মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলনের অনুমতি দেওয়া নেই। এই ধরনের অভিযোগের বিষয়টিও তার জানা নেই। তবে কেউ অভিযোগ করলে এবং এর সত্যতা পাওয়া গেলে তিনি তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেবেন। কলাপাড়ায় হুমকিতে বেড়িবাঁধ নিজস্ব সংবাদদাতা কলাপাড়া থেকে জানান, বালু তোলার কারণে বন্যানিয়ন্ত্রণ বেড়িবাঁধসহ ফসলি জমি ডোবায় বিলীন হচ্ছে। ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে বেড়িবাঁধ।ধুলাসার ইউনিয়নের কাউয়ার মৌজায় ফ্রি-স্টাইলে বালু উত্তোলনের ফলে ৪৮ নম্বর পোল্ডারের বেড়িবাঁধটি বিধ্বস্তের শঙ্কা দেখা দিয়েছে। স্থানীয়রা জানান, নুর মোহাম্মদ ও আলী হোসেন নামের দুই ব্যক্তি প্রায় আটদিন টানা বালু উত্তোলন করায় ওই পোল্ডারের তুলাতলা স্পটের বেড়িবাঁধটি হুমকির মুখে পড়েছে। দেদার বালু উত্তোলন করায় বাঁধের কান্ট্রি সাইটের সেøাপ ভেঙ্গে পড়েছে। উল্টোদিকের ফসলি জমিও ভেঙ্গে ডোবায় বিলীন হচ্ছে। ইতোমধ্যে অন্তত ৮০ হাজার সিএফটি বালু উত্তোলন করা হয়েছে বলে স্থানীয়দের মতামত। তবে একাধিক ব্যক্তি জানান, প্রভাবশালী এক আওয়ামী লীগ নেতা আর স্থানীয় এক বিএনপি নেতার যোগসাজশে এ বালু উত্তোলন চলছে। তবে বেড়িবাঁধটি রক্ষায় বালু উত্তোলন বন্ধ করা প্রয়োজন বলে স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন। দুর্গাপুর নিজস্ব সংবাদদাতা, দুর্গাপুর, নেত্রকোনা) থেকে জানান, দুর্গাপুরে ড্রেজার শ্রমিক সমিতির আয়োজনে দুর্গাপুর-শ্যামগঞ্জ রাস্তায় বিরিশিরি ব্রিজের উপর ভাত চাই কাজ চাই এ দাবিতে সকাল ১১টা থেকে ১২টা পর্যন্ত সকল প্রকার যানবাহন অবরোধ করে রাখে। বুধবার দুর্গাপুর সোমেশ^রী নদীতে বালু উত্তোলনের জন্য সরকারীভাবে ইজারা প্রাপ্ত হয়ে উত্তোলনকৃত বালু পরিবহনে সম্পুর্নভাবে বাঁধাপ্রাপ্ত হওয়ায় ড্রেজার শ্রমিকরা অবরোধে অংশগ্রহন করে। জানাযায়, বিরিশিরি পিসিনল উচ্চ বিদ্যালয়ের খেলার মাঠের পাশের্^ সড়ক ও জনপথের রাস্তা থাকায় স্কুল কর্তৃপক্ষ বনাম সওজ-এর মধ্যে জায়গার সীমানা নিয়ে দীর্ঘদিন যাবৎ বিবাদ থাকায় স্কুল কর্তৃপক্ষ সওজের সংযোগ স্থলে ইট পাথর দিয়ে যান চলাচলে বাধা সৃষ্টি করার ফলে ড্রেজার শ্রমিকদল মানবেতর জীবনযাপন করছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শ্রমিকরা বন্ধ রাস্তাটি যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেয়ার দাবিতে অবরোধ করে। ঘটনাস্থলে গিয়ে অবরোধকারীদের উদ্দেশে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মামুনুর রশীদ বলেন, যেহেতু বিষয়টি নিয়ে আদালতে মামলা রয়েছে তাই স্কুল কর্তৃপক্ষ ও সওজের সঙ্গে কথা বলে ও আইনের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে যতদ্রুত সম্ভব যান চলাচলের জন্য খুলে দেয়ার আশ^াস দিলে অবরোধকারীরা অবরোধ তুলে নেয়।
×