ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

জিজ্ঞাসাবাদে দুই জঙ্গীর তথ্য

কাশিমপুর কারাগারে হামলার পরিকল্পনা ছিল আনসারুল্লাহর

প্রকাশিত: ০৫:৫৯, ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৬

কাশিমপুর কারাগারে হামলার পরিকল্পনা ছিল আনসারুল্লাহর

স্টাফ রিপোর্টার, গাজীপুর ॥ জেলার প্রধান সমন্বয়কারীসহ আনসারুল্লাহ বাংলাটিমের দুই সক্রিয় সদস্যকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব সদস্যরা। এ সময় তাদের কাছ থেকে দুটি ছোরাসহ নিষিদ্ধ বই উদ্ধার করা হয়েছে। গ্রেফতারকৃতরা হলো- গাইবান্ধা জেলার সুন্দরগঞ্জ থানার ফলগাছা গ্রামের মোঃ আয়নাল হকের ছেলে রাশেদুল ইসলাম ওরফে স্বপন (২৪) এবং ফরিদপুর জেলার সদরপুর থানার শোলদুরী গ্রামের মোঃ দলিল উদ্দিন বেপারির ছেলে বিপ্লব হোসেন ওরফে হুজাইফা (৩৩)। এদের মধ্যে স্বপন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের গাজীপুর জেলার প্রধান সমন্বয়কারী হিসেবে কাজ করছে বলে র‌্যাব জানিয়েছে। র‌্যাব জানায়, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে শুক্রবার রাতে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় অভিযান চালিয়ে আনসারুল্লাহ বাংলাটিমের দুই সক্রিয় সদস্য স্বপন ও হুজাইফাকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃতরা একিউআইএস’র মতাদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে খিলাফত প্রতিষ্ঠার জন্য দেশে জঙ্গী কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিল। তাদের অন্যতম লক্ষ্য ছিল কাশিমপুর কারাগারে হামলা করে সেখান থেকে তাদের নেতা জসিমউদ্দিন রাহমানীকে মুক্ত করা। এ জন্য তারা কাশিমপুর এলাকায় কয়েকটি গ্রুপের সঙ্গে সমন্বয় করে হামলার জন্য সুযোগের অপেক্ষা করছিল। কারাগারে হামলার সুযোগ না পেলে বিকল্প হিসেবে আদালতে হাজিরা দিতে কারাগারে আসা-যাওয়ার পথে রাস্তায় হামলা চালিয়ে রাহমানি এবং অন্যান্য এবিটি নেতাদের ছিনিয়ে নেয়ার পরিকল্পনাও করেছিল। এছাড়াও টার্গেট কিলিংয়ের জন্য তারা বিভিন্ন আলোচিত ব্লগার এবং নাস্তিকদের হত্যার পরিকল্পনা করেছিল। সম্পূর্ণ নিশ্চয়তার সঙ্গে এসব কাজ করার জন্য তারা অন্যান্য জঙ্গী গ্রুপের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করে একত্রিত হয়ে কাজ করারও চেষ্টা চালাচ্ছে। তারা নিয়মিত মিটিং করত এবং সাংগঠনিক বিষয়ে পরামর্শ করত। তাদের প্রধান ও মুখ্য পরিকল্পনা হলো বাংলাদেশে কমপক্ষে ১০ লাখ লোককে আনসারুল্লাহ বাংলাটিমের সদস্য করে দেশে খিলাফত প্রতিষ্ঠা করা। র‌্যাব আরও জানায়, গ্রেফতারকৃতরা বিভিন্ন এলাকায় বিভক্ত হয়ে কাজ করত। নিরাপত্তার স্বার্থে এক গ্রুপের সদস্যদের অন্য গ্রুপের সদস্যরা চিনত না। যোগাযোগের নিরাপদ মাধ্যম হিসেবে তারা ঃড়ৎনৎড়ংিবৎ এবং ঃড়ঃধহঁঃধ মেইল ব্যবহার করত। শুধু গ্রুপ প্রধানরাই অন্য গ্রুপের প্রধানদের চিনত। ইন্টারনেটের মাধ্যমে তারা আরও একটি গ্রুপের সঙ্গে পরিচিত হয় যারা আনসারুল্লাহ বাংলাটিমের সংগঠন/কার্যক্রম সম্পর্কে কথা বলে। ওই গ্রুপের সদস্যরা স্বপনকে অস্ত্র সংগ্রহের জন্য ১০ লাখ টাকা দিতে চেয়েছিল এবং শীঘ্রই তা সংগ্রহ করার কথা ছিল। যশোর এলাকা থেকে ওই টাকা দিয়ে অস্ত্র ক্রয়ের পরিকল্পনা তারা করেছিল বলে স্বপন জানায়। র‌্যাব জানায়, স্বপনকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, ২০১৪ সালের মার্চ মাসে জসিমউদ্দিন রাহমানির একটি বক্তৃতা ইন্টারনেটে শুনবার পর সে তাদের প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ে। একটি গার্মেন্টসে চাকরি করার সময় আব্দুল কুদ্দুস নামের এক ব্যক্তির সঙ্গে তার পরিচয়ের পর তার মাধ্যমে সে আনসারুল্লাহ বাংলাটিমের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়। আব্দুল কুদ্দুস তাকে বিভিন্ন সাংগঠনিক বই পড়ার জন্য বলে। পরবর্তীতে সে কিছু সাংগঠনিক বই সংগ্রহ করে পড়াশুনা করে এবং অন্যদের এই বিষয়ে উদ্বুদ্ধ করা শুরু করে। এরপর আব্দুল কুদ্দুস বেশ কিছুদিন পর আব্বাস নামের এক ব্যক্তির সঙ্গে তার পরিচয় করিয়ে দেয়। পরবর্তীতে স্বপন জানতে পারে আব্বাস ঢাকা বিভাগের আনসারুল্লাহ বাংলাটিমের অন্যতম সমন্বয়ক এবং বিভিন্ন স্লিপার সেলের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করত। ২০১৫ সালের কোন এক সময় স্বপন এবং আরও কয়েকজন এই আব্বাসের মাধ্যমে আলকায়দার আইমান আল জাওয়াহিরির নামে ‘বায়াত’ নেয়। স্বপন ধীরে ধীরে গাজীপুর এবং আশপাশের এলাকা থেকে কর্মী সংগ্রহ শুরু করে এবং এই এলাকার সংগঠকের দায়িত্ব পায়। গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে র‌্যাব জানিয়েছে।
×