ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

১৩ বছরে ছয় জঙ্গী সংগঠন নিষিদ্ধ

বন্ধ হয়নি তৎপরতা

প্রকাশিত: ০৪:২২, ৫ আগস্ট ২০১৬

বন্ধ হয়নি তৎপরতা

মাকসুদ আহমদ, চট্টগ্রাম অফিস ॥ দেশে গত ১৩ বছরে ছয় জঙ্গী সংগঠনকে নিষিদ্ধ করা হলেও সেসব বিভিন্ন নামে এবং বিভিন্ন কৌশলে তৎপর রয়েছে। ছয়টি জঙ্গী সংগঠনের মধ্যে দুটি জঙ্গী সংগঠনের অস্তিত্ব খুঁজে পেয়েছিল দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলো। কিন্তু সমূলে আদৌ ধ্বংস করা যায়নি এসব জঙ্গী সংগঠনের আস্তানা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নানা অভিযানের কারণে কিছুদিন কার্যক্রম বন্ধ থাকলেও ফেরও মাথাছাড়া দিয়ে ওঠে এসব সংগঠনের সদস্যরা। প্রশ্ন উঠেছে, কেন জঙ্গীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া যাচ্ছে না। শুধু জঙ্গী সংগঠনগুলোকে নিষিদ্ধ করার মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে সরকারী সংস্থাগুলোর দায়িত্ব ও কর্তব্য। অভিযোগ রয়েছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিশেষ করে পুলিশ ও র‌্যাবের দুর্বল রিপোর্টের কারণে জঙ্গীরা যেমন জামিন পাচ্ছে তেমনি জঙ্গীদের জামিন পাইয়ে দিতে কাজ করছে ওই ঘরানার একশ্রেণীর আইনজীবী। সরকারের পক্ষ থেকে আইনজীবীদের ওপর কোন ধরনের নির্দেশনা না থাকায় সরকারবিরোধী ও দেশবিরোধী এসব জঙ্গী পুনরায় সুযোগ পেয়ে যাচ্ছে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিসহ প্রাণহানি ঘটানোর। স্কুল-কলেজ, মাদ্রাসা থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত জঙ্গীরা সদস্য সংগ্রহের যে অপতৎপরতায় লিপ্ত তা থেকে পরিত্রাণের উপায় কি- এমন প্রশ্ন এখন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কর্ণধারদের। আবার দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে যেসব জঙ্গী সদস্য ধরা পড়ছে তারা স্বীকার করছে আনসারুল্লাহ বাংলা টিম (এবিটি) ও জামা’আতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি) সংগঠনের কথা। প্রশ্ন উঠেছে দেশে র‌্যাব, পুলিশসহ বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও তদন্তকারী সংস্থার তৎপরতা থাকা সত্ত্বেও কিভাবে এসব জঙ্গী সংগঠনের সদস্যরা তৎপর। জানা গেছে, ২০০৩ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে ২০১৫ সালের মে পর্যন্ত সরকারের পক্ষ থেকে ছয়টি সংগঠনকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে ইসলামের নামে কোন ধরনের রাজনীতি না করার জন্য। এসব সংগঠনের সদস্যরাই দেখা গেছে ইসলামের ব্যানারে প্রচার করতে গিয়ে দেশের সাধারণ মানুষকে ব্রেন ওয়াশ করে তাদের পথে ধাবিত করার অপতৎপরতায় লিপ্ত। ফলে সরকারের পক্ষ থেকে ছয়টি সংগঠনকে জঙ্গী সংগঠন হিসেবে তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। সূত্র জানায়, ২০০৩ সালে রাজশাহীর রাজপাড়া এলাকায় সর্বপ্রথম অভিযান চালানো হয় জঙ্গীদের বিরুদ্ধে। সেখানেই হড়গ্রামের নতুনপাড়া এলাকায় খুঁজে পাওয়া যায় মিজানুর রহমানের বাড়ি। সে বাড়িতেই শাহাদাত-ই-আল হিকমা পার্টি বাংলাদেশ নামের এ সংগঠনটি জঙ্গী তৎপরতায় লিপ্ত। ফলে এ সংগঠনটিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয় ২০০৩ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি। ‘জাগ্রত মুসলিম জনতা, বাংলাদেশ’ নামে আরেকটি জঙ্গী সংগঠনের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায় ২০০৫ সালে। তবে কয়েক সদস্য গ্রেফতারের মধ্য দিয়ে সংগঠনটির অস্তিত্ব খুঁজে পেলেও মূলত সুনির্দিষ্ট কোন ঠিকানা পাওয়া যায়নি। তদন্তের পর বেরিয়ে এসেছে সংগঠনটি জঙ্গী কর্মকা-ের সঙ্গে জড়িত। ২০০৫ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি নিষিদ্ধ করা হয় সংগঠনটির কার্যক্রম। একই সময় জামা’আতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি) সংগঠনের সদস্যদের তৎপরতা শুরু হলে তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে জঙ্গী কর্মকা-ের প্রমাণ পাওয়ার পর এ ধরনের সংগঠনকেও ২০০৫ সালে নিষিদ্ধ করা হয়। প্রশ্ন উঠেছে, এসব সংগঠনের জঙ্গীদের গ্রেফতারের পর তৎকালীন তদন্তকারী পুলিশ কর্মকর্তাদের দুর্বল অভিজ্ঞতার কারণে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করতে পারেনি। ফলে দুর্বল রিপোর্ট দিয়ে গ্রেফতারদের আদালতে সোপর্দ করার মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে পুলিশের দায়িত্বশীল ভূমিকা। থানা পুলিশ বা তদন্ত কর্মকর্তা এসব সদস্যের স্ব স্ব ঠিকানায় এবং সঙ্গীয়দের খোঁজখবর নিলে অবশ্যই তদন্তের গভীরতা প্রকাশ পেত বলে মনে করেন অপরাধ বিশেষজ্ঞরা। ফলে এ সংগঠনের সদস্যরা এখনও তৎপর রয়েছে। এদিকে হিযবুত তাহরীর বাংলাদেশ এখনও তৎপর তাদের কর্মকা-ে। অথচ সংগঠনটিকে ২০০৯ সালের ২২ অক্টোবর নিষিদ্ধ করা হয়েছিল জঙ্গী কর্মকা-ের কারণে। প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়াকে হুমকিস্বরূপ চিঠি প্রেরণ ছাড়াও আইনৃঙ্খলা বাহিনীর চৌকস কর্মকর্তাদেরও প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে হিযবুত তাহরীর সদস্যরা আতঙ্কে রেখেছিল। ঢাকার পুরানা পল্টনের ৫৫/এ হোল্ডিংয়ে থাকা এসএম সিদ্দিক ম্যানশনে এদের একটি অফিস খোলা হয়েছিল। এছাড়াও ২৭ পুরানা পল্টন লেনের পল্টন টাওয়ারের তৃতীয় তলায় ২০১/সি নম্বর কক্ষেও এ সংগঠনের আরেকটি অফিস ছিল। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে বিভিন্ন ধরনের অভিযান পরিচালিত হওয়ার পর বিলুপ্ত হয়ে যায় এসব অফিসকক্ষ। কিন্তু দেশব্যাপী ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে এদের সদস্যরা। এসব জঙ্গী সংগঠন প্রতিনিয়ত ইসলামের কথা বলে দেশের প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে সরকারের বিভিন্ন দফতরে থাকা কর্মকর্তাদের এমনকি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়ে লিফলেটের মাধ্যমে প্রচার চালিয়ে আসছে। সে সঙ্গে তাদের অবস্থানের বিষয়টি নিশ্চিত করলেও ঠিকানা নিশ্চিত করছে না। সর্বশেষ নিষিদ্ধ জঙ্গী সংগঠন হচ্ছে আনসারুল্লাহ বাংলা টিম। সংগঠনটির কোন অফিসের হদিস এখনও পায়নি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ২০১৫ সালের ২৫ মে সংগঠনটিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয় সরকারের পক্ষ থেকে। সর্বশেষ গত রবিবার গভীর রাতে চট্টগ্রামের পতেঙ্গার কাঠগড় এলাকার মুসলিমাবাদে শেরে পতেঙ্গা নামের ভবন থেকে পাঁচ জঙ্গী সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারের পর পুলিশী জিজ্ঞাসাবাদে তারা স্বীকার করেছে আনসারুল্লাহ বাংলা টিম নামে সংগঠনের কথা।
×