ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের বন্দী স্থানান্তর হচ্ছে আজ ও কাল কেরানীগঞ্জে

প্রকাশিত: ০৫:৩৮, ২৯ জুলাই ২০১৬

ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের বন্দী স্থানান্তর হচ্ছে আজ ও কাল কেরানীগঞ্জে

মশিউর রহমান খান ॥ দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর অবশেষে কেরানীগঞ্জে নবনির্মিত কারাগারে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আটক ৬ হাজারের অধিক বন্দীকে স্থানান্তর করছে কারা কর্তৃপক্ষ। শুক্র ও শনিবার দুই দিনে এসব বন্দীকে স্থানান্তর করা হবে। ভোর ৬টা থেকে শুরু করে সন্ধ্যা পর্যন্ত এসব বন্দীকে স্থানান্তরের কাজ করবে। এজন্য কারা কর্তৃপক্ষ যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। শুধু প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ বন্দীদের জন্য নির্মিত এ কারাগারটিতে কোন নারী, শিশু ও কিশোর বন্দীকে রাখা হবে না। এ জন্য আগেই এ কারাগারে আটক সকল নারী বন্দীকে কাশিমপুর কেন্দ্রীয় মহিলা কারাগারে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। কারা অধিদফতর থেকে আইজি প্রিজন্স ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ ইফতেখার উদ্দীন দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো এত সংখ্যক বন্দীকে একসঙ্গে স্থানান্তর কার্যক্রম অতি সতর্কতার সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করছেন। এ বিষয়ে বিভিন্ন নির্দেশনা প্রদান করছেন বলে জানা গেছে। এ স্থানান্তর কার্যক্রমের মাধ্যমে মুঘল আমলে নির্মিত ও ১৭৭৮ সালের ক্রিমিনাল ওয়ার্ডের মাধ্যমে যাত্রা শুরু করা এ ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারটি বন্দীশূন্য হচ্ছে। বন্দী স্থানান্তরের অংশ হিসেবে নিরাপত্তার স্বার্থে ইতোমধ্যেই প্রাথমিকভাবে এ কারাগারের সকল ভিআইপি, জঙ্গী, শীর্ষ সন্ত্রাসী ও যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত সকল বন্দীকে কাশিপুরসহ বিভিন্ন কারাগারে পাঠানো হয়েছে। বন্দী স্থানান্তরের জন্য কারা কর্তৃপক্ষের কয়েক দফা তারিখ দেয়ার পরও নির্মাণত্রুটির কারণে সৃষ্ট নিরাপত্তা ত্রুটি থাকায় বন্দীদের স্থানান্তর করতে রাজি হয়নি কারা প্রশাসন। এমতাবস্থায়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোজাম্মেল হক খান কারা মহাপরিদর্শকসহ নির্মিতব্য কারাগারটি নির্মাণকাজ পরিদর্শন শেষে সকল নির্মাণ ত্রুটি নির্ণয় করে প্রকল্প পরিচালককে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব আঃ হককে তা অতি সমাধান করতে নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দেন। এরপরই তোজজোড় চলে সংসারের। এর আগে গত ১০ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কারাগারটি উদ্বোধন করেন। এপ্রিল মাসেই এ কারাগারটিতে বন্দী স্থানান্তরের কথা ছিল। কারা সূত্র জানায়, বন্দী স্থনান্তরের অংশ হিসেবে বৃহস্পতিবারই ৫৬ জন কয়েদিকে নতুন কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এসব কয়েদি স্থানান্তরিত বন্দীর খাবার ব্যবস্থা সচল রাখতে রান্নার কাজ করবেন। শুক্রবার দুপুর থেকেই যেন কোন প্রকার খাবারের সঙ্কট না হয় এ জন্য রান্নার জন্য প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কয়েদিরকেই বৃহস্পতিবার পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। জানা গেছে, বন্দীর ব্যবহৃত জিনিসপত্রসহ কারা কর্তৃপক্ষের অফিসের জন্য ব্যবহারিত সকল মালামালও পাঠানো হয়েছে। কারাসূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। অপরদিকে গণপূর্ত অধিদফতরের কর্মকর্তাদের কাছ থেকে কেরানীগঞ্জের নবনির্মিত কেন্দ্রীয় কারাগারের যেসব ভবনের নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়েছে সেসব ভবনের দায়িত্ব বুঝে নিয়েছে কারা কর্তৃপক্ষ। তবে বন্দী রাখার জন্য ৩টি ভবনের নির্মাণকাজ এখনও শেষ করতে পারেনি গণপূর্ত অধিদফতর। কারাসূত্র জানায়, ঢাকা থেকে কেরানীগঞ্জের কারাগারে বন্দী আনা-নেয়ার জন্য বিশটিরও বেশি প্রিজন্স ভ্যান আনা হয়েছে। এসব ভ্যান ঢাকা ও আশপাশের জেলাগুলো থেকে আনা হয়েছে। বন্দীর নিরাপত্তার স্বার্থে নেয়া হয়েছে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা। বন্দী বহনকারী এসব ভ্যান যে রাস্তা দিয়ে চলাচল করবে সে রাস্তার প্রতিটি মোড়ে মোড়ে থাকবে প্রয়োজনীয়সংখ্যক পুলিশ, র‌্যাব ও সরকারের সকল গোয়েন্দা সদস্য। সিভিল পোশাকে গোয়েন্দারা ও কারা গোয়েন্দারা কাজ করবেন। বন্দী স্থানান্তরের জন্য ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে কারা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সংযুক্ত করা হয়েছে। এসব কর্মকর্তা-কর্মচারী বন্দী স্থানান্তর কাজে সহযোগিতা করবেন। এছাড়া রাস্তায় কোন বন্দী অসুস্থ হয়ে গেলে দ্রুত চিকিৎসার জন্য একটি মেডিক্যাল টিম কাজ করবে। বর্তমান পুরনো কারাগারের যে ওয়ার্ডে বন্দীরা থাকতেন নতুন কারাগারের একই স্থানে একই ওয়ার্ডেই বন্দীদের রাখা হবে। কারাগারের ভেতর থেকে প্রিজন্স ভ্যানে করে বন্দী নিয়ে নতুন কারাগারের ঐ ভবনের সামনে নিয়েই বন্দীদের নামানো হবে। কোন প্রকার বিশৃঙ্খলা ঠেকাতেই এই পদ্ধতি অনুসরণ করা হচ্ছে বলে কারাসূত্রে জানা গেছে। অপর একটি সূত্র জানায়, দেড় শতাধিক পুলিশের কর্মকর্তা ও স্টাফ কেরানীগঞ্জ কারাগারের নিরাপত্তায় পাহারা প্রদান করছেন। তারা সম্পূর্ণ বন্দী স্থানান্তরের সময় পর্যন্ত নিরাপত্তা প্রদানের জন্য কেরানীগঞ্জেই অবস্থান করবেন। ভারতের আলীপুর কেন্দ্রীয় কারাগারের আদলে নির্মিত হওয়া এ কারাগারটি মোট ৩৪ একর জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত। তবে কারা এলাকাটিতে মোট ১৯৪ দশমিক ৪১ একর জমি রয়েছে। এতে আরও একটি মহিলা কেন্দ্রীয় কারাগার ও একটি পুরুষ কারাগারসহ একটি কারা হাসপাতাল নির্মাণ করা হবে। নতুন এ কারাগারটিতে শুধু পুরুষ বন্দীদের রাখা হবে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার জাহাঙ্গীর কবির জনকণ্ঠকে বলেন, আমরা বন্দী স্থানান্তরের জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি ইতোমধ্যেই সম্পন্ন করেছি। শুক্র ও শনিবার দুই দিনে সকল বন্দীকে আমরা কেরানীগঞ্জের নবনির্মিত কারাগারে স্থানান্তর করব। বন্দী স্থানান্তরে সর্বোচ্চ নিরাপত্তার স্বার্থে সকল আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে কয়েক দফা বৈঠক করা হয়েছে। রাস্তায় নিরাপত্তায় থাকবে পর্যাপ্ত পরিমাণ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য। সঙ্গে আমাদের সকল শ্রেণীর কারা কর্মকর্তা, কারারক্ষী ও কর্মচারীরা কাজ করবেন। এছাড়া নিরাপত্তা সহায়তায় কারা গোয়েন্দা ইউনিটের সদস্যরা কাজ করবেন। এ কারাগারের সকল নারী শিশু ও কিশোর বন্দীকে আমরা অন্যান্য কারাগারে স্থানান্তর করেছে। এ কারাগারে শুধু পুরুষ বন্দীদের রাখা হবে। প্রস্তুতি অনুযায়ী বন্দী স্থনান্তরের কাজ সম্পন্ন করতে অতি সতর্কতা অবলম্বনের জন্য সকল প্রকারের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে।
×