ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

চেয়ারম্যান পদে তিন হাজার ৫শ’ ৬৮;###;সাধারণ সদস্য পদে ২৭ হাজারের বেশি ;###;মহিলা সদস্য প্রায় ৮ হাজার

লড়ছে ৩৯ হাজার

প্রকাশিত: ০৫:১৬, ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

লড়ছে ৩৯ হাজার

স্টাফ রিপোর্টার ॥ প্রথম দফায় নির্বাচনে ৭৩৮ ইউপিতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চেয়ারম্যান ও সদস্য পদে ৩৯ হাজার ৪৩০ প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। এর মধ্যে চেয়ারম্যান পদে তিন হাজার ৫৬৮, সাধারণ সদস্য পদে ২৭ হাজার ৯৪৭ এবং সংরক্ষিত মহিলা সদস্য পদে ৭ হাজার ৯১৫ প্রার্থী তাদের মধ্যে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। এছাড়া ২৫ ইউপিতে চেয়ারম্যান পদে একক প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন বলে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। এর মধ্যে ১৬টি রাজনৈতিক দলের প্রার্থীর সংখ্যা রয়েছে ১ হাজার ৯শ’। স্বতন্ত্র নির্বাচনের জন্য ১ হাজার ৬৬৮ প্রার্থী তাদের মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। তবে স্বতন্ত্র প্রার্থীর মধ্যে বড় দুটি রাজনৈতিক দলের অনেক বিদ্রোহী প্রার্থীও রয়েছেন, যারা দল থেকে মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এদিকে কমিশনের যুগ্ম সচিব সেমিন টুলি সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, ২৫ ইউপিতে একক প্রার্থীর মনোনয়নপত্র জমা পড়েছে। নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী কোন প্রার্থী না থাকায় এসব প্রার্থী বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হতে চলেছেন। এদের সবাই ক্ষমতসীন দল আওয়ামী লীগের। কমিশনের ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী আজ বুধবার থেকে এসব মনোনয়নপত্র বাছাই করা হবে। চলবে আগামীকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত। তবে বাছাইয়ে যাদের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হবে তাদের তিনদিনের মধ্যে আপীল করতে হবে। প্রথম দফায় নির্বাচনের জন্য গত ২২ ফেব্রুয়ারি ছিল প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার শেষদিন। কমিশন জানিয়েছে, শেষদিনে চেয়ারম্যান পদে স্বতন্ত্র ও রাজনৈতিক দলের প্রার্থী মিলে ৩ হাজার ৫৬৮ প্রার্থী তাদের মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের সব ক’টি ইউনিয়ন পরিষদে প্রার্থী রয়েছে। এর বাইরে অপর প্রতিদ্বন্দ্বী রাজনৈতিক দল বিএনপির প্রার্থী রয়েছে ৬৬৮ ইউনিয়ন পরিষদে। কমিশনের হিসাব অনুযায়ী ৭০ ইউনিয়ন পরিষদে বিএনপির কোন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দেয়নি। যদিও বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী অভিযোগ করেছেন, বিএনপির শতাধিক প্রার্থী তাদের মনোনয়নপত্র জমা দিতে পারেনি। হুমকিধমকি ও মারধর করে তাদের মনোনয়নপত্র কেড়ে নেয়া হয়েছে। তবে কমিশনের যুগ্ম সচিব জেসমিন টুলি জানিয়েছেন, ৪৫ ইউপিতে বিএনপি কোন প্রার্থী দেয়নি। ২৫ ইউপিতে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচতি হতে চলেছে। বাছাইয়ে তাদের মনোনয়নপত্র বাদ না পড়লে প্রত্যাহারের শেষদিনে এসব প্রার্থীকে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ঘোষণা করা হবে। এদিকে জাতীয় সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টির ৭৩৯ ইউপির মধ্যে প্রার্থী দিতে পেরেছে মাত্র ১৪৮টিতে। এছাড়াও প্রথম দফায় জাসদ (মশাল মার্কা) ৩০, বিকল্পধারা বাংলাদেশ ৫, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি ২৪, জাতীয় পার্টি জেপি (বাইসাইকেল) ২০, বিএনএফ ৭, জেএসডি ১, কমিউনিস্ট পার্টি ৪, তরিকত ফেডারেশন ১, জমিয়ে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ ২, ইসলামী আন্দোলন ২৪৫, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট ১, বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি ন্যাপ ২ ও জাকের পার্টির ১ চেয়ারম্যান পদে তাদের মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। এদিকে কমিশন জানিয়েছে, আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী ৫ লাখ টাকা এবং সদস্য প্রার্থী ১ লাখ টাকা নির্বাচনী ব্যয় করতে পারবেন। ইতোমধ্যে সব প্রার্থীর ব্যয়সীমা সংক্রান্ত এ নির্দেশনা রিটার্নিং কর্মকর্তাদের কাছে পাঠানো হয়েছে। নির্দেশনায় বলা হয়েছে, ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী নির্বাচনী খরচ হিসাবে সর্বোচ্চ ৫ লাখ টাকা ব্যয় করতে পারবেন। এছাড়া ব্যক্তিগত খরচ হিসাবে সর্বোচ্চ ব্যয় করতে পারবেন ৫০ হাজার টাকা। এদিকে সাধারণ ও সংরক্ষিত পদপ্রার্থীরা নির্বাচনী খরচ হিসাবে সর্বোচ্চ ১ লাখ এবং ব্যক্তি খরচ হিসাবে ১০ হাজার টাকা ব্যয় করতে পারবেন। প্রার্থীদের নির্বাচনী ব্যয় তার এজেন্ট ছাড়া অন্য কোন ব্যক্তি খরচ করতে পারবেন না, যা কোন তফসিলী ব্যাংকের নতুন একটি এ্যাকাউন্ট থেকে পরিচালিত হতে হবে। নির্বাচনের ফল সরকারী গেজেটে প্রকাশের ৩০ দিনের মধ্যে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে ব্যয়ের তথ্য দাখিল করতে হবে। প্রার্থী তার ব্যয়ের উৎস হিসেবে ইসি নির্দেশিত খাতের বাইরে যেতে পারবেন না। এক্ষেত্রে প্রার্থীর পেশা থেকে আয়, পিতা-মাতা, ছেলেমেয়ে, স্বামী-স্ত্রী আর ভাইবোনের কাছ (অন্য কোন ব্যক্তির কাছ থেকে ধার বা ঋণ নেয়া যাবে না) থেকে ধার বা ঋণ হবে ব্যয়ের উৎস। তবে কোন সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান প্রার্থীকে স্বেচ্ছায় দান করতে পারবে। রাজনৈতিক দলগুলো প্রতি ইউপিতে ৩০ হাজার টাকা করে ব্যয় করতে পারবে। চেয়ারম্যান পদে নির্বাচনী ব্যয়ের হিসাব দেয়ার বাধ্যবাধকতা থাকলেও সদস্য প্রার্থীদের ব্যয়ের কোন হিসাব ইসিতে দাখিল করতে হবে না। ইসির নির্বাচন পরিচালনা শাখার উপসচিব রকিবউদ্দিন ম-ল জানিয়েছেনÑ প্রার্থীদের নির্বাচনী ব্যয় তদারকি করতে উপজেলা পর্যায়ে ভিজিলেন্স টিম থাকবে। বিচারিক ও নির্বাহী হাকিম থাকবে। প্রার্থীর খরচ ব্যয়সীমার মধ্যে থাকছে কিনা এবং আচরণবিধি যথাযথভাবে প্রতিপালন করা হচ্ছে কিনা তা ভালভাবে দেখা হবে। তবে ইসির কর্মকর্তা বলছেন, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে জনবল সঙ্কটের কারণে প্রথম দফায় মনোনয়নপত্র জমা দেয়া প্রার্থীরা নির্বাচনী বিধিমালা ঠিকমতো মানছে কিনা তা তদারক করা ইসির পক্ষে কঠিন হয়ের পড়ছে। পাশাপাশি নির্বাচনী ব্যয় তদারকি নিয়েও বেকায়দায় রয়েছে সংস্থাটি। আচরণবিধি লঙ্ঘনের জন্য ইউপিতে সর্বোচ্চ ছয় মাসের কারাদ- ও ১০ হাজার টাকা জরিমানার বিধান রাখা রয়েছে। বিধি লঙ্ঘন করা রাজনৈতিক দলকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানার সুযোগ রয়েছে। নির্বাচনী বিধিমালা অনুযায়ী চেয়ারম্যান প্রার্থী ৫ লাখ এবং সদস্য প্রার্থী ১ লাখ টাকা করে ব্যয় করতে পারবেন। এর বাইরে চেয়ারম্যান প্রার্থী ব্যক্তিগতভাবে আরও ৫০ হাজার এবং সদস্যের ১০ হাজার টাকা খরচ করার সুযোগ রাখা হয়েছে। এসব বিষয় তদারকি করতে প্রতি উপজেলায় মাত্র দুজন করে হাকিম দিয়ে এত বড় কাজ কতটা সম্ভব, তা নিয়েও সংশয়ও প্রকাশ করেছেন তারা।
×