ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

প্রথম দফার ইউপি নির্বাচন ॥ শেষ দিনেই অধিকাংশ প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিলেন

প্রকাশিত: ০৫:১৭, ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

প্রথম দফার ইউপি নির্বাচন ॥ শেষ দিনেই অধিকাংশ প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিলেন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ প্রথম দফায় ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমার শেষ দিনেই বেশিরভাগ প্রার্থী তাদের মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। এদিনে দলীয় প্রার্থীর পাশাপাশি স্বতন্ত্র প্রার্থীরাও তাদের মনোনয়নপত্র জমা দেন। গত ১১ ফেব্রুয়ারি প্রথম দফায় তফসিল ঘোষণা করা হলেও শেষ দিনেই অধিকাংশ প্রার্থী রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে ভিড় জমান। তবে অনেক জায়গায় বিরোধী রাজনৈতিক দলের প্রার্থীরা তাদের মনোনয়নপত্র জমাদানে প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে বাধার অভিযোগ করেছেন। ইসির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে এসব বিষয়ে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ দেয়া হলেই কেবল তা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এর বাইরে ঢালাও অভিযোগ দেয়া হলে তা খতিয়ে দেখা সম্ভব নয় বলে জানান ইসি সচিব মোঃ সিরাজুল ইসলাম। প্রথম দফায় ৭৩৯ ইউপিতে নির্বাচনের জন্য ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে একজন করে প্রার্থীরা বাছাই করে দলের পক্ষ থেকে প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দেয়া হয়। শেষ দিনে আওয়ামী লীগের অধিকাংশ প্রার্থীরা তাদের মনোনয়নপত্র জমা দেন। অপর দিকে বিএনপি সুত্রে জানা গেছে, ৭৩৯ ইউপির মধ্যে তারা দলের প্রার্থী মনোনয়ন দিয়েছেন ৭১৮টিতে। বাকি ২১ ইউপিতে জোটের প্রার্থীদের জন্য ছেড়ে দেয়া হয়েছে। সম্প্রতি ২০ দলীয় জোটের মহাসচিব পর্যায়ে এক বৈঠকে ইউপি নির্বাচন জোটগতভাবে করা সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সে অনুযায়ী জোটের অন্য শরিকদের প্রথম দফায় এসব ইউপিতে জোটের জন্য ছেড়ে দেয়া হয়েছে। গত রবিবারের মধ্যে বাকি ইউপিতে বিএনপির প্রার্থী চূড়ান্ত করে প্রত্যয়নপত্র দেয়ার কাজ সম্পন্ন করে। প্রার্থীরা সোমবারের মধ্যেই তাদের মনোনয়নপত্র রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে দাখিল করেছেন। এছাড়া ইসি জানিয়েছে ২১টি রাজনৈতিক দল এ নির্বাচনে অংশ নিতে প্রার্থী মনোনয়নের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। এসব প্রার্থীরা দলের নিবন্ধিত প্রতীক নিয়ে নির্বাচনী প্রচার চালাবেন। তবে বিএনপি জোটগতভাবে নির্বাচনে সিদ্ধান্ত নিলেও ইসি জানিয়েছে জোটের শরিকরা অন্য দলের প্রতীক ব্যবহার করতে পারবেন না। ইসির নিবন্ধিত হলে অবশ্যই সে দলকে তাদের দলীয় প্রতীকে নির্বাচন করতে হবে। তারা জানায় ইউপি জোট নির্বাচনে কোন বাধা দেবে না ইসি। তবে জোটের শরিকরা অন্য দলের প্রতীক ব্যবহার করতে পারবে না। সোমবার ছিল প্রথম দফায় ইউপি নির্বাচনে প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন। এদিন চেয়ারম্যান, সদস্য সংরক্ষিত আসনের সদস্যরা বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে স্ব স্ব মনোনয়নপত্র দাখিল করেন। ইসির আইন মেনে মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার সময় কোন মিছিল বা শোডাউন করতে দেখা যায়নি। আগে ইসির পক্ষ থেকে সম্ভাব্য প্রার্থীদের জানিয়ে দেয়া হয় মনোনয়নপত্র জমা বা উত্তোলনের সময় কোন প্রকার মিছিল বা শোডাউন করা যাবে না। এছাড়া ৫ জনের বেশি কর্মী বা সমর্থক নিয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে মনোনয়নপত্র দাখিলের জন্য যাওয়া যাবে না। এদিকে দলীয় প্রার্থীরা তাদের মনোনয়নপত্র জমাদানের পর বিজয় বিষয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তারা বলেন, ভোট সুষ্ঠু হলে অবশ্য জিতব। তবে জানা গেছে বিএনপি বা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে একক প্রার্থী নির্ধারণ করে চিঠি দিলে দুই দলের একাধিক বিদ্রোহী প্রার্থী শেষ দিনে তাদের মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছে। যদি আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে আগের হুঁশিয়ারি করা হয়েছে দলের আদেশ অমান্য করে কেই ইউপি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। অপরদিকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য হান্নান শাহ সোমবার বলেন, বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থীর শঙ্কা নেই। তিনি বলেন, আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন দেয়া নিয়ে নেতাকর্মীদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিতে পারে। সে অসন্তোষকে কেন্দ্র করে বিদ্রোহী প্রার্থীর সংখ্যাও বাড়তে পারে। মনোনয়ন না পেলে অনেকে অসন্তুষ্ট হবেন এটা অস্বাভাবিক নয়। এতে বিএনপি দল হিসেবে শঙ্কিত নয়। এদিকে মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার শেষ দিন সোমবার সাংবাদিকদের কাছে এক প্রতিক্রিয়ায় ইসি সচিব মোঃ সিরাজুল ইসলাম বলেন, আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমায় বাধা দেয়ার বিষয়ে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ না পেলে তা খতিয়ে দেখা সম্ভব নয়। ঢালাওভাবে অভিযোগ দিলে ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব হবে না। এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ দিতে হবে। কখন, কে, কোথায় মনোনয়ন জমা দেয়া বাধার সৃষ্টি করছে তা জানাতে হবে। তখন ইসির পক্ষ থেকে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ নির্বাচনে রাজনৈতিক দলগুলোর জোটগত নির্বাচনের বিষয়ে তিনি বলেন, দলীয় নির্বাচনে জোটগতভাবে প্রার্থী দিলেও এক দলের প্রতীক অন্য দলের প্রার্থীর ব্যবহারের সুযোগ নেই। স্থানীয় নির্বাচনে দলগুলোর মধ্যে সমঝোতার বিষয় থাকতে পারে। জোটগতভাবে কাজ করতে পারে। এ নিয়ে ইসির করার কিছু নেই। জোটে বাধা নেই। তবে দলীয় প্রার্থীই দলীয় প্রতীক পাবেন উল্লেখ করেন। বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীদের ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে বিএনপির এমন দাবির বিষয়ে বলেন, এটি আইনশৃঙ্খলার বিষয়। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ সংশ্লিষ্ট এলাকার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জানালে তারা বিষয়টি দেখবে। নির্বাচনে ইসির কাছে সবাই সমান সুযোগ পাবে। এ নিয়ে তদারকি করার জন্য আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা ও জেলা নির্বাচন কর্মকর্তারা কাজ করছেন। তিনি বলেন, আমাদের কাছে দলীয় ও স্বতন্ত্র প্রার্থী সবাই সমান। সবার এক পরিচয় তারা প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী। এক্ষেত্রে সবার প্রতি সমান আচরণ করা হবে। তিনি বলেন, যেহেতু ইউপি অনেক বড় নির্বাচন, তাই সব জায়গায় আমাদের কর্মকর্তা নিয়োগ দেয়া সম্ভব হয়নি। তবে সরকারের প্রশাসনের জনবল নিয়োগ করা হয়েছে। এতে সমস্যা হবে না। সরকারী কর্মকর্তাদের মাধ্যমে আগেও সুচারুরূপে নির্বাচন সম্পাদন করা হয়েছে। এবারও হবে। এক্ষেত্রে কেন্দ্র থেকে নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করা হবে। এছাড়া আঞ্চলিক ও জেলা নির্বাচন কর্মকর্তারাও ভোটগ্রহণে দায়িত্বরতদের পর্যবেক্ষণ করবে। উল্লেখ্য, প্রথম দফায় প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র আগামীকাল বুধ ও বৃহস্পতিবার রিটার্নিং কর্তারা বাছাই সম্পন্ন করবেন। এরপরে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের জন্য ২ মার্চ দিন ধার্য করা হয়েছে। ৩ মার্চ থেকে প্রধম দফার প্রার্থীরা নির্বাচনী প্রচারে নামবেন। তবে ইসি জানিয়েছে যাদের প্রার্থিতা বাছাইয়ে বাদ যাবে তারা তিনদিনের মধ্যে আপীল করতে পারবেন। এজন্য কমিশনের পক্ষ থেকে আপীল বোর্ড গঠন করা হয়েছে।
×