স্টাফ রিপোর্টার ॥ আজ থেকেই কার্যকর হচ্ছে রেলওয়ের সকল শ্রেণীর বর্ধিত যাতায়াত ভাড়া। রুটভেদে যাত্রী পরিবহন ভাড়া বাড়ানো হয়েছে ৭-৯ শতাংশ। এছাড়া কনটেনার পরিবহন ভাড়াও একই হারে বাড়ছে। পাশাপাশি ট্রেনে ভ্রমণের ন্যূনতম ভাড়াও বাড়ানো হয়েছে। এখন থেকে প্রতিবছর শুরুর দিকে ট্রেনের ভাড়া বাড়ানো হবে। বর্ধিত ভাড়ায় টিকেট গত ৫ দিন যাবত বিক্রি শুরু করেছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। যাত্রীদের সুবিধার্থে বিভিন্ন স্টেশনে নতুন ভাড়ার তালিকাও টানিয়ে দেয়া হয়েছে।
রেলওয়ের তথ্যমতে, ২০ বছর পর ২০১২ সালের অক্টোবরে বাড়ানো হয় ট্রেনের ভাড়া। আর লোকসান কমানোর জন্য প্রতিবছর ভাড়া বাড়ানোর শর্ত দেয় এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। ঋণের শর্তের কারণে এখন থেকে প্রতিবছর শুরুর দিকে ট্রেনের ভাড়া বাড়াতে ট্যারিফ রিফর্ম পলিসি প্রণয়ন করা হয়েছে, যাতে গত ৪ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী অনুমোদন দিয়েছেন। এরপর গত ৭ ফেব্রুয়ারি ভাড়া বৃদ্ধি-সংক্রান্ত সরকারী আদেশ (জিও) জারি করে রেলপথ মন্ত্রণালয়। এক্ষেত্রে আগের অর্থবছরের তুলনায় শেষ হওয়া অর্থবছরে যে পরিমাণ ব্যয় বাড়বে, সে অনুপাতে ভাড়াও বাড়ানো হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, নতুন হার অনুযায়ী, ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে শোভন শ্রেণীর ভাড়া ২৬৫ থেকে বেড়ে হবে ২৮৫ টাকা, শোভন চেয়ার ৩২০ থেকে ৩৪৫, এসি চেয়ার ৬১০ থেকে ৬৫৬, এসি সিট ৭৩১ থেকে ৭৮৮ ও এসি বার্থ ১ হাজার ৯৩ থেকে ১ হাজার ১৮৯ টাকা হবে। ঢাকা-খুলনা রুটে শোভন শ্রেণীর ভাড়া ৩৯০ থেকে বেড়ে হবে ৪২০ টাকা, শোভন চেয়ার ৪৬৫ থেকে ৫০৫, এসি চেয়ার ৮৯১ থেকে ৯৬১, এসি সিট ১ হাজার ৭০ থেকে ১ হাজার ১৫৬ ও এসি বার্থ ১ হাজার ৫৯৯ থেকে বেড়ে হবে ১ হাজার ৭৩১ টাকা। ঢাকা-সিলেট রুটে শোভন শ্রেণীর ভাড়া হবে ২৬৫ টাকা, শোভন চেয়ার ৩২০, এসি চেয়ার ৬১০, এসি সিট ৭৩৬ ও এসি বার্থ ১ হাজার ৯৯ টাকা। ঢাকা-রাজশাহী রুটে উল্লিখিত শ্রেণীগুলোর ভাড়া হবে যথাক্রমে ২৮৫, ৩৪০, ৬৫৬, ৭৮২ ও ১ হাজার ৬৮ টাকা। অর্থাৎ ভাড়া বাড়ছে সাড়ে ৭ থেকে ৯ শতাংশ। অন্যান্য রুটেও প্রায় একই হারে ভাড়া বাড়ছে।
এদিকে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা আইসিডি পর্যন্ত ওজন ও দৈর্ঘ্যভেদে আগে বিভিন্ন ধরনের কনটেনার পরিবহন ভাড়া ছিল ৯ হাজার থেকে ২১ হাজার টাকা। এখন তা বেড়ে হচ্ছে ৯ হাজার ৭০০ থেকে ২২ হাজার ৬০০ টাকা। ঢাকা থেকে চট্টগ্রামের আইসিডি পর্যন্ত ফিরতি পথের কনটেনার পরিবহন ভাড়াও বাড়ানো হয়েছে। এছাড়া ট্রেনের প্রতিটি শ্রেণীতে ন্যূনতম ভাড়া ৫-১০ টাকা হারে বাড়ানো হচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক মোঃ আমজাদ হোসেন জনকণ্ঠকে বলেন, বর্ধিত ভাড়া শনিবার থেকেই কার্যকর করা হচ্ছে। বিভিন্ন রুটে গড়ে ৭ দশমিক ২৩ শতাংশ ভাড়া বাড়ানো হচ্ছে। তবে দূরত্ব ও শ্রেণীভেদে ভাড়ার হারে কিছুটা পার্থক্য রয়েছে। সাধারণ আসনের ভাড়া তুলনামূলক কম ও এসির ভাড়া বেশি হারে বাড়ছে। পাশাপাশি পণ্য ও কনটেনার পরিবহন ভাড়াও একই হারে বাড়ছে। তবে ট্রেনের ভাড়া বাসের চেয়ে অনেক কম থাকবে। আমরা বর্ধিত হারে গত কয়েকদিন যাবত টিকেট বিক্রিও করছি। রেলওয়ের উন্নতিকল্পে ও যাত্রীকল্যাণে এ ভাড়া বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। আশা করি এর মাধ্যমে অর্জিত আয় দিয়ে যাত্রীদের বর্তমানের তুলনায় আরও বেশি সেবা প্রদান করা সম্ভব হবে।
ভাড়া বৃদ্ধি অযৌক্তিক ॥ এদিকে রেলভাড়া বৃদ্ধি অযৌক্তিক বলছে ৮৫ শতাংশ যাত্রী। প্রতিদিন কালোবাজারে চলে যাচ্ছে ৭০ শতাংশ টিকেট। যাত্রী সেবার মানে অসন্তুষ্ট ৭২ শতাংশ যাত্রী। যাত্রীকল্যাণ সমিতির পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে আসে। শুক্রবার সংবাদমাধ্যমে সংগঠনের পক্ষ থেকে পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদন পাঠানো হয়।
পর্যবেক্ষণকালে দেখা যায়, রেলের ৭০ শতাংশ যাত্রী নিয়মিত কালোবাজারির কাছ থেকে টিকেট কিনে ভ্রমণ করতে বাধ্য হন। ২৭ শতাংশ যাত্রী কাউন্টার থেকে নিয়মিত টিকেট পেয়ে থাকেন। ৩ শতাংশ যাত্রী উর্ধতন রেল কর্মকর্তা-কর্মচারী, রেল পুলিশ, আমলা, এমপি-মন্ত্রীর তদবিরের মাধ্যমে টিকেট পেয়ে থাকেন। রেলের বর্তমানে যে পদ্ধতিতে টিকেট ইস্যু হয়ে থাকে তা অনেক জটিল ও কঠিন প্রক্রিয়া বলে মনে করেন ৮৮ শতাংশ যাত্রী। তবে ১২ শতাংশ যাত্রী বর্তমানে প্রচলিত টিকেট ইস্যু পদ্ধতি সঠিক বলে মনে করেন। ৯৪ শতাংশ যাত্রী মনে করেন রেলের বর্তমান টিকেট ইস্যু প্রক্রিয়া সংস্কার করা প্রয়োজন। তারা এ ক্ষেত্রে যাত্রীর যেকোন ধরনের পরিচিতি টিকেটে সংযুক্ত করা প্রয়োজন বলে মনে করে না। যাত্রীর নামে টিকেট ইস্যু করা গেলে কালোবাজারির সিন্ডিকেট ভেঙ্গে দেয়া সম্ভব বলে যাত্রী সাধারণের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়।
এছাড়াও যাত্রীসেবা প্রদানে জড়িত বুকিং সহকারী, অনুসন্ধান কর্মকর্তা, স্টেশন মাস্টার, স্টেশন ম্যানেজার, ট্রেনের কর্তব্যরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আচার-আচরণে সন্তুষ্ট নন ৬৫ শতাংশ যাত্রী। ৫ শতাংশ যাত্রী মোটামুটি সন্তুষ্ট, তবে ৩০ শতাংশ যাত্রী এসব কর্মকর্তার আচার আচরণের সন্তুষ্ট বলে জরিপে উঠে এসেছে। জরিপকালে ট্রেনে ছারপোকা, তেলাপোকা, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, টিকেটবিহীন যাত্রীতোলা, ভাঙ্গা আসন, সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা বাড়ানোসহ নানা বিষয়ে অভিযোগ করেন যাত্রীরা।