স্টাফ রিপোর্টার ॥ বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম জিয়ার মামলায় হাজিরা দেয়ার ঘটনায় জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মিজানুর রহমান বলেছেন, রাজধানীর বকশীবাজারের চিত্র কোন গণতন্ত্র নয়। হাজার হাজার মানুষ নিয়ে আদালতে যাওয়া আদালতের প্রতি সম্মান দেখানো নয়। এভাবে দেশে গণতন্ত্র রক্ষা করা সম্ভবও নয়। মানুষের জীবন বিপন্ন করে কখনও গণতন্ত্র রক্ষা হয় না। বৃহস্পতিবার রাজধানীর মহাখালীর রাওয়া ক্লাবে বেনিনে শহীদ সেনা কর্মকর্তাদের ১১তম মৃত্যুবার্ষিকী ও বিশ্বশান্তি সেনাদিবস উপলক্ষে আয়োজিত ‘বিশ্ব শান্তি রক্ষায় বাংলাদেশের অবদান’Ñ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. মিজানুর রহমান বলেন, মানুষের জীবন বিপন্ন করে কখনও গণতন্ত্র রক্ষা করা যায় না। রাজনৈতিক সমস্যা রাজনৈতিকভাবেই সমাধান করতে হবে। এর জন্য দেশের স্বার্থ বিপন্ন করা ষড়যন্ত্রের নীলনক্সা ছাড়া কিছুই নয়। দেশে মানবাধিকারের নামে অনেক ‘ভুয়া সংগঠন’ আছে উল্লেখ করে মিজানুর রহমান বলেন, দেশে কোন কোন মানবাধিকার সংগঠন রয়েছে যারা বিদেশী স্বার্থ রক্ষায় ব্যস্ত। বাংলাদেশ যখন ভাল কিছু করে এরা তার নেতিবাচক প্রচারণায় লিপ্ত হয়। এশিয়া সেন্টার ফর হিউম্যান রাইটস এমনই একটি সংগঠন।
তিনি বলেন, শান্তি মিশনে বাংলাদেশী সেনা সদস্যরা দেশের জন্য যে সম্মান বয়ে এনেছেন। তা খাটো করে দেখার কোন সুযোগ নেই। অথচ দেশের আন্তর্জাতিক মর্যাদাকে খাটো করার লক্ষ্যে সঙ্কীর্ণ মানসিকতার ও বিদেশীদের স্বার্থ রক্ষায় বাংলাদেশের কিছু ব্যক্তি জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা বিভাগের প্রধানের কাছে বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীদের বর্জন করার আরজি করেছে। এটি চরম লজ্জার বিষয়। এ ধরনের কার্যক্রম দেশবিরোধী ষড়যন্ত্রের নীলনক্সা ছাড়া আর কিছুই নয়। তবে তাদের সে হীন চক্রান্ত সফল হয়নি।
স্বাধীনতা যুদ্ধের শহীদদের স্মরণে একটি দিবস নির্ধারণের দাবি জানিয়ে মিজানুর রহমান আরও বলেন, ৩০ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে দেশ স্বাধীন হয়েছে। কিন্তু স্বাধীনতার ৪৩ বছরেও তাদের স্মরণ করার জন্য একটি দিন ধার্য করা হয়নি। এটি আমাদের চরম ব্যর্থতা।
ইউএনপিএফের মহাসচিব মেজর (অব) আমীন আহমেদ আফসারীর সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন মেজর জেনারেল (অব) আব্দুর রশিদ, পিএসসি।
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন, রাওয়া চেয়ারম্যান মেজর (অব) এম তামিন হাসান, সিনিয়র সাংবাদিক নাইমুল ইসলাম খান, মীর মোঃ মোতাহের হাসান, মাসুদ এ খান, কলামিস্ট ইকতেদার আহমেদ প্রমুখ।
মূল প্রবন্ধে মেজর জেনারেল (অব) আব্দুর রশিদ বলেন, তৈরি পোশাক শিল্প, জনশক্তি রফতানি ও বিশ্ব শান্তিরক্ষা বিষয়গুলো বাংলাদেশের অর্থনৈতিক স্নায়ুকেন্দ্র। এ বিষয়গুলোর ওপর বিদেশীদের প্রভাবিত করে দেশের অগ্রগতিকে ব্যাহত করার অপচেষ্টা বিশেষভাবে লক্ষ্য করা যাচ্ছে। দেশের অর্থনৈতিক কাঠামো ধ্বংস করার জন্য আমাদের খুঁটিনাটির নেতিবাচক দিক বিদেশীর কাছে ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে তুলে ধরা হচ্ছে। এভাবে দেশকে হেয় করে জনগণের কল্যাণ করা হচ্ছে বলে ভাবার কোন অবকাশ নেই বলেও মন্তব্য তাঁর।
মেজর জেনারেল (অব) আব্দুর রশিদ বলেন, সমন্বিতভাবে বিদেশীদের পৃষ্ঠপোষকতায় জনগণের ক্ষতি হয় এসব কাজে দেশী কাজীদের জনগণের বন্ধু ভাবা যায় না। জনশক্তি ও পোশাক শিল্পের ভাবমূর্তি নষ্ট করে অর্থনীতি পঙ্গু করার অপচেষ্টা আমরা ইতোপূর্বেও দেখেছি। এবার দেখছি শান্তিরক্ষী নিয়ে নতুন খেলা। দেশী-বিদেশী ব্যক্তিদের সামরিক হস্তক্ষেপের মাধ্যমে দেশের ক্ষমতার রাজনীতিকে প্রভাবিত করার কৌশল বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীর পরিপক্বতার কারণে কাজে লাগানো যাচ্ছে নাÑ উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, রাজনৈতিক সমস্যার রাজনৈতিক সমাধান খুঁজতে হবে। সামরিক বাহিনীকে ব্যবহার করে নয়। এর সমাধান রাজনীতিই দিতে পারে।
মেজর জেনারেল (অব) আব্দুর রশিদ বলেন, গণতন্ত্র চর্চার অনেক ত্রুটি ও সংঘাত থাকলেও চলমান ঘর্ষণের ফলে আসমান ও অসমতলগুলো মসৃণ হয়ে উন্নতমানের রাজনৈতিক সংস্কৃতির বিকাশ হবে এটাই লক্ষ্য হওয়া উচিত। তিনি বলেন, দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির মারপ্যাঁচের মধ্যে দেশের অর্জনগুলোকে ধুলোয় মিশিয়ে দেয়ার চেষ্টাকে দেশের স্বার্থের অনুকূলে মনে করার কোন অবকাশ নেই। বিদেশী সংস্থার সঙ্গে কিছু দেশী দোসরকে দেশ বাঁচানোর ছুতোয় হাত মেলাতে দেখলে অবাক হতে হয়।
হাজার হাজার মানুষ নিয়ে কোর্টে যাওয়া আদালতের প্রতি অসম্মান ॥ ড. মিজান
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: