ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ৩০ জুন ২০২৫, ১৬ আষাঢ় ১৪৩২

বদহজমের সমস্যা আছে যেভাবে বুঝবেন

প্রকাশিত: ১৫:৪২, ৩০ জুন ২০২৫

বদহজমের সমস্যা আছে যেভাবে বুঝবেন

আপনার কি প্রায়ই খাওয়ার পর পেট ফেঁপে যায়? মনে হয় যেন ভেতরে বাতাস আটকে আছে? কিংবা অতিরিক্ত গ্যাসের কারণে অস্বস্তি লাগে? এসব সমস্যাই পেট ফাঁপা ও বদহজমের সাধারণ লক্ষণ।

পেট ফাঁপা, সাধারণত 'ফার্টিং' নামে পরিচিত, এটা শুধু গ্যাসের সমস্যা নয়, এর সঙ্গে থাকতে পারে ঢেকুর ওঠা, পেটে ব্যথা, বমিভাব, এমনকি পাতলা পায়খানাও। গ্যাস স্বাভাবিক হজম প্রক্রিয়ার অংশ, কিন্তু যখন এটি অতিরিক্ত হয়ে যায়, তখন তা অস্বস্তিকর হয়ে ওঠে এবং দৈনন্দিন জীবনে ব্যাঘাত ঘটাতে পারে।

কেন এমন হয়? সাধারণত খাবারের ধরন, খাওয়ার অভ্যাস, ও হজমজনিত সমস্যাগুলোর কারণে পেটে গ্যাসের পরিমাণ বেড়ে যায়। কিছু ক্ষেত্রে এটি অন্ত্রের সমস্যা বা অন্য কোনো শারীরিক অবস্থার ইঙ্গিতও দিতে পারে।

পেট ফাঁপা এবং বদহজম শুধু একটি সাধারণ সমস্যা হলেও এটি অনেক ক্ষেত্রেই অন্ত্রের খারাপ স্বাস্থ্যের ইংগিত দেয়। এটি যদি মাঝে মাঝে হয়, তাহলে তেমন উদ্বেগের কারণ নেই। তবে যদি এটি নিয়মিত হয়, তাহলে এর কারণ খুঁজে বের করা জরুরি। 

১. অন্ত্রের কার্যকারিতা ও হজম প্রক্রিয়ার জটিলতা

আমাদের হজম প্রক্রিয়া একটি ধারাবাহিক ব্যবস্থা, যেখানে খাদ্য পাকস্থলী ও অন্ত্রের মধ্য দিয়ে ধাপে ধাপে ভেঙে যায়। কিন্তু যখন এই প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়, তখন গ্যাসের সমস্যা হয়।

খাদ্য পরিপাকের গতি স্বাভাবিকের থেকে কমে গেলে

হজম ধীর হয়ে গেলে অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়া খাবার ফারমেন্ট করে বেশি গ্যাস তৈরি করে।

অতিরিক্ত গ্যাস উৎপাদনকারী ব্যাকটেরিয়ার কারনে

অন্ত্রে কিছু ব্যাকটেরিয়া স্বাভাবিকভাবে গ্যাস উৎপাদন করে, তবে অস্বাভাবিক ব্যাকটেরিয়া বৃদ্ধির কারণে এই সমস্যা বাড়তে পারে।

অন্ত্রের সংকোচনজনিত সমস্যার জন্য

অন্ত্র যদি সঠিক গতিতে না সংকুচিত হয় (যেমন: ইরিটেবল বাওয়েল সিন্ড্রোম বা IBS থাকলে), তবে গ্যাস আটকে যেতে পারে।

২. খাবারের ধরন ও খাদ্য সংবেদনশীলতা

খাবারের ধরন পেট ফাঁপার অন্যতম কারণ। কিছু খাবার হজমের সময় বেশি গ্যাস তৈরি করে, আবার কিছু খাবার হজম হতে সময় নেয়, যা গ্যাসের সমস্যা বাড়াতে পারে।

ফাইবার বেশি থাকা খাবার খাওয়া

ডাল, ব্রকলি, বাঁধাকপি, রাজমা ইত্যাদির মতো খাবারে থাকা ফাইবার হজমের সময় বেশি গ্যাস তৈরি করতে পারে।

দুগ্ধজাত খাবার যেমন ল্যাক্টোজ ইনটলারেন্স থাকলে দুধ, পনির বা দই খেলে পেটে ফাঁপার সমস্যা হয়।

চিনি ও কৃত্রিম মিষ্টি

প্রসেসড ফুডে থাকা ফ্রুক্টোজ বা সোর্সবিটল জাতীয় উপাদান হজমে সমস্যা তৈরি করতে পারে।

৩.খাওয়ার পদ্ধতি ও দৈনন্দিন অভ্যাস

আমাদের খাবার খাওয়ার ধরন বদহজমের অন্যতম কারণ হতে পারে। এই সমস্যার প্রধান কারন ভারসাম্যহীন খাদ্য ব্যবস্থা। 

অ্যারোফ্যাগিয়া বা খাওয়ার সময় বাতাস গিলে ফেলা

তাড়াহুড়া করে খেলে বা খাওয়ার সময় কথা বললে অতিরিক্ত বাতাস ঢুকে গ্যাস তৈরি হয়।

স্ট্র দিয়ে পানীয় পান করা

এতে অতিরিক্ত বাতাস ঢোকে, যা পরে পেট ফাঁপার কারণ হতে পারে।

অতিরিক্ত কফি বা চা পান

ক্যাফেইন অন্ত্রের গতি বাড়িয়ে দেয় এবং গ্যাসের সমস্যা তৈরি করতে পারে।

৪. মানসিক চাপ ও অন্ত্রের সংযোগ

আমাদের হজম প্রক্রিয়া শুধু খাবারের ওপর নির্ভর করে না, বরং মস্তিষ্ক ও অন্ত্রের সংযোগও বড় ভূমিকা রাখে।

মানসিক চাপ ও অ্যাংজাইটি:

উদ্বেগ বা দুশ্চিন্তা থাকলে অন্ত্রের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হয়, যা গ্যাস ও বদহজমের কারণ হতে পারে।

অনিদ্রা বা বিশ্রামের অভাব:

পর্যাপ্ত ঘুম না পেলে হজমের সমস্যা দেখা দেয়।

পেট ফাঁপা ও বদহজম কমানোর দীর্ঘমেয়াদি সমাধান

সাধারণভাবে, এই সমস্যাগুলো সাময়িকভাবে ওষুধ বা অ্যান্টাসিড দিয়ে কমানো গেলেও, গ্যাস্ট্রোলজি বিশেষজ্ঞদের নিচের উল্লেখিত পরামর্শ দিয়ে থাকেন:

১. খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন: কীভাবে খাবেন ও কী খাবেন নিয়ন্ত্রন করুন

পরিমাণের ভারসাম্য রক্ষা করুন – বেশি খাওয়ার পরিবর্তে অল্প পরিমাণে বারবার খান, এতে হজম সহজ হয়।

 ধীরে খান ও চিবিয়ে খান – এটি পরিপাক প্রক্রিয়াকে সহায়তা করে ও অন্ত্রে বাতাস ঢোকা কমায়।

 গ্যাস উৎপাদক খাবার চিনতে শিখুন – যেসব খাবার আপনাকে বেশি গ্যাস দেয়, সেগুলো চিহ্নিত করুন এবং প্রয়োজন অনুযায়ী কমান।

২. অন্ত্রের স্বাস্থ্য ভালো রাখার জন্য কার্যকরী পদ্ধতি

প্রোবায়োটিক গ্রহণ করুন – দই, কেফির, বা প্রোবায়োটিক সাপ্লিমেন্ট অন্ত্রের ভালো ব্যাকটেরিয়া বাড়িয়ে হজমে সাহায্য করতে পারে।

 আঁশযুক্ত খাবার খান কিন্তু ধীরে ধীরে বাড়ান – হঠাৎ বেশি ফাইবার নিলে অন্ত্র হজমে সময় নেয় এবং পেট ফাঁপতে পারে।

 পানি পান করুন – পর্যাপ্ত পানি পান করলে অন্ত্রের কার্যকারিতা উন্নত হয় ও কোষ্ঠকাঠিন্য কমে।

৩. দৈনন্দিন অভ্যাস পরিবর্তন করুন

খাওয়ার পর হাঁটাহাঁটি করুন – এতে অন্ত্রের কার্যকারিতা বাড়ে ও গ্যাস আটকে থাকার প্রবণতা কমে।

শারীরিক পরিশ্রম করুন – নিয়মিত ব্যায়াম অন্ত্রের স্বাভাবিক গতি ঠিক রাখে।

 স্ট্রেস কমান – মেডিটেশন বা রিলাক্সেশন টেকনিক অন্ত্রের কার্যক্রমকে স্বাভাবিক করতে পারে।

৪. ঘরোয়া উপায় যা দ্রুত আরাম দিতে পারে

জিরা-পানি: জিরা ফুটিয়ে পানি পান করলে গ্যাসের সমস্যা কমতে পারে।

 আদা-চা: আদা গ্যাস কমায় ও হজমে সহায়ক।

 লেবু-পানি: হালকা গরম পানিতে লেবু মিশিয়ে পান করলে অ্যাসিডিটি কমে ও হজম ভালো হয়।

 

সানজানা

×