ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

পিউ তুষাণ

চলো যাই ব্রোঞ্জযুগের গ্রামে

প্রকাশিত: ০৬:৪৮, ৩০ জানুয়ারি ২০১৬

চলো যাই ব্রোঞ্জযুগের গ্রামে

বর্তমান সময়ে ব্রোঞ্জযুগে যাওয়ার কোন সুযোগ নেই। এই যুগের শেষ হয়েছে অনেক আগেই। তাহলে ব্রোঞ্জযুগের গ্রামে আমরা কিভাবে যেতে পারি? প্রতœতাত্ত্বিকরা বলছেন, ভিন্ন কথা। তাঁরা ব্রোঞ্জযুগের দুটি গ্রামের কিছু নিদর্শন খুঁজে পেয়েছেন। কোন সংস্কৃতিতে যে সময়ের মধ্যে ধাতুশিল্পের সবচেয়ে উন্নত উপাদান হিসেবে ব্রোঞ্জ ব্যবহৃত হয় তাকে ওই সভ্যতার ব্রোঞ্জযুগ নামে অভিহিত করা হয়। প্রায় সব ব্রোঞ্জযুগীয় সংস্কৃতি প্রাগৈতিহাসিক যুগে বিকাশ লাভ করেছে। সেই সময়ের এমনই কিছু নিদর্শন সম্প্রতি পাওয়া গেছে যুক্তরাজ্যে। প্রায় ৩ হাজার বছরের পুরনো দুটি গ্রাম আবিষ্কৃত হয়েছে দেশটির পশ্চিমাঞ্চলে। যুক্তরাজ্যে আবিষ্কৃত সবচেয়ে প্রাচীন নিদর্শন গ্রামগুলো। এখানে পাওয়া গেছে বেশকিছু ঘরবাড়ি এবং ব্রিটিশদের প্রাচীন কালে দৈনন্দিন কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন সামগ্রী। প্রতœতাত্ত্বিক এই নিদর্শনটি নিয়ে গবেষণা করছেন ব্রিটিশ প্রতœতত্ত্ব গবেষক মার্ক নাইট। এখানকার এই গবেষণা প্রকল্পের পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন নাইট। দেশটির পশ্চিমাঞ্চলের একটি জলাভূমির গভীরে হারিয়ে গিয়েছিল গ্রাম দুটি। নাইট বলেন, ‘নতুন আবিষ্কৃত বসবাসের এই ঘরবাড়িগুলো আমাদের পূর্ব-পুরুষদের জীবনযাত্রার অসাধারণ এক দৃষ্টান্ত।’ তিনি জানান, কাঠের এই বাড়িগুলো পানির ওপর লম্বা সাঁকোর নির্মাণ করে তার ওপর তৈরি করা হয়েছিল। দেখে মনে হয়, কয়েকটি পরিবার এখানে বাস করত। এখানকার একটি ঘরের বর্ণনা দিতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘ঘরটির ভেতরে প্রবেশ করা অত্যন্ত কঠিন। এটাকে দেখতে কোন প্রতœতাত্ত্বিক নিদর্শনের মতোও মনে হয় না। মনে হয় আগুনে পুড়ে যাওয়া কারও একটি ঘর। আমরা ঘরটির ভেতর ঢোকার এবং এর ভেতরে থাকা জিনিসগুলো উদ্ধারের চেষ্টা করছিলাম।’ আর এ কারণেই প্রতœতাত্ত্বিকরা এখানে খুঁজে পেয়েছেন ছোট ছোট কাপ, বাটি, রান্না করার পাত্র, কাঠের চামচ এবং দৈনন্দিন কাজে ব্যবহৃত আরও বিভিন্ন ধরনের পাত্র। এমনকি এখানে খুঁজে পাওয়া গেছে খাবারের জন্য তৈরি করা কয়েক ধরনের ভর্তা। এতে বোঝা যায়, হঠাৎ করেই গ্রামটিতে আগুন লেগে গিয়েছিল। আর এ কারণেই খাবার-দাবার ফেলেই গ্রাম ছেড়ে চলে গিয়েছিল এখানকার বাসিন্দারা। ১৯৯৯ সালে প্রথম এখানকার স্থাপনাগুলো সম্পর্কে জানা যায়। মার্টিন রিডিং নামের স্থানীয় এক বাসিন্দা এখানে কাঠের একটি বস্তুর সন্ধান পান। এরপর ১৫ বছর ধরে চলে গবেষণা। অবশেষে গত বছরের সেপ্টেম্বরে শুরু হয় খনন কাজ। চলতি বছরের মার্চ মাস পর্যন্ত চলবে এই কাজ। আর এসব কাজ শেষ হলে যুক্তরাজ্যের পিটারবার্গ জাদুঘরে রাখা হবে এখান থেকে প্রাপ্ত ঐতিহাসিক নিদর্শনগুলো। ব্রিটিশ সরকারের ইতিহাস বিষয়ক সংস্থা ‘হিস্টরিক ইংল্যান্ড’ এর নির্বাহী প্রধান ডানকান উইলসন জানান, এগুলো থেকে ব্রিটিশদের পূর্ব-পুরুষরা কোন ধরনের খাবার খেত এবং খাবার রান্না ও পরিবেশনের ক্ষেত্রে কোন ধরনের পাত্র ব্যবহার করত তা জানা যাচ্ছে। এমনকি তাদের ঘরের কক্ষগুলো কেমন হতো- সে সম্পর্কেও ধারণা পাওয়া যাচ্ছে। ব্রোঞ্জযুগের একেবারে শেষের দিকে নির্মাণ করা হয়েছিল এসব বাড়িঘর। হঠাৎ কোন অগ্নিকাণ্ডের কারণে বাড়িগুলো ধ্বংস হয়ে থাকতে পারে। ধ্বংস হওয়ার পর এগুলো পানির নিচে তলিয়ে যায়। তবে পানির নিচেও সুরক্ষিত থাকে এসব বাড়িঘরের সামগ্রীগুলো। এখান থেকে ধারণা পাওয়া যাচ্ছে প্রাচীন ব্রিটিশদের তাঁতশিল্প সম্পর্কেও। গাছের তন্তু থেকে ব্যতিক্রম এক ধরনের বস্ত্র তৈরি করত তারা। ধারণা করা হয়, এখানে বাস করা প্রাচীন ওই পরিবারগুলো সম্পদশালী ছিল। গ্রাম দুটিতে প্রাপ্ত সবকিছু একসঙ্গে করলে ব্রিটিশদের প্রাগৈতিহাসিক যুগের জীবন সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। এর আগে এ ধরনের কোন নিদর্শন যুক্তরাজ্যে পাওয়া যায়নি। নাইটের ভাষায়, ‘এটি হলো হারানো পৃথিবী খুঁজে পাওয়ার একটি জানালা।’ সূত্র : বিবিসি, ন্যাশনাল জিওগ্রাফি
×