
ছবি: সংগৃহীত
মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা চরমে। ইসরায়েলের সামরিক ঘাঁটি ও পারমাণবিক স্থাপনায় হামলার প্রতিশোধ নিতে ইরান শত শত ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে। কিছু ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েলের আকাশ প্রতিরক্ষা ভেদ করে তেলআবিবসহ বিভিন্ন শহরে আঘাত হানে। এতে বহু প্রাণহানি ও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির খবর মিলেছে।
এই যুদ্ধ পরিস্থিতিতে অনেকের মনেই প্রশ্ন: ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কীভাবে কাজ করে, এগুলো কত দ্রুত চলে, কোথায় পৌঁছাতে পারে?
ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কী?
ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হলো এমন অস্ত্র, যা সাধারণ বা পারমাণবিক বোমা বহন করতে পারে এবং নির্দিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছাতে বাঁকা পথে (curved trajectory) যায়। প্রথমে শক্তিশালী রকেট ইঞ্জিনের মাধ্যমে এটি উচ্চমাত্রায় ঊর্ধ্বগামী হয়, অনেক সময় তা বায়ুমণ্ডলের বাইরেও চলে যায়। এরপর ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে গেলে এটি মাধ্যাকর্ষণের প্রভাবে আবার মাটির দিকে দ্রুত গতিতে নেমে আসে এবং নির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করে।
কতদূর পৌঁছাতে পারে?
ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র বিভিন্ন ধরণের হয়ে থাকে। এগুলোর পাল্লা ও শক্তি ভিন্ন হয়:
ব্যাটলফিল্ড রেঞ্জ (BRBM): ২০০ কিমির নিচে
স্বল্প-পাল্লার (SRBM): ১,০০০ কিমির নিচে
মাঝারি বা ইন্টারমিডিয়েট (MRBM/IRBM): ১,০০০ – ৩,৫০০ কিমি
দীর্ঘ-পাল্লার (LRBM): ৩,৫০০ – ৫,৫০০ কিমি
ইন্টারকন্টিনেন্টাল (ICBM): ৫,৫০০ কিমির বেশি
ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র ১,৩০০ থেকে ১,৫০০ কিমি দূরের ইসরায়েল পর্যন্ত সহজেই পৌঁছাতে পারে।
কত দ্রুত চলে?
ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের গতি শব্দের থেকেও অনেক গুণ বেশি। এই গতি মাপা হয় “মাখ” (Mach) এককে।
মাখ ১ = শব্দের গতি (প্রায় ১,২২৫ কিমি/ঘণ্টা)
মাখ ৫ = হাইপারসনিক গতি (৬,১২৫ কিমি/ঘণ্টা)
ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র যদি মাখ ৫ গতিতে চলে, তবে এটি ইসরায়েলে পৌঁছাতে ১২ মিনিটের মতো সময় নেয়।
ধরা এত কঠিন কেন?
এই ক্ষেপণাস্ত্রগুলো এত দ্রুত চলে এবং এত উচ্চতায় যায় যে, প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা অনেক সময় প্রস্তুতি নিতে পারে না। আবার ফিরে আসার সময় এদের গতি আরও বেড়ে যায়, ফলে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা আরও অসহায় হয়ে পড়ে। কিছু ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে বিভ্রান্ত করতে ভুয়া সিগন্যাল বা "ডিকয়" ব্যবহার করে।
ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোনের পার্থক্য কী?
ইরান ব্যালিস্টিকের পাশাপাশি ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র এবং ড্রোন ব্যবহার করেছে।
ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র নিচু দিয়ে চলে, বিমানচালকবিহীন প্লেনের মতো। ধরা কঠিন, তবে গতি কম, তাই প্রতিরক্ষার সময় বেশি থাকে।
ইরান ও ইসরায়েলের অস্ত্রভাণ্ডার
ইরান: গত তিন দশকে তারা বহু ব্যালিস্টিক ও ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করেছে। তাদের অস্ত্রভাণ্ডারকে মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম বৃহৎ ও শক্তিশালী বলা হয়।
ইসরায়েল: যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতায় গড়ে তোলা আধুনিক ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা রয়েছে। পারমাণবিক হামলা চালানোর সক্ষমতাও আছে।
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা
আয়রন ডোম: ছোট ও মাঝারি রেঞ্জের ক্ষেপণাস্ত্র ঠেকায়।
ডেভিড’স স্লিং: ৪০–৩০০ কিমি দূরত্বে আঘাত ঠেকায়।
অ্যারো সিস্টেম: ২,৪০০ কিমি পর্যন্ত দূরের ক্ষেপণাস্ত্র ভূপাতিত করতে সক্ষম।
তবে এত আধুনিক ব্যবস্থার পরেও সব ক্ষেপণাস্ত্র থামানো সম্ভব হয়নি। ফলে তেলআবিবে বিস্ফোরণ হয়েছে এবং প্রাণহানি ঘটেছে।
মুমু ২