ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

প্রফুমো কেলেঙ্কারির নায়িকা ক্রিস্টিন কিলারের জীবনাবসান

প্রকাশিত: ০৬:১০, ৮ ডিসেম্বর ২০১৭

প্রফুমো কেলেঙ্কারির নায়িকা ক্রিস্টিন কিলারের জীবনাবসান

তার পুরো নাম ছিল ক্রিস্টিন মার্গারেট কিলার। ষাট দশকের এক সাড়া জাগানো নাম সংক্ষেপে সবাই যাকে ক্রিস্টিন কিলার নামে চিনে। তিনি গত ৫ ডিসেম্বর পরলোকগমন করেছেন। ইংল্যান্ডের ফারন বারোর এক হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়। তার বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর। দারিদ্র্যকিষ্ট পরিবারের সন্তান ততোধিক দৈন্যদশা থেকে ওঠে এসে রূপ-যৌবন দিয়ে ক্রিস্টিন লন্ডনের বাঘা বাঘা রাজনীতিকদের মাথা ঘুরিয়ে দেন। তার মায়ার জালে তৎকালীন ব্রিটিশ যুদ্ধমন্ত্রী জন প্রফুমো ধরা পড়ে যান এবং শেষ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী হ্যারল্ড ম্যাকমিলানের নেতৃত্বে গঠিত রক্ষণশীল সরকারের পতন ঘটে। যা বিশ্বের সব ক’টি গণমাধ্যমে তখন প্রফুমো কেলেঙ্কারি নামে খবরের শিরোনাম হয়েছিল। ক্রিস্টিন কিলার নামটি তখন সবার মুখে মুখে ফিরতে থাকে। তাকে মুখোমুখি না দেখেও তার সম্পর্কে অনেকের কৌতূহল বেড়ে যায়। শোনা যায় এরপর বিশ্বের অনেক নামীদামী কূটনীতিক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব তাদের নাম পরিচয় গোপন রেখে লন্ডনে গিয়ে ক্রিস্টিনের সাহচর্য উপভোগ করেছেন। এদের মধ্যে পাকিস্তানের স্বৈরশাসক আইয়ুব খানের নামও আছে বলে জানা যায়। ষাট দশকের এক পত্রিকায় সুইমিং পুলে ¯œানরত আইয়ুব খান ও ক্রিস্টিন কিলারের ছবি ছাপা হয়। সে সময় এ দেশীয় রাজনীতিতে বিষয়টি মুখরোচক খবর হিসেবে বেশ সাড়া জাগিয়েছিল। ক্রিস্টিন কিলারের মা জুলি পেইনকে তার পিতা কলিন কিলার পরিত্যাগ করার পর পরিবারটি নিতান্ত অসহায় অবস্থায় পতিত হয়। এ সময় জুলি জীবনে বাঁচার অবলম্বন হিসেবে এডওয়ার্ড হুইশকে বেছে নেন। তারা একটি পরিত্যক্ত রেলওয়ে বগিতে তাদের সংসার জীবন শুরু করেন। কিন্তু ক্রিস্টিনের দুর্ভাগ্য যে তের থেকে চৌদ্দ বছর বয়সেই তাকে সৎ পিতা ও তার বন্ধুদের হাতে যৌন নির্যাতনের শিকার হতে হয়। এই নির্যাতন থেকে বাঁচার জন্য ক্রিস্টিন তার বালিশের নিচে ছুরি রেখে ঘুমাতেন। পরে এই উপদ্রব থেকে স্থায়ীভাবে বাঁচার জন্য ক্রিস্টিন লন্ডনের সোহো ফ্যাশন শপে মডেল হিসেবে চাকরি নেন। এরপর পানশালা ও হোস্টেলের ওয়েস্ট্রেসসহ বিভিন্ন পেশা বদল করে অভিজাত সমাজে অত্যন্ত দামী কলগার্ল হিসেবে নিজের জায়গা করে নেন। যদিও ক্রিস্টিন কিন্তু এই কলগার্ল শব্দটি দারুণ অপছন্দ করতেন। তার সঙ্গে নামকরা ব্যান্ড সঙ্গীত দলের গায়ক, অভিনেতা ওয়ারেন বেটি, পিটার লফোর্ড ও জর্জ পেপার্ডের সম্পর্ক ছিল। ক্রিস্টিন কিলার তার জীবনভিত্তিক তিনটি আত্মজীবনী গ্রন্থের সহ-লেখক হিসেবে কাজ করেছেন। জীবনকাহিনী নিয়ে রচিত চলচ্চিত্র নগ্নতা দোষে দুষ্ট হয়ে প্রচারের অনুমতি পায়নি। এই ক্রিস্টিন কিলার জীবনের শেষ প্রান্তে এসে দারুণ অর্থকষ্টে নিপতিত হন। বাঁচার তাগিদে নিজের ক্লেদাক্ত জীবনের নাম পরিবর্তন করে সিএম স্লোন নাম গ্রহণ করেন। কখনও কোন এডফার্ম, কখনও কোন প্রতিষ্ঠানের রিসেপশনিস্ট আবার কখনও কোন স্কুল ক্যাফেটেরিয়াতে কাজ করেছেন। একবার তিনি বলেছিলেন তার এই জীবনকে বেঁচে থাকা বলে না -বরং বলা যায় টিকে থাকার সংগ্রাম। ওয়াশিংটন পোস্ট।
×