ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

কিউবার সঙ্গে ওবামা অনুসৃত নীতি থেকে ট্রাম্প সরে আসলে বদলে যাবে দৃশ্যপট

মার্কিন উপকূলে চীনা অনুপ্রবেশ!

প্রকাশিত: ০৪:১৫, ১ ডিসেম্বর ২০১৬

মার্কিন উপকূলে চীনা অনুপ্রবেশ!

প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার কিউবার সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনের চেষ্টা পাল্টে দেয়া হলে মার্কিন উপকূল আরেক বড় সামরিক শক্তির জন্য খুলে যাবে। তবে এটি হাভানার চিরাচরিত মিত্র রাশিয়া নয়, বরং সম্ভবত চীনই হবে। নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প চলতি সপ্তাহে ওবামার চেষ্টা পাল্টে দেয়ার হুমকি দেন। খবর ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের। কিউবায় এখন মস্কোর অর্থনৈতিক ও সামরিক ভূমিকা সামান্য মাত্রাতেই বিদ্যমান। বেজিংই ভেনিজুয়েলার পর কিউবার দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদারে পরিণত হয়েছে। ভেনিজুয়েলা এখন গভীর অর্থনৈতিক সঙ্কটে পতিত। গত কয়েক বছরে কিউবার অর্থনীতিতে মার্কিন ভূমিকা দ্রুত বৃদ্ধি পায়। কিউবান আমেরিকানরা এখন কিউবায় তাদের আত্মীয় স্বজনের কাছে প্রায় ৩৪০ কোটি ডলারের নগদ অর্থ পাঠিয়ে থাকেন। এটি দেশের মোট বার্ষিক রফতানি আয়েরও বেশি এবং ২০১০ সালে পাঠানো অর্থের তুলনায়ও অনেক। সেই বছর পাঠানো হয়েছিল ১৯২ কোটি ডলার। কিউবানরা প্রতিবছর যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত তাদের আত্মীয় স্বজনের কাছ থেকে ৩৫০ কোটি ডলার মূল্যের পণ্যসামগ্রী, যেমন জুতা, কাপড়-চোপড়, টিভি ও কম্পিউটার পেয়ে থাকেন। তবে, মার্কিন বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা থাকায় যুক্তরাষ্ট্র দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যে ক্ষুদ্র ভূমিকাই পালন করে থাকে। কিউবার আমদানি করা পণ্যের শতকরা মাত্র ১ দশমিক ৬৪ ভাগ যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা হয়ে থাকে। মায়ামিভিত্তিক হাভানা কনসাল্টিং গ্রুপের প্রধান এমলিও মোরালেস বলেন, কিউবার প্রতি মার্কিন নীতিতে পরিবর্তনের ফলে ঐসব সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলে কিউবার লোকজনের গলা টিপেই ধরা হবে। এতে বিরাট সংখ্যক অভিবাসীর আগমনের ঝুঁকি বাড়বে। ওই গ্রুপ কিউবার সঙ্গে ব্যবসার বিষয়ে পরামর্শ দিয়ে থাকে। মোরালেস বলেন, চীনসহ কোন বিশ্বশক্তিই যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের কারণে কিউবার অর্জিত আয় হারানোর ক্ষতিপূরণ করতে পারবে না। তিনি বলেন, কিউবার ১৯৫০-এর দশকের পর যে কোন সময়ের তুলনায় এখন অনেক দিক দিয়েই এর সাবেক শত্রু ও উত্তর দিকের প্রতিবেশীর ওপর বেশি নির্ভরশীল। কিন্তু চীন কিউবার অর্থনীতিতে অনুপ্রবেশ করছে। চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে চীন ও কিউবার বাণিজ্যের পরিমাণ শতকরা ১৩ ভাগ বেড়ে ১১০ কোটি ডলারে দাঁড়ায়। এর আগে ২০১৫ সালে এ বাণিজ্যের পরিমাণ শতকরা ৫৯ ভাগ বেড়ে ২২০ কোটি ডলারে দাঁড়ায়। চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ তথ্য জানায়। চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ২০১৪ সালে কিউবা সফর এবং ফিদেল ক্যাস্ট্রোর সঙ্গে সাক্ষাত করেন। চীনা প্রধানমন্ত্রী লি কেকিয়াং সেপ্টেম্বরে দু’দিনের কিউবা সফরকালে রাউল ক্যাস্ট্রোর সঙ্গে দেখা করেন। তারা অর্থ, টেলিকম, পরিবেশ রক্ষা ও উৎপাদন সামর্থ্যসহ বিভিন্ন খাতে সহযোগিতার লক্ষ্যে কয়েকটি চুক্তি সই করেন। রাষ্ট্র সমর্থিত চায়নিজ একাডেমি অব সোশ্যাল সায়েন্সেসের কিউবা বিষয়ক নেতৃস্থানীয় চীনা বিশেষজ্ঞ শু শিচেং যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের সমঝোতার ধারা পাল্টে দিতে ট্রাম্পের দেয়া হুমকি নিয়ে সন্দেহ ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ও কিউবার স্থিতিশীল সম্পর্ক বাণিজ্যের জন্য এক স্থিতিশীল পরিবেশ নিশ্চিত করে চীনা কোম্পানিগুলোর জন্য সহায়ক হবে। তিনি বলেন, কিউবা ও যুক্তরাষ্ট্র তাদের সম্পর্ক উন্নত করবে বলে আমরা আশা করি। লাতিন আমেরিকান দেশগুলোর মধ্যে কিউবাই প্রথম চীনের সঙ্গে ১৯৬০ সালে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করে। তবে সেই সম্পর্ক সব সময়েই বন্ধুত্বপূর্ণ ছিল না। এক পর্যায়ে মাও সে তুং সোভিয়েত ইউনিয়নের দিকে ঝুঁকে পড়া ফিদেল ক্যাস্ট্রোকে সংশোধনবাদের দায়ে অভিযুক্ত করেন। এটি সেই সময়ে কমিউনিস্ট মহলে গুরুতর অভিযোগই ছিল। পরে চীন কিউবায় চাল রফতানি কমিয়ে দিলে ক্যাস্ট্রো চীনকে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার সঙ্গে হাত মেলানোর দায়ে অভিযুক্ত করেন। রাশিয়া কিউবার সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্ক উন্নত করতে অধিকতর দ্বিধা পোষণ করেছে। সোভিয়েতরা কিউবাকে ভর্তুকি হিসেবে কোটি কোটি ডলার দিয়েছিল। ২০১৪ সালে রুশ প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন রাশিয়ার প্রাপ্য ৩২২ কোটি ডলারে ঋণের মধ্যে ২৯০ কোটি ডলার মওকুফ করে দেন। তা সত্ত্বেও রাশিয়া মে মাসে কিউবায় ১৪০ কোটি ডলার ব্যয় সাপেক্ষ দুটি স্থানীয় বিদ্যুত প্ল্যান্ট সম্প্রসারণের প্রকল্প গ্রহণ করে। এটি ছিল দ্বীপটিতে সোভিয়েত আমলের পর সবচেয়ে বড় বিনিয়োগ। রুশ সরকার নতুন প্ল্যান্ট ইউনিটগুলোর ব্যয়ের সমগ্র অর্থই ঋণ হিসেবে সরবরাহ করে। এগুলো অপরিশোধিত তেল দিয়ে চালানো হবে এবং ২০২২ সালে চালু হবে। রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় বিদ্যুত কোম্পানি ইন্টার আরএও’র এক ম্যানেজার বলেন, এ প্রকল্পের খুবই একটি অর্থনৈতিক গুরুত্ব নেই। কিউবান সরকারের আনুগত্য অক্ষুণœ রাখার লক্ষ্যে রাজনৈতিক কারণেই এটি করা হয়েছে। ওই কোম্পানি প্রকল্পটির দায়িত্বে রয়েছে।
×