ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

সিরিয়ার মানবিজে বেসামরিক লোকজনের মৃত্যু আমলে নিচ্ছে না যুক্তরাষ্ট্র

বিমান হামলা বন্ধ হবে না

প্রকাশিত: ০৩:৪২, ২৪ জুলাই ২০১৬

বিমান হামলা বন্ধ হবে না

বেসামরিক লোকজন হতাহত হওয়া সত্ত্বেও সিরিয়ার বিমান আক্রমণ বন্ধ করবে না যুক্তরাষ্ট্র। সরকার বিরোধীরা বিমান হামলায় সাময়িক বিরতি দেয়ার জন্য আহ্বান জানালেও যুক্তরাষ্ট্র তাতে কান দিচ্ছে না। জঙ্গী গ্রুপ ইসলামিক স্টেট (আইএস) বিরুদ্ধে লড়াইয়ে এ যাবত সবচেয়ে বেশি বেসামরিক ক্ষয়ক্ষতির খবর সিরিয়ার মানবিজ শহরের আশপাশের এলাকা থেকে পাওয়া গেছে। উত্তরাঞ্চলীয় শহরটির কাছে গত মঙ্গলবার চালানো বিমান হামলায় মানবাধিকারকর্মীদের মতে ৭৩ জন মারা গেছে, তারা বলছেন এই সংখ্যা ১২৫ এরও বেশি হতে পারে। খবর গার্ডিয়ান ও এএফপির। মানবিজ শহরের কাছে মার্কিন বিমান হামলায় বেসামরিক ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করতে হামলা স্থগিত রাখার জন্য সিরিয়ান ন্যাশনাল কোয়ালিশনের (এসএনসি) প্রধান আনাস আলআবদাহ যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন। ভয়াবহ ওই হামলার দায় হামলাকারীদেরই নিতে হবে বলে এক বিবৃতিতে তিনি দাবি করেন। বিমান আক্রমণ সম্পর্কিত ‘কার্য প্রণালী বিধি পর্যালোচনার’ দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, এরকম চলতে থাকলে কঠিন লড়াইয়ের মাধ্যমে অর্জিত এলাকাগুলো ভবিষ্যতে আবারও আইএসের হাতে চলে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। বিষয়টি স্পষ্ট করে আলআবদাহ বলেন, এখনও যদি বিমান হামলা অব্যাহত থাকে তবে তা কেবল সিরিয়াবাসীর ক্ষোভ ও হতাশাকেই বাড়াবে না বরং তাদের আইএসের মতো চরমপন্থী গ্রুপগুলোতে ভিড়ে যাওয়ার ঝুঁকিও বাড়াবে। এসএনসি প্রধানের কাছ থেকে এই আহ্বান সরাসরি নাকচ করে দিয়েছেন বাগদাদে অবস্থানরত বহুজাতিক বাহিনীর মুখপাত্র কর্নেল ক্রিস গার্ভার। শুক্রবার বাগদাদ থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে তিনি বলেন, দায়েশের (আইএসের আরবি নাম) বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান চলবে। তিনি আরও বলেন, ফালুজা বা রামাদির মতো লড়াই এটি নয়। কৌশলগত দিক থেকে মানবিজ শহরের অবস্থান অনেক গুরুত্বপূর্ণ। আইএস সেখানে বেসামরিক লোকজনকে মানব ঢাল হিসেবে ব্যবহার করছে বলেও তিনি অভিযোগ করেন। গার্ভার মনে করেন, সাধারণ লোকজনকে পুঁজি করে মতলব হাসিলের চেষ্টা করছে আইএস। শহরে বেসামরিক অবস্থানগুলো ছড়ানো ছিটানো হওয়ায় অভিযান যে বেশ জটিল হয়ে উঠেছে বলে গার্ভার স্বীকার করেছেন। বেসামরিক প্রাণহানির বিষয়ে সামরিক বাহিনী প্রাথমিক তদন্ত করেছে বলে তিনি জানান। তার কথা অনুযায়ী এটি একটি সময় সাপেক্ষ কাজ। তদন্ত পুরোপুরি শেষ হতে কয়েক মাস লেগে যেতে পারে। ঠিক কত জন বেসামরিক লোক মারা গেছে সে বিষয়ে মার্কিন সরকারের কাছে বিস্তারিত তথ্য নেই বলে গার্ভার জনিয়েছেন। তিনি মনে করেন, মঙ্গলবারের হামলায় অনেক বেসামরিক লোক মারা গেছে বলা হলেও তাদের মধ্যে অনেক আইএস সদস্য থাকতে পারে। সিরিয়ার যুক্তরাষ্ট্রের আইএসবিরোধী লড়াইয়ে মানবিজ এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। শহরটি ঘিরে এখন তীব্র লড়াই চলছে। আইএসে ক্রমেই শহরের কেন্দ্রস্থলে কোণঠাসা হয়ে পড়ছে। শহরের পশ্চিম অংশে এখন সিরিয়ান ডেমোক্র্যাটিক ফোর্সেসের (এসডিএফ) নিয়ন্ত্রণে। এসডিএফ মার্কিন মদদপুষ্ট আরব ও কুর্দিদের সমম্বয়ে গঠিত সরকারবিরোধী বাহিনী। মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী এ্যাশটন কার্টারও শহরটি কৌশলগত গুরুত্বের কথা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, আইএসের সিরিয়ার রাজধানী সিরিয়ার রাকা থেকে বহির্বিশ্বগামী একমাত্র পথটির পাশে শহরটির অবস্থান। এই পথ দিয়ে তুরস্কের মধ্য দিয়ে দিয়ে বাইরের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করা হয়। তাই এ শহরের পতন ঘটলে আইএসবিরোধী লড়াইয়ে এক বড় অগ্রগতি অর্জিত হবে। গত এক সপ্তাহে শহরটির আশপাশ ঘিরে মার্কিন বাহিনী ১২ বার বিমান হামলা চালায়।
×